খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জন। এর মধ্যে রয়েছেন খুলনার ৫০ ও যশোরের ৪৪ জন। এ অবস্থার মধ্যে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ তথ্য জানান।
ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (ইএনটি) ডা. সোহানা সেলিমকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্যরা হচ্ছেন– মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ মো. জাকারিয়া ও সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন-২) ডা. পার্থপ্রতিম দেবনাথ। পাশাপাশি হাসপাতালে ১০ শয্যার একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এ হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের এনএসওয়ান-এজি টেস্ট ফ্রি করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত এখানে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘ডেঙ্গুজ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আক্রান্তরা অধিকাংশই ঢাকায় থাকাকালীন এই রোগে আক্রান্ত হন। সময়মতো চিকিৎসা দিলে এই রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।’
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ফুলতলায় একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভর্তি ছিলেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এছাড়া খুলনার কোনও উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণ ও র্যালি করা হয়েছে।’
জাসদ খুলনা মহানগর সভাপতি খালিদ হোসেন বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) উদ্যোগে মশক নিধন বা মশা মারার ওষুধ দিতে দেখা যায় না। এখনও পর্যন্ত কেসিসির কোনও কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান ভালো না। বর্ষা মৌসুমে খাল নিষ্কাষণ না করে ড্রেনের কাজে হাত দেওয়ায় জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে। তাই কেসিসিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। মশক নিধনের ওষুধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সব ওয়ার্ডে করতে হবে।’
খুলনা সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সি অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিন, লার্ভি ও কালো তেল স্প্রে করা হচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে জরুরি মিটিং করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে ৩৯ জন কর্মী মাঠে রয়েছেন। এছাড়া মাইকিং করা হচ্ছে।’
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র মতে, ৩ জুলাই থেকে খুলনা বিভাগের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়। ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২৫ দিনে খুলনা বিভাগের ১৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ জন। এ পর্যন্ত যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দাঁড়িয়েছে ৪৪ জন। বর্তমানে ৩৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৯ জন, সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, বাগেরহাটে ৪ জন, সাতক্ষীরায় ৮ জন, ঝিনাইদহে ১৪ জন, কুষ্টিয়ায় ১৭ জন, নড়াইলে ১ জন ও চুয়াডাঙ্গা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছেন।