শেরপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি গত দশ বছরেও চালু হয়নি। জেলা শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে পৌর এলাকার অষ্টমীতলায় তিন একর জমিতে দশ বছর আগে একটি আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনও সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে টার্মিনালের সুবিধা পাচ্ছেন না বাসমালিক ও শ্রমিকরা। এতে শহরের নবীনগর এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় স্থাপিত বাস টার্মিনালটিতে প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তবে সম্প্রতি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি আবারও সংস্কার করতে দরপত্র আহ্বান করেছে শেরপুর পৌরসভা।
শেরপুর পৌরসভা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়; জেলা সদর, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, নকলা উপজেলা ও জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা থেকে সহস্রাধিক ভারী যানবাহন শেরপুর জেলা শহরের ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকা, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও উত্তরাঞ্চলে চলাচল করে থাকে। তাই জেলা শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে শেরপুর পৌরসভার উদ্যোগে গত দশ বছর আগে দুই কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চার দশমিক ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৭ হাজার ৬শ’ বর্গফুট আয়তনের এই টার্মিনাল ভবনের মধ্যে বিভিন্ন রুটের গাড়ির আলাদা কাউন্টার, যাত্রীদের বসার স্থান, শৌচাগারসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়। ২০১০ সালের মধ্যে টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে দীর্ঘ দশ বছর ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে শহর বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট হওয়ায় দুটি যানবাহন ক্রসিংয়ের সময় বিঘ্ন হচ্ছে।
শেরপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম বলেন, ‘টার্মিনালটি পুণরায় সংস্কার করার জন্য ইতোমধ্যে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৪৮০ টাকা ও সড়ক বাতিসহ বিভিন্ন কাজের জন্য আরও ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ টাকাসহ মোট ১২ কোটি ৫৩ লাখ ৮২ হাজার ৯৪০ টাকার দরপত্র আহ্বান করেছে শেরপুর পৌরসভা। এরআগে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের শতকরা ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছিল।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন আর অবহেলায় অসমাপ্ত এই টার্মিনাল ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনের ভেতরে বিভিন্ন যানবাহনের চাকা ও কাঠ রেখে দেওয়া হয়েছে। ভবনের ছাদে কয়েকজন নারী-পুরুষ ধান শুকানোর কাজ করছেন। ভবনের সামনের খালি জায়গায় কয়েকটি ট্রাক মেরামতের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে।
পূর্বশেরী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বাতেন ও মমিন মিয়া বলেন, ‘টার্মিনালটি এখন ট্রাকের গ্যারেজ ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছুদিন আগে ভূমিকম্পের সময় টার্মিনাল ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়।’
পূর্বশেরী এলাকার ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দশ বছর আগে টার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় একটি ওয়েল্ডিং ও ভলকানাইজিংয়ের দোকান দিয়েছিলাম। আশা ছিল এখানে টার্মিনালটি চালু হলে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবো। কিন্তু কিছুই হলো না।’
শেরপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ড্রিমল্যান্ড পরিবহন সার্ভিসের চালক মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দশ বছর আগে অষ্টমীতলায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এতে আমাদের গাড়ি রাখার স্থান নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি। নবীনগর বাস টার্মিনালের স্বল্প জায়গায় অনেক গাড়ি রাখতে হয়। তাই সড়কের ওপর গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করাতে হয়। এতে যানজট বেড়ে জনগণের দুর্ভোগ হয়।’
শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন বলেন, ‘অষ্টমীতলা বাস টার্মিনালটি আবারও নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। খুব শিগগিরই টার্মিনালটির কাজ শুরু করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী। ওই টার্মিনাল থেকে প্রত্যকটা লাইনে যেনো গাড়ি চলে সেজন্য আমি মালিক সমিতির সদস্যদের অনুরোধ করবো যাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস না ছেড়ে নির্দিষ্ট টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল করে।’
