দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগে ঈদের ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। অথচ রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফকরুল ইসলাম শনিবার (৯ আগস্ট) ছুটি ছাড়াই কর্মস্থল ছেড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা সামলাচ্ছেন দুই জন উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকেই লংগদু উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফকরুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনও ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত।
হাসপাতালের সূত্র জানায়, ডা. ফকরুল ঈদের ছুটিতে গেছেন। শনিবার সকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশে লংগদু ছেড়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৬জন চিকিৎসকের মধ্যে চারটি পদে একজন কর্মকর্তা ও তিনজন মেডিক্যাল অফিসারের পদ পূর্ণ আছে। এ চার জনের মধ্যে আবার দুজন আছেন ডেপুটেশনে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে। এ কারণে একজন কর্মকর্তা ও একজন মেডিক্যাল অফিসার পুরো উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাকি ১২টি পদই শূন্য পড়ে আছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে ডা. ফকরুল ঢাকার উদ্দেশে লংগদু ত্যাগ করায় দুপুরে তার রুমটি ফাঁকা দেখা যায় এবং তার কক্ষের পাশেই বসেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরবিন্দ চাকমা। তিনিও গত চারদিন যাবৎ অনুপস্থিত। এদিকে সকাল থেকে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দিচ্ছেন উপজেলা উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার অপরিসীম চাকমা ও সমীরণ চাকমা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে হাতের আঙুলের ক্ষত ড্রেসিং করতে দুই ঘণ্টা সময় ধরে অপেক্ষা করছেন উপজেলার বাইট্টাপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। তিনি জানান, ভিড়ের কারণে ডাক্তারের সাক্ষাত পাচ্ছেন না। এদিকে চারদিন যাবৎ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগী ওয়ার্ডে ডাক্তারের দেখা না পেয়ে বহির্বিভাগে এসে সাক্ষাতের অপেক্ষায় বসে আছেন। বয়স্ক এ রোগী জানান, জ্বর কিছুটা কমেছে। দুদিন পর ঈদে বাড়ি যেতে হবে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে এখানে বসে আছি।
টিকিট কাউন্টারে খবর নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১০ জন রোগী সেবা নিতে এসেছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা থাকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। রোগীর ভিড় সামাল দিতে ব্যস্ত থাকায় উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না হলেও ফার্মেসি বিভাগে কর্মরত তপন দত্ত জানান, বেশিরভাগ রোগী জ্বর ও পেটের সমস্যা নিয়ে এসেছেন। এরসঙ্গে ইমার্জেন্সি রোগীরাও আছেন।
হঠাৎ হাসপাতালে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে লংগদু উপজেলা মেডিক্যাল অফিসার ফকরুল ইসলামের ফোনে শনিবার (১০ আগস্ট) বিকালে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। রবিবার (১১ আগস্ট) সকালেও একাধিকবার ফোন কল করা হলে রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস করা হলে তারও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অরবিন্দ চাকমা মোবাইলফোনে জানান, ডা. ফকরুল চলে গেছেন কিনা, সেটা আমি জানি না। উনি যাবেন এটাও বলেননি। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, এবার ঈদে ছুটি নেই। কেউ যদি চলে যান, তবে নিজের রিস্কে যাবেন। তবে আমি ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট নিয়ে আজ শনিবার (১০ আগস্ট) রাঙামাটি থেকে লংগদু যাচ্ছি। আগামীকাল রবিবার (১১ আগস্ট) থেকে বিনামূল্য ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করা যাবে বলে জানান তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বলেন, ‘সব উপজেলায় খবর নিয়ে দেখবো। কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো।’