X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতায় খুলনা হয়ে ওঠে ককশিট ও পলিথিনের নগরী

মো. হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
১৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:০৩আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:০৭

 

ড্রেনের পানিতে ভাসছে ককশিট

প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে খুলনা মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতাকে আরও জটিল করে তোলে ককশিট আর পলিথিন। বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানি সঙ্গে যুক্ত হয় ককশিট,পলিথিন আর আবর্জনা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

খুলনার বিভিন্ন কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মহল্লার প্রতিটি দোকান ও বাসাবাড়িতে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন। এছাড়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছে ককশিট ও ককশিটের  তৈরি ওয়ান টাইম বক্স ও প্লেট। ব্যবহারের পর পলিথিন ও ককশিট রাস্তা- নালা-নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। খাল বা নর্দমায় জমে থাকা পলিথিন  নিচের স্তরে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, ককশিট পানির ওপরের স্তরে ভেসে থাকে, যা পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব পণ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের। তবে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলেও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন তৈরির কারখানা বন্ধের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে, ককশিটের ব্যবহারও ব্যাপকহারে বেড়েছে। চীন, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ককশিটের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্যাকেট ও প্লেন শিট। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়ায় রয়েছে ককশিট তৈরির ফ্যাক্টরি।

পরিবেশ অধিদফতরের উপসচিব সাইফুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ককশিটের তৈরি গ্লাস, প্লেটসহ বিভিন্ন পণ্য ওয়ান টাইম ব্যবহার করা হয়। এর ক্ষতিকর দিক ভয়াবহ। যা মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে। এছাড়া, এগুলো পচনও ধরে না। সুতরাং এটা পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। এছাড়া দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ। পরিবেশের জন্য হুমকি এ পলিথিন অসাধু ব্যবসায়ীরা গোপনে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে।’

সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় নগরীর বেশির ভাগ রাস্তা

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত অভিযান চললেও পলিথিনের বিস্তার থামানো যাচ্ছে না।’ পরিবেশ অধিদফতরের সূত্র মতে, সরকার ২০০১ সালে ২০ মাইক্রোনের (পুরুত্বের একক)  নিচে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বাজারজাত নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহারের কথা বলে ২০০৮ সালে নতুন আদেশ জারি করা হয়। যাতে ৫৫ মাইক্রোনের নিচে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ব্যাগ আকৃতির যেকোনও পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ রাখা হয়। কিন্তু দেশে গার্মেন্টস, লবণ ও চিনিসহ ২৩ ধরনের পণ্য প্যাকেজিং-এ মোটা পলিথিন ব্যবহারের অনুমোদনকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পাতলা নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ককরে আসছে।

খুচরা ব্যবসায়ী মো. আরমান, শেখ ইমরান ও মো. জহির জানান, পলিথিন কারখানা মালিকদের শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কই দেশব্যাপী পলিথিন সরবরাহ করছে।  জানা যায়, খুলনার বড় বাজার ও দৌলতপুর  বাজারে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ একটি চক্র পলিথিন সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করছে।

ইঞ্জিনিয়ার মৃধা ইয়াসিন হামিদ বলেন, ‘পলিথিন এখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের একটি বলা যায়। কারণ, বাজার করার জন্য এটা  ঝামেলামুক্ত। তবে পলিথিন যেভাবে পরিবেশ এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, তাতে এটাকে সাধারণ জনগণেরই পরিত্যাগ করা উচিত। অথবা ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট স্থানে রেখে, তা পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা উচিত।’  ককশিট অপচনশীল একটি পণ্য। এসব জিনিস ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে রাখা ভালো বলে জানান তিনি।

রূপসা মাছের আড়তের ককশিট ব্যবসায়ী আরমান মিয়া বলেন, ‘যারা বিদেশ থেকে মাছ এবং ফল আনেন, তাদের থেকে এ সব ককশিট আমরা কিনে নেই। পরবর্তীতে যারা মাছ কেনেন, তারা এখান থেকে এসব ককশিট কিনে নেন। একটি ককশিট ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাজ শেষে যেসব ককশিট ফুঠো হয় বা ভেঙে যায়, সেগুলো ফেলে দেওয়া হয়।’ তিনি  আরও  বলেন, ‘ককশিট ১০০-১৫০ বছরেও পচে না। এগুলো পানির ওপরে ভেসে থাকে।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কনজারভেটিভ অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে ককশিট পলিথিনের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ, এটা পানির ওপর ভেসে থাকে। আর পলিথিন পানির নিচের স্তরে থাকে। পলিথিন বিভিন্ন স্থানে পানির সঙ্গে প্রবাহিত ময়লা আটকে রাখে। আর ককশিট পানির ওপরের অংশের পানি প্রবাহকে ময়লাসহ আটকে দেয়। এ কারণেই জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেয়। এ থেকে উত্তরণে নিয়মিত অভিযান চলছে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
তিনি জানান, জলাবদ্ধতার হাত থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে শহরের ভেতরকার খালগুলোকে দখল মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ অভিযান শুরু হবে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী