X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসন নিয়ে গুজবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আতঙ্ক, সতর্ক প্রশাসন

আবদুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৯:১৬আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১৯:২৩

শালবন ক্যাম্প রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠানোর গুজবে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে কক্সবাজার পালিয়ে এসেছেন। এই মুহূর্তে তাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠালে সেখানে তাদের ওপর আবারও নির্যাতন চলবে। এমন আশঙ্কা থেকে তারা প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে  আলোচনারও দাবি তোলেন। এদিকে, রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সরকার জোর করে কোনও রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না। তাদের মঙ্গলের জন্য সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তারা জানান।  

বিষয়টি নিয়ে রবিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১১টায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোড়া শালবন, লেদা ও নয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের ইনচার্জরা বৈঠক করেন। বৈঠকে বিভিন্ন ক্যাম্পের চেয়ারম্যান, টিম লিডার, হেড মাঝি, বল্ক মাঝি ছাড়াও মাস্টার, ঈমাম ও মুরব্বিসহ এনজিওকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী, ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী খালেদ হোসেন ও মোহাম্মদ আরিফুল জামান। একইসঙ্গ তারা টেকনাফের নয়াপাড়া ও শালবন রোহিঙ্গা (২৬-২৭) ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্বেও রয়েছেন। 

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আমরা একটি বৈঠক করেছি। বৈঠকে তাদের বিভিন্ন সমস্যা কথা শুনেছি। বিশেষ করে প্রত্যাবাসন নিয়ে যেন কেউ ক্যাম্পে গুজব ছড়াতে বা রোহিঙ্গাদের মাঝে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সর্তক থাকতে বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার জোর করে কাউকে মিয়ানমার ফেরত পাঠাবে না, সেই বিষয়েও তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।’ 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের টিম লিডার ও হেড মাঝি বজলুল ইসলাম ও নুর বশর বলেন, ‘হঠাৎ প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গারা উদ্বিগ্ন তো বটেই, আতঙ্কেও রয়েছে। বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ সময়  ক্যাম্প কর্মকর্তারা ২২ আগস্টের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রত্যাবাসন নিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের গুজব ছড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ তারা আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বলেছেন, যেদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে এসেছি, সেই দেশে কীভাবে যাবো? আবারও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসবো এদেশে? তারা গোপনে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আপত্তি জানান। একইসঙ্গে প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনারও দাবি জানান তারা।’   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্বাস করি, কিন্তু জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-কে বিশ্বাস করি না। প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা বিভিন্ন কথা রটে যাচ্ছে। গত ২০১২ সাল থেকে সেদেশে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের এখনও স্বাধীনতা দেয়নি, এখান থেকে কীভাবে রোহিঙ্গারা যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিবিরে একটি কু-চক্রী মহল প্রত্যাবসন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এ কারণে  আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। গোপনীয়তার মাধ্যমে তো প্রত্যাবাসন হতে পারে না। তাই, প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিরকর্মী বলেন, ‘শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি গুটা পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় ভয়টা সব-সময় থাকে। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই ক্যাম্পে বিকেল হলে ডাকাতের ভয়ে ঘর ছেড়ে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। ক্যাম্পে অনেকে বলাবলি করছেন, যারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হবেন, তাদের ওপর হামলা হতে পারে। ফলে এখানে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এছাড়া ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে। মূলত তারাই এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’      

জানতে চাইলে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘প্রত্যবাসন বিষয়ে ক্যাম্পে যেন কোনও ভূল তথ্য প্রচারিত না হয়, সেজন্য সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জরা।’ 

প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছেন র‌্যাব সদস্যরা। প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্যাম্পে কোনও গুজব ছড়াতে দেওয়া হবে না।’ গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়ান্দা সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। 

এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত যাবে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার একটি দল। তবে, বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরিষ্কারভাবে কিছু না বললেও প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন। 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা