X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

কোনও রোহিঙ্গা রাজি হননি, প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
২২ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২৫আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৩

শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম কোনও রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট)  দুপুরে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যদি বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেউ স্বেচ্ছায় রাজি হয়, তাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ যেতে রাজি হয়নি।’

টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে এসময় চীন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। 

মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২৯০ জনের সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হয়। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, মিয়ানমারে ফেরত যাবেন না। এখন পর্যন্ত একজনও রাজি হয়নি। ফলে কাউকে নেওয়া যাচ্ছে না। তবে সাক্ষাৎকার চলমান থাকবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ কিনা জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, ‘এটা ব্যর্থ বলতে পারেন না। সব পরিবারের সাক্ষাৎকার চলবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে এটা। আমাদের বাস-ট্রাকও রেডি থাকবে। কেউ যেতে চাইলে পাঠানো হবে।’

মিয়ানমারে ফিরতে যেসব শর্ত দিয়েছেন রোহিঙ্গারা সেসব শর্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এগুলো মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের ব্যাপার। আমরা শুধু সীমান্ত পার করে দেব।’

এর আগে বুধবার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানান, বৃহস্পতিবার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাঁচটি বাস ও তিনটি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে যারা স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠবে মূলত তাদেরই প্রত্যাবাসন করা হবে, কাউকে জোর করা হবে না।

তিনি আরও জানান, ‘মিয়ানমার সরকারের দেওয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী এক হাজার ৩৭টি পরিবারের মোট তিন হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রথম তালিকাটি দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অন্যদের এই প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’ টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবির

প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফের কেরণতলী থেকে উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকা পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ, র‍্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরও অন্তত সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তরফে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ও বুধবার (২১ আগস্ট) দুই দিনে দুই শতাধিক রোহিঙ্গার মতামত নেওয়া হয়। মিয়ানমারে ফেরার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। সাক্ষাৎকারদাতারা জানান, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি ও ভিটেমাটি ফিরে না পেলে ফেরত যাবেন না তারা। একই সঙ্গে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রসঙ্গেটিও ঘুরছে তাদের মুখে মুখে।

আরও পড়ুন:


ভিটেমাটি ফেরত না পেলে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা

প্রত্যাবাসনের প্রতিবাদে তিন ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সংবাদ সম্মেলন আজ

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: হাফিজ উদ্দীন
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: হাফিজ উদ্দীন
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা, শেখ ইনানকে হত্যার হুমকি
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই