X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরে ইয়াবা বিক্রির পাঁচ শতাধিক আস্তানা!

আবদুর রহমান, টেকনাফ
২৫ আগস্ট ২০১৯, ১০:০০আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৪২

 

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, এই দুই উপজেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে ইয়াবা সেবন ও বিক্রির আস্তানা রয়েছে পাঁচ শতাধিক। র‍্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চালান এসব আস্তানায় নিয়ে আসে রোহিঙ্গা পুরুষরা। পরে এখান থেকে ওই মাদকদ্রব্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেয় রোহিঙ্গা নারীরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, মাদক বহনকারী থেকে ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারী অনেক রোহিঙ্গা। ইয়াবাসহ তাদের আটকের ঘটনাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ভোরে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার উলুবনিয়া সংলগ্ন নাফ নদের তীরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসার সময় বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়।

বিজিবি সূত্র জানায়, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত দুজনই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। নিহতরা হলো—উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মৃত সৈয়দ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সাকের (২২) ও টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা শিবিরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে নূরুল আলম (৩০)। এর আগে গত দুই মাসে উখিয়া-টেকনাফে ছয়জন রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত তিন বছরের (২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোহিঙ্গারা আসার পর কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার চালান জব্দের ঘটনা বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে মাদকের মামলা ও আসামি গ্রেফতারের সংখ্যাও। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক বছরের তুলনায় পরের বছর দ্বিগুণ পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার বা দিগুণ সংখ্যক মাদক মামলার আসামি গ্রেফতার হয়েছে। কেবল গত দুই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনকে র‍্যাব, ১৩ জনকে পুলিশ, ১২ জনকে বিজিবি, আটজনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া রোহিঙ্গারা অভিনব উপায়ে মাদক পাচার করতো।

বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালে টেকনাফ থেকে দেড় কোটি পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। আর এর পরের বছর ২০১৭ সালে প্রায় দুই কোটি পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়, যা ২০১৮ সালে আড়াই কোটি পিস ছাড়িয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত দুই বছরে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক সেবন ও বিক্রির পাঁচ শতাধিক  আস্তানা গড়ে উঠেছে। ইয়াবা মজুতের জন্যও এসব আস্তানা ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তাদের তৈরি  ইয়াবা কারবারির তালিকায় ১৩ জন রোহিঙ্গার নাম রয়েছে। তবে এ তালিকায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি।

এ ব্যাপারে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজু আরাকানি দাবি করেন, ‘অভাবের তাড়নায় রোহিঙ্গারা মাদক পাচারে জড়িত হচ্ছে। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে  স্থানীয় কিছু লোক রোহিঙ্গাদের এ কাজে জড়াচ্ছে।’

আর টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমের দাবি, ‘কাজ না থাকায় মাদক বহনে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের কেউ কেউ। মাদকরোধে আমার ক্যাম্পের ছয় ব্লকে আড়াইশ’ স্বেচ্ছাসেবী প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে। যারা মাদকের গডফাদার, তাদের আমরা ধরতে পারি না। তবে যারা ক্যারিয়ার বা বহনকারী তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করছি।’

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নূরুল আলম বলেন, ‘বিশাল শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা এখন মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও তারা জড়াচ্ছে। এতে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া রোধে পুলিশের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনীয় ফোর্সের অভাবে শিবিরের মাদক আস্তানাগুলো উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তবু মাদকরোধে পুলিশ জীবন বাজি রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

র‌্যাব-১৫ এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘আমরা গত ১০ মাসে মাদকসহ ৫৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। তাদের কাছ থেকে চার লাখ পিসের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে স্থানীয়দের তৎপরতা কমেছে। তবে রোহিঙ্গাদের তৎপরতা বেড়েছে। সেজন্য আমাদের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’

/এমএ/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৯টি সামরিক সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ, ২৭টি নিয়ে আলোচনা চলছে
১৯টি সামরিক সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ, ২৭টি নিয়ে আলোচনা চলছে
সালাউদ্দিনের ছেলের অভিষেকের দিনে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
সালাউদ্দিনের ছেলের অভিষেকের দিনে প্রাইম ব্যাংকের বড় জয়
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধপথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
জয়পুরহাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামে কাস্টমসে দুদকের অভিযান
জয়পুরহাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও চট্টগ্রামে কাস্টমসে দুদকের অভিযান
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার