দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে গত মে মাস থেকে এখানে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিলো।
রাঙামাটির কাপ্তাই প্রজেক্টের ভেতর কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান বাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গায় ২৩ একর জায়গার ওপর সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ৯ জুলাই। প্রায় দুই বছর পর বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় মে মাসে। ৭.৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আজ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্রটি দেশের সরকারিভাবে উৎপাদিত প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশন পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করছে।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক অশান্ত পরিবেশ ছিল। যার শুরু হয় ১৯৭৬-৭৭ সালে। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই এবং শান্তি চুক্তি করি। শান্তিচুক্তি করার পর পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিকভাবে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যথেষ্ট উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কারণে উন্নয়ন আরও বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে এখনও গ্রিড লাইন যাওয়া কষ্টকর, সেখানে কিছু কিছু সোলার প্যানেল দেওয়া হচ্ছে। আরও ব্যাপকভাবে, প্রত্যেক এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে প্রতিটি বাড়ি যাতে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় সে ব্যাপারে আমরা তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করবো।’
এসময় রাঙামাটিতে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার মইনুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।
সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠার জেটটি করপোরেশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ’২৪ হাজার ১২টি প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সোলার প্যানেলটি স্থাপন করা হয়েছে। এই ইউনিট থেকে ৭.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৬.৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, যা সোলারচালিত কেন্দ্রের জন্য সন্তোষজনক। এ প্রকল্প থেকে আগামী ২৫ বছর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাওয়া যাবে।’
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আগামী দুই বছর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটটি করপোরেশন এটির দেখভালের দায়িত্বে থাকবে। দুই বছর এটি কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙামাটি, কাপ্তাই ও লিচু বাগান পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের পর আরও দুই-তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থাকে, যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে।’