X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১ বান ঢেউটিন ৭ লাখ টাকা: দায় কার?

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩২আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:১২

এপিবিএন ফোর্সের এই ব্যারাকের টিনের ছাউনির জন্য ১৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) ফোর্সের ব্যারাকের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে মাত্র দুই বান (বান্ডিল) টিন দিয়ে কাজ শেষ করার অভিযোগ উঠেছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এছাড়া, ২৪ ইঞ্চি প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তৈরি করা হয়েছে মাত্র ৬ ইঞ্চি প্রশস্ত ড্রেন। অন্যদিকে, দুটি মডিউল ট্রেন্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১ লাখ টাকা। সেখানে কিছু কাজ করা হলেও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানো এসিগুলো লাগানো হয়নি। এসিগুলো বর্তমানে এমআই স্টোররুমে পড়ে আছে। অন্য কাজগুলোও ঠিকমতো সম্পন্ন করা হয়নি। এপিবিএন সহ-অধিনায়কের বাংলোসহ সাতটি মেরামত ও সংস্কারকাজ নিয়ে এ অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠলেও এ ব্যাপারে কেউ দায় স্বীকার করছেন না।

প্রসঙ্গত, ৭২ ফুট টিনে এক বান্ডিল ধরা হয়। সংক্ষেপে বান্ডিলকে বান বলা হয়। ৯ ফুট দৈর্ঘ্যের ৮ খানা কিংবা ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের ৬ খানা টিনে এক বান হয়।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, মেরামত কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এপিবিএনের তৎকালীন অধিনায়ক (কমান্ডিং অফিসার) যোগসাজশে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঠিকাদারের অনিয়ম দেখেও এপিবিএনের অধিনায়ক মাহবুব হাসান তিনি বাধা দেননি। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদারক কমিটি তাকে পাঁচ দফায় প্রতিবেদন দিলেও তিনি সেটি আমলে নেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ মার্চ খাগড়াছড়ি মহালছড়ি ৬-এপিবিএনের সহ-অধিনায়কের বাংলো, ফোর্সের রেশন স্টোর, ফোর্সের দুটি ব্যারাক (আধপাকা), দু’টি পরিদর্শক কোয়ার্টার এবং ফোর্সের ১৫ শয্যাবিশিষ্ট আধপাকা হাসপাতাল মেরামত ও সংস্কার কাজ করার ৪৬ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাপস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স মিশু এন্টারপ্রাইজ। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ১১ লাখ টাকায় দুটি মডিউল ট্রেন্ড এবং ১৪ লাখ টাকায় ড্রেন নির্মাণের কাজও পায়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদারক কমিটির সদস্য সচিব ৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তৎকালীন সহ-অধিনায়ক মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মেরামত ও সংস্কার কাজ নিয়ে তার দেওয়া নোট অব ডিসেন্টের একটি কপি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এসেছে। ওই নোট অব ডিসেন্টে তিনি জানিয়েছেন, মেরামত ও সংস্কারকাজ শিডিউল অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই তিনি পাঁচবার লিখিত প্রতিবেদন দিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ওই নোট অব ডিসেন্টের কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘৬ এপিবিএন কার্যালয়ের স্মারক নম্বর-এপিবি(৬) প্রশা: ২০১৮/১০৮৪, ০১/০৩/২০১৮ মূলে গঠিত তদারক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শিডিউলে বর্ণিত দফা অনুযায়ী সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৮ সালের ২০ মে ইউনিটপ্রধান বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর ১ জুন, ৪ জুলাই ও ২৮ জুলাই তদারক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তিনটি প্রতিবেদন দাখিল করি। কিন্তু তিনি প্রতিবেদনগুলো আমলে নেননি। নির্বাচিত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’ সর্বশেষ তিনি মহালছড়ি থেকে নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলি হওয়ার আগে ইউনিটপ্রধান বরাবর আরও একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পসমূহের অবস্থা ও নির্বাচিত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়।

বারবার প্রতিবেদন দেওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, জানতে চাইলে তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার (বর্তমানে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার) মাহবুব হাসান কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেরামত ও সংস্কার কাজের বিষয়টি ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জানার থাকলে বলুন। ওই বিষয়টি নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিশু এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ও মেসার্স তাপস এন্টারপ্রাইজের অন্যতম স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ৬-এপিবিএনের কাজ করে আসছি। ভালো কাজ করার কারণে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এখনও আমি কয়েকটি কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘মেরামত ও সংস্কার না করে অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি সঠিক নয়। শিডিউল অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন করে বুঝিয়ে দেওয়ার পরই অর্থ ছাড় পেয়েছে আমার প্রতিষ্ঠান।’ অভিযোগ রয়েছে, কাজ শেষ করার আগেই প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজ শুরুর মাত্র ২২ দিন পর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন করেন ৬-এপিবিএনের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার মাহবুব হাসান। এরপর সংস্কার কাজের বিল বাবদ ৪৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ এর চার মাস পর সংস্কার কাজ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ মাত্র ১৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পরের মাসে আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজ মাত্র ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।

সংস্কার কাজে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি দেখে তদারকি কমিটির সদস্য সচিব ৬-এপিবিএনের তৎকালীন সহ-অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করেন। শাহনেওয়াজ খালেদ সংস্কার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ব্যাকডেটে (পেছনের তারিখ) অন্য আরেক কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব হিসেবে দেখিয়ে আরেকটি তদারক কমিটি গঠন করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। পুরো বিষয়টি এখন পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ৬-এপিবিএনের বর্তমান কমান্ডিং অফিসার আব্দুর রহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যখন কাজগুলো করা হয় তখন আমি এখানে ছিলাম না। এ বিষয়ে তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার মাহবুব হাসান ভালো বলতে পারবেন।’ পুলিশ সদর দফতর থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। দুই মাস আগে সদর দফতর থেকে একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে বলেও জানান তিনি।

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!