X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কার পক্ষে রংপুর জাপার নেতা-কর্মীরা?

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:০০আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২০:৩৩

নির্বাচনি গণসংযোগ করছেন আসিফ শাহরিয়ার

২৮ বছর ধরে এরশাদের নিজের আসন হিসেবে বিবেচিত রংপুর-৩ আসনটি আবারও জাতীয় পার্টির ঘরেই থাকবে নাকি স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এরশাদের ভাতিজা বাজিমাত করবেন তা দেখার অপেক্ষায় রংপুর শহরবাসী। এই শঙ্কার কারণ এরশাদের অবর্তমানে গৃহবিবাদ। আর তাতে পুরোপুরি বিভক্ত জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর সুবিধা নিতে চাইছে বিএনপিও। বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানও এখন আসনটি জেতার স্বপ্ন নিয়ে দিনভর গণসংযোগে নেমে পড়েছেন।

জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর সদর আসনটি বরাবরই দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছিল। ২০০৮ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচনেই কেবল আসনটি ছেড়েছিলেন তিনি। সে বছর ঢাকার গুলশান আসনেও (ঢাকা-১৭) জয়ী হওয়ায় এ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয়ী হন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। আসনটিকে তার দুর্গ বলার অন্যতম কারণ ১৯৯০ সালে বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ রাষ্ট্রপতির শাসন ব্যবস্থার বদলে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে এলে রংপুরসহ উত্তরবঙ্গে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকেন এরশাদ। ১৯৯১ও ১৯৯৬ সালে বন্দিদশায় থেকে, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মুক্ত প্রচারণায় অংশ নিয়ে, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে সিএমএইচে ভর্তি থেকে এবং শেষবার ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকেও রংপুর-৩ আসনটি থেকে জয়লাভ করেন এরশাদ। তার মৃত্যুর পরও আসনটি তাই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাজনীতির মারপ্যাঁচে এ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগীর আল মাহী ওরফে সাদ এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বাড়তি সুযোগ পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ করে দলটির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের। কিন্তু, এরশাদ নিজে আসনটিতে তার উত্তরসূরী নির্বাচন না করে যাওয়ায় উপ নির্বাচনে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ একাধিক নেতা এই আসনে নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রকাশ্যে আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে চান এরশাদের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফ ( আসিফ শাহরিয়ার)। রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের পূর্ব মুহূর্তে দলটির চেয়ারম্যান পদ ও সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন নিয়ে গৃহবিবাদ তৈরি হয় এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জি এম কাদেরের মধ্যে। সে সমস্যা সুরাহার উপায় হিসেবে রওশন এরশাদের দাবি অনুযায়ী সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদের পাশাপাশি তার ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরের আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ছাড় দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান পদটি নির্বিঘ্ন করে নেন জি এম কাদের। তবে এরশাদের ছেলে হলেও রংপুরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে শাদ এরশাদ একেবারে অপরিচিত ও নবীন হওয়ায় তাকে মেনে নিতে অনীহা দেখায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ। আসনটিতে এরশাদের সম্মানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে এখনও একাট্টা অবস্থানে যেতে পারেনি জাতীয় পার্টি। রংপুরের স্থানীয় ও এরশাদের ভাতিজা হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারকে তাই সাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ভাবছে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভোটাররা।

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের দাবি, রওশন এরশাদ আসনটিতে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হলেও রংপুরের রাজনীতিতে তার সম্পৃক্ততা একেবারেই নেই। রংপুরে যাতায়াত না থাকায় প্রভাবও খুব কম। ফলে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের,মহাসচিব ও রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুরের পৌর মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা,রংপুরে এরশাদের নির্বাচনে মূল এজেন্ট হিসেবে বরাবর দায়িত্ব পালনকারী রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিন প্রমুখ নেতারাই দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের দাবি। তবে এই আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে এখনও এসব নেতাকে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। আর এর পুরো সুবিধা নিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার।       

সংবাদ সম্মেলনে সাদ এরশাদ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীরা রংপুরে দুই ভাগ হয়ে রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে পরস্পরকে ঠেকাতে রণকৌশলও ফাঁদছেন দুই চাচাতো ভাই। আগামী ৫ অক্টোবর এখানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

রংপুর সদর আসনটির নির্বাচনে অন্যতম প্রভাবক রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রার্থী বাছাইয়ের আগে তিনি নেতা-কর্মীদের সামনে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদকে মনোনয়ন দিলে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন না। সেই সিদ্ধান্তে এখনও তিনি অটল আছেন। সে কারণে সাদের পক্ষে কোনও নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেননি। এমনকি মহানগর জাপার বেশিরভাগ নেতাকর্মীও সাদের পক্ষে কাজ করছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর জাপার বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, সাদের পক্ষে কাজ না করলেও সিটি মেয়র এখন আর বিরোধিতাও করছেন না। এমনকি দলের নেতাদেরও বাধা দিচ্ছেন না।

এই প্রসঙ্গে জানতে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা  কোনও মন্তব্য করেননি।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সাদের পক্ষে কাজ শুরু করেছি।’

তবে দলের নেতা-কর্মীদের এমন বিভাজনে সন্তুষ্ট নন রওশন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি ভোটের দুই দিন আগে ৩ অক্টোবর রংপুরে আসবেন। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে নির্বাচনি এলাকায় থাকতে পারবেন না বলে জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বলদীপুকুরে জাপা নেতা ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের বাসায় থাকবেন। ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিকে সাদ এরশাদের প্রচারণার সঙ্গে রংপুর জাপার বেশ কয়েকজন নেতা থাকলেও তাদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে রওশন এরশাদ নির্বাচনের পুরো দায়িত্ব থেকে তাদের সরিয়ে নিয়ে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীরকে সার্বিক দায়িত্ব দেন। এর পাশাপাশি বগুড়ার এক সাবেক এমপিকেও রংপুরে পাঠিয়েছেন মনিটরিং করার জন্য। বেশ কয়েকদিন থেকে সাদের সঙ্গে ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন নেতা সার্বক্ষণিক প্রচারণায় থাকছেন। অন্যদিকে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন, পুলিশ এজেন্ট নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে য্গোযোগ রাখার বিষয়টি এক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জেলা সাধারণ সম্পাদক ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানান, রওশন এরশাদের সরাসরি নির্দেশে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। 

জাপার এক শীর্ষ নেতা জানান, দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা তার সমর্থকদের সার্বক্ষণিক সাদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দেওয়ার কারণে সাদ যেখানেই যাচ্ছেন, দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তার সঙ্গে থাকছেন।

জানা গেছে, দলের মহাসচিব মশিয়ার রহমান রাঙ্গাও ৩ অক্টোবর রংপুরে আসবেন। তিনি নগরীর বাসায় না থেকে তার নির্বাচনি এলাকা গঙ্গাচড়ার বাসায় থাকবেন। সেখান থেকে নির্বাচনের কর্মকাণ্ড দেখভাল করবেন বলে জানা গেছে।

ভোটার ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচারণায় কৌশল পরিবর্তন করেছেন সাদ এরশাদ। তিনি সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একইভাবে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সমর্থন আদায় করেছেন। তারাও আনুষ্ঠানিকভাবে সাদের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। 

 

গণসংযোগে বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান

এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহারিয়ার বলেন, ‘এরশাদের পৈত্রিক বাড়ি স্কাইভিউ আমরা আগলে রেখেছি। এরশাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় আমাদের বাসা থেকে। অথচ আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে সাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ তার দাবি, ‘নির্বাচনে সাদকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না। কারণ, বহিরাগতকে কেউ ভোট দেবে না। মূলত তার সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’

প্রসঙ্গত: ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা নির্বাচন করতে না পারায় জাপা প্রার্থী হিসেবে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে জয় পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আসিফ শাহরিয়ার। তবে এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে দোলাচল, সরকারি দলের সঙ্গে থাকা না থাকা নিয়ে রওশন এরশাদ-জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব, এরশাদের সিএমএইচে অন্তরীণ থাকা, রওশনপন্থী হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গার আসনটি ফিরে পাওয়া এবং ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়াসহ বিবিধ কারণে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি আসিফ। এরপর থেকেই দলে তার অবস্থান টলমল হয়ে পড়ে। দু’বছর আগে রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে না পেরে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এরশাদের আনুকূল্য হারিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার হন আসিফ শাহরিয়ার। দলের সমর্থন না থাকায় ওই নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। সেবার মোস্তফার পাওয়া ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮শ’ ২৪ ভোটের বিপরীতে আসিফ পেয়েছিলেন মাত্র ২৩০৬ ভোট। তবে এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী অপরিচিত হওয়ায় ও দলের একাংশ পক্ষে কাজ করায় আসিফকে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই ভাবছে দলটির নেতা-কর্মী ও ভোটাররা।

অন্যদিকে, বিএপির প্রার্থী রিটা রহমানের দাবি, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী। শীষের জোয়ার উঠেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনিই জয়ী হবেন।’

প্রচারণায় তিনি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন কিনা জানতে চাইলে রিটা রহমান বলেন, ‘বড় দলে নানান সমস্যা থাকবে, তবে নির্বাচনের কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার জন্য ৯টি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি, পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করছেন।

প্রসঙ্গত: জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমান বিএনপির রাজনীতি ঘনিষ্ঠ থাকলেও পরে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) একাংশের চেয়ারম্যান হিসেবে স্বতন্ত্র রাজনীতিতে জড়িত হন। পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আবারও বিএনপির সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। তবে সেসময় বিএনপিতে তার সরাসরি সদস্য পদ না থাকায় পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে রংপুর-৩ আসনে জোটবদ্ধ দল হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক বাগিয়ে নেন রিটা রহমান।এরপর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে রিটা রহমান দাবি করেন, তিনি বিএনপিতেই আছেন। তার বাবা  যাদু মিয়া রংপুর শহরের বাসিন্দা ও সাবেক মন্ত্রী। এক সময় এই আসনটি ছিল তারও। বাবার আসন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালালেও বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে রিটা রহমান ছিলেন সেসময়ে নতুন মুখ। ফলে ওই নির্বাচনে দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় ও পুরো সমর্থন পাননি তিনি। তারপরও শক্তিশালী ও বিজয়ী প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পাওয়া ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোটের বিপরীতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে রিটা রহমান পান ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ভোটার এবং বিএনপির কয়েকজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় রিটা রহমানেরও পরিচিতি বেড়েছে। যদিও তার সঙ্গে জেলা বিএনপির পুরো কমিটি এখনও একজোট হয়ে নামেননি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও তার পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তারা নামলে এবং সাদ ও আসিফের দ্বন্দ্ব আরও বাড়লে ও জাপা নেতা-কর্মীরা একজোট হতে না পারলে এর সুফল আসতে পারে রিটা রহমানের পক্ষেও। সেক্ষেত্রে পাল্টে যাবে রংপুরের গত ২৭ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস।

রংপুর-৩ আসনের ১৭৫টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, তিন দিন ধরে ডামি ভোট দেওয়ার  জন্য ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হলেও তেমন সাড়া মিলছে না বলে খোদ নির্বাচন কর্মকর্তারাই জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৭৫টি। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৭৬২ জন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনটি শূন্য হয়। ইসি-ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। ১১ সেপ্টেম্বর বাছাই করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণ।

 

 

/এনআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?