অন্ধত্ব জয় করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন সাইফুদ্দিন রাফি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় ১৫১ দশমিক ৭৫ মার্কস পেয়ে খ ইউনিটে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। আর এর মধ্যদিয়ে তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে চান চট্টগ্রামের পটিয়ার এই তরুণ। তবে তার পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে পরিবার। ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করতে মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকা কোথায় থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
এর আগে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর রাফি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে চান। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন রাফি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়বো। সেই লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিই। পরীক্ষায় ১৫১ দশমিক ৭৫ মার্কস পেয়ে আমি পাস করেছি। এই ইউনিটে মেধা তালিকায় ১১শ’ ১৬তম হয়েছি। আমার কোটা আছে, তাই আশা করছি ইংরেজি বিষয়ে পড়তে পারবো।’
আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেয়েছি। তাই শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা দিয়েছি। আর কোথাও পরীক্ষা দিইনি।’
সাইফুদ্দিন রাফি গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে। তার বাবা ছিলেন পটিয়ার ইউনিয়ন কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাফি সবার ছোট। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই হঠাৎ তার বাবা মারা গেলে সংসারে নেমে আসে অভাব। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরেন বড় বোন স্কুলশিক্ষক রিফাত আরা আঁখি।
রিফাত আরা আঁখি বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন—রাফি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক। তার নিজেরও স্বপ্ন এটা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাফি ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি। আমাদের এখন একমাত্র চিন্তা—তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। তার পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোগাড় করবো, সেটি নিয়ে আমরা এখন দুশ্চিন্তায় আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়ি। এরপর শিক্ষকতা করে আমি যা পেতাম তা দিয়ে সংসার চলতো। অনেক কষ্ট করে আমার ছোট ভাইবোনের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার ছোট বোনটি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সে বিভাগে পড়ে। তার পাশাপাশি এখন রাফিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা থেকে শুরু করে ঢাকায় মেসে রেখে পড়াশুনা করাতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা তাকে পড়ালেখার খরচ দিতে হবে।’
তিনবছর বয়সে চুন পড়ে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান সাইফুদ্দিন রাফি। তখন থেকেই অন্ধত্বকে সঙ্গী করে পথচলা শুরু। তবে এই প্রতিবন্ধিতা তার শিক্ষাজীবনে খুব একটা বাধা হতে পারেনি। উল্টো অন্ধত্বকে জয় করেই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন রাফি। এইচএসসি পরীক্ষায়ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন; পেয়েছেন জিপিএ-৫। শুধু তাই নয়, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসিতেও রাফি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
