দিনাজপুর শহরের এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার (২১ অক্টোবর) মুনতাহীনা পারভীন (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর রাত ১০টায় এই হাসপাতালেই তাকে সিজার করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর একরকম জোর করেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রিলিজ দেয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। পরদিন রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আবারও হাসপাতালটিতে নেওয়া হয় মুনতাহীনাকে। এসময়ও তার চিকিৎসায় অবহেলা করা হয় বলে অভিযোগ তাদের।
মুনতাহীনা পারভীন সদর উপজেলার ৩ নম্বর ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুনতাহীনা পারভীনকে চিকিৎসা করান ডা. হযরত আলী। প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে ১৭ অক্টোবর দুপুর ১২টার এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত ১০টায় সিজার করা হয়। একটি কন্যা সন্তানের মা হন মুনতাহীনা। স্বজনরা না চাইলেও একরকম জোর করে ২০ অক্টোবর তাকে রিলিজ দেওয়া হয়। পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রোগীর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলছিল ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। একাধিকবার বলার পরও সিজারকারী চিকিৎসক ডা. হযরত আলী রোগীকে দেখতে আসেন না। তার ছেলে মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. তারিফ-উল-ইসলাম চিকিৎসা দেন। পরে রাত ৮ টায় মুনতাহীনা মারা যান।
এ সময় রোগীর স্বজনরা আহাজারি শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। মুনতাহিনার বাবার বাড়ি শহরের পাটুয়াপাড়া এলাকায়। সেখান থেকেও লোকজন এসে হাসপাতালে শোরগোল শুরু করেন। এসময় হাসপাতাল, চিকিৎসক ও স্টাফদের ওপর হামলার অশঙ্কায় পুলিশকে খবর দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক হযরত আলী আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা যায়, এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ—এর আগেও তার নেতৃত্বে চিকিৎসা নিয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অপারেশনের সময় কিডনি কেটে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় তার ৯ বছর সাজাও হয়েছিল।
নিহত মুনতাহীনার মামাশ্বশুর আব্দুল জলিল বলেন, ‘ভুল অপারেশন হয়েছিল, নাকি পেটের ভিতরে কোনও অঙ্গ কেটে ফেলেছিল তা চিকিৎসকই বলতে পারেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোগীকে রিলিজ দেওয়া হয়। তাছাড়া পেটে বাচ্চার অবস্থা ভালো নয় বলে তাকে জোর করে সিজার করা হয়। আবার চুক্তিতে সিজার করায় ঠিক মতো কেয়ার নেওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।’
মুনতাহীনার বোন অভিযোগ করেন, ‘নিশ্চেয় চিকিৎসায় কোনও ভুল হয়েছে। এ কারণে শ্বাসকষ্টে রোগী মারা গেছে। আমার বোনকে এরা মেরে ফেলেছে।’
দিনাজপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তি বাবু বলেন, ‘আমরা মনে করছি, চিকিৎসকদের ভুলের কারণে রোগী মারা গেছে। ময়নাতদন্তের সঠিক প্রতিবেদন পাবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কেননা এক চিকিৎসক অন্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট নাও দিতে পারেন। তবে কোনও ক্লিনিকে যেন এভাবে রোগীর মৃত্যু না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
সিজারকারী চিকিৎসক ডা. হযরত আলীকে ঘটনার পর থেকে পাওয়া যায়নি। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালে আসেননি। তিনি কোথায় আছেন জানতে চাওয়া হলে, তাও সাংবাদিকদের জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে ওই হাসপাতালের ডা. তারিফ-উল-ইসলাম বলেন, ‘রোগীকে সুস্থ অবস্থায় রিলিজ দেওয়া হয়েছিল। পরে আমাদের মোবাইলে জানানো হয়েছে রোগীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সোমবার রোগীকে যখন নিয়ে আসা হয়, তখন আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অনেক কারণেই রোগী মারা যেতে পারে। কী কারণে তিনি মারা গেছেন, তা আমরা বলতে পারছি না।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেদওয়ানুর রহিম জানান, হাসপাতালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। নিহতের ঘটনায় আমাদের মৌখিকভাবে জানানো হলেও লিখিত কোনও অভিযোগ করা হয়নি।