দুর্গম জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র গড়ে তোলে সরকার। কিন্তু খাগড়াছড়ির ১৬টি ইউনিয়ন এ কেন্দ্র নেই। এছাড়া জনবল সংকট, স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি আর গাফিলতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না স্থানীয় নারী ও শিশুরা। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কেন্দ্রগুলো খোলার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ কেন্দ্রে তালা ঝুলছে।
সরেজমিন ঘুরে এবং জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার নয় উপজেলায় মোট ৩৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও আছে ২২টিতে। আবার প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, পরিদর্শিকাসহ পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। অর্থাৎ জেলায় মোট ১১০ জন চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু কোনও কেন্দ্রেই পূর্ণাঙ্গ জনবল নেই। ২২টি কেন্দ্রের মধ্যে কেবল পাঁচটিতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ফার্মাস্টিট থাকার কথা থাকলেও রয়েছে কেবল দুটিতে। ডাক্তার না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য পরিদর্শিকারা। ফলে সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কেন্দ্রগুলো খোলা থাকার কথা থাকলেও দুদিন বেশির ভাগ কেন্দ্র খোলা থাকে শুধু দিনের বেলায়। অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে, কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।
মাটিরাঙা উপজেলার আলুটিলা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলুটিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো নির্মাণের পর প্রত্যাশা ছিল, জনগণ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। কিন্তু ডাক্তার ও পরিদর্শিকা না থাকায় প্রায় সময় এসব কেন্দ্র বন্ধ থাকে। কেন্দ্রগুলো চালু না থাকায় দুর্গম এলাকার মানুষের পক্ষে সদর উপজেলা কিংবা জেলা শহরে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ পাওয়া যায় না।’
পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের বাসিন্দা অমল চাকমা বলেন, ‘লোগাং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। এখানে চিকিৎসক থাকেন না। সপ্তাহে দু’দিন সেবা দেন স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা। দু-একটি ওষুধ ছাড়া মেলে না কোনও কিছু। জরুরি অবস্থায় পানছড়ি অথবা খাগড়াছড়ি যেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
দিঘীনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেই চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে তো আরও সংকট। একাধিকবার বলেও সুরাহা হয়নি। জনবল না থাকলে কেন্দ্রগুলো করার এবং স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন স্বাস্থ্য পরির্দশিকা বলেন, ‘সেবা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তারের অভাবে সেবা দিতে পারছি না। জনবল না থাকার কারণে বেশির ভাগ কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। তাছাড়া যারা তদ্বির করতে পারে, তাদেরকে স্যারেরা প্রেশনে জেলা শহর বা উপজেলা শহরে সংযুক্ত রেখেছেন। আর যাদের তদ্বির নেই, তাদের সমস্যা দেখারও কেউ নেই।’
মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা নিটোল মনি চাকমা জনবল সংকটের পেছনে প্রেষণ শহরে থাকার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। এমনিতেই জনবল সংকট, তার ওপরে প্রেষণে থাকা চলতে থাকলে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না বলে মন্তব্য করেন।
খাগড়াছড়ি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. বিপ্লব বড়ুয়া জনবলের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘জনবল চেয়ে অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেখানে পদ নেই সেখানে পদ সৃষ্টি করে এবং শূন্যপদগুলো পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে চলমান সঙ্কট কেটে যাবে বলেও জানান তিনি।