X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাভি পালনে স্বাবলম্বী তিনশ’ নারী

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী
০১ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:০০আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৪

গাভি পালনে স্বাবলম্বী হওয়া নারীর বাড়ি পরিদর্শন করেন সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তারা (ছবি– প্রতিনিধি)

“স্বামী বেলাল হোসেন ছোট একটি চায়ের দোকান করে পাঁচ জনের সংসার চালাতেন। এরপর ঋণ নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে একটি গাভি কিনি। গাভি থাকার ঘর তৈরি ও খাবার খরচ বাবদ ব্যয় হয় ২০ হাজার টাকা। ওই গাভি এখন প্রতিদিন ২২ কেজি করে দুধ দেয়। বাড়িতে ছেলেমেয়েদের খাওয়ার জন্য কিছু দুধ রেখে বাকিটুকু বিক্রি করে দিই। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে প্রায় নয়শ’ টাকা করে পাই। পুরো টাকাই সঞ্চয় করছি। আর স্বামীর আয়ে সংসার চলছে। জেলা সমবায় বিভাগের ‘জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।”

কথাগুলো বলেন নীলফামারী ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট এলাকার নাজমা বেগম। শুধু নাজমা নন; তার মতো নীলফামারীর দুই উপজেলার প্রায় ৩শ’ নারী গাভি পালন আর দুধ বিক্রি করে অভাব জয় করেছেন।

জেলা সমবায় বিভাগ সূত্র জানায়, নারীর ভাগ্য উন্নয়নে উন্নত জাতের গাভি পালনে ঋণ পাবেন নীলফামারীর সুবিধাবঞ্চিত ৪০০ জন নারী। ‘জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে সরকার গ্রামীণ জনপদে এই ঋণ বিতরণ করছে। এরমধ্যে নীলফামারীর চার ইউনিয়নের ৩০০ জন নারী ঋণ পেয়েছেন এবং সংসারের অভাব দূর করেছেন।

‘জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর অধীন ইউনিয়নগুলো হলো– নীলফামারী সদরের চওড়া বড়গাছা ও লক্ষীচাপ ইউনিয়ন ও ডিমলা উপজেলার ডিমলা সদর ও বালাপাড়া ইউনিয়ন। উন্নত জাতের গাভি পালনে এক লাখ ২০ হাজার করে টাকা ঋণ পেয়েছেন এই চার ইউনিয়নের ৩শ’ জন নারী। এরমধ্যে গাভি কেনা বাবদ এক লাখ আর আবাসস্থল ও খাদ্য কেনা বাবদ ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন তারা।

সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে দুই উপজেলার ৩০০ জন নারীকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি ১০০ জন সুবিধাবঞ্চিত নারীকে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে ওই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। যাচাই-বাছাই করে চারটি সমিতির মাধ্যমে এসব সুবিধাবঞ্চিত নারীকে নির্বাচন করা হয়েছে।

সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের ‘চওড়া বড়গাছা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি’ ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের ‘লক্ষ্মীচাপ নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি’ এবং ডিমলা সদরের ‘ডিমলা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি’ ও বালাপাড়া ইউনিয়নের ‘দোয়েল নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি’-এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৩০০ জনকে বাছাই করে এক লাখ ২০ হাজার করে টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় এ সূত্র।

ডিমলার বালাপাড়া ইউনিয়নের দোয়েল নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্য জয়নব আকতার বলেন, ‘আমার বাবা কৃষিকাজ (মজুর) করে সংসার চালাতেন। বাবা-মা এবং দুই ভাই ও দুই বোন মিলে ছয়জন আমরা। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হতো বাবাকে। আমাদের আগের একটি গাভি ছিল। এখন নতুন করে এই সমিতিতে ঢুকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। তা দিয়ে আরও একটি গাভি কিনে লালনপালন শুরু করেছি। এজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছি। এখন দুই গাভির দুধ বিক্রি করে ভালোভাবেই সংসার খরচ চলে যাচ্ছে।’

সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ‘নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। শতভাগ সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মাঝে এই ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পিছিয়ে পড়া নারীদের সমাজে স্বাবলম্বী করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।’ লক্ষীচাপ ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৫০ জন নারীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাকি ৫০ জনকে পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।’

গাভি পালনে স্বাবলম্বী হওয়া আরেক নারীর বাড়ি পরিদর্শন সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তাদের (ছবি– প্রতিনিধি)

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী বলেন, ‘উপজেলাভিত্তিক সুবিধাভোগীদের জন্য গাভি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে গাভির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশিক্ষণ অনেক কাজে লাগবে বলে মনে করি আমি।’

জেলা সমবায় বিভাগ সূত্রে জানা যায়, একজন সুবিধাভোগী ঋণগ্রহণের এক বছর পর ঋণের কিস্তি দেওয়া শুরু করেন; যা দৈনিক ২০০ টাকা করে (শতকরা দুই টাকা সার্ভিস চার্জ) দুই বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এতে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হয়।’

সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে ওই প্রকল্প এলাকা এবং সুবিধাভোগীদের বাড়ি পরিদর্শন করেন সমবায় অধিদফতর রংপুরের যুগ্ম-নিবন্ধক ও পরামর্শক মো. আমির আজম। তিনি বলেন, ‘নারীর ভাগ্য উন্নয়ন প্রকল্প’ থেকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুস সবুর বলেন, ‘উন্নত জাতের গাভি পালনে নারীর ভাগ্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এই ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ঋণ পরিশোধের সুবিধার্থে গাভি কেনার এক বছর পর থেকে দৈনিক ২০০ টাকা হারে টাকা পরিশোধ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একধাপ এগিয়ে যাবেন এ অঞ্চলের নারীরা। অবহেলিত নারীরা হয়ে উঠবে সমাজের বাতিঘর।’

আব্দুস সবুর বলেন, ‘চারটি সমিতির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে এই ঋণ দিতে পেরেছি, আরও ১০০ জনকে পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।’

উন্নত জাতের গাভি পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সারাদেশের ২৫টি জেলার ৫০টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু করেছে সমবায় অধিদফতর। সফল হলে প্রকল্প এলাকা আরও বাড়ানো হবে।

/এমএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ