X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান: ‘বৈধ-অবৈধ’ নিয়ে ক্ষোভ কর্মচারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১১:০৮আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৩৩

ভেঙে ফেলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা দখল হওয়া ভূমি উদ্ধারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চলমান অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, রেল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত অবৈধ দখলদারদের নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ না করে, কোয়ার্টার বরাদ্দ পাওয়া রেল কর্মচারীদের স্থাপনা ভেঙে দিয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (৬ নভেম্বর)  তারা  রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) অফিস ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে বৃহত্তর সমাজ কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী হায়দার হোসেন বাদল। চলমান উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে, আমরা এটিকে সাধুবাদ জানাই। রেলওয়ের জায়গায় সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে স্থাপনা ও যে রাজত্ব তৈরি করেছে তার অবসান ঘটুক। কারণ, সন্ত্রাসীদের কারণে আমরা যারা কোয়ার্টার বরাদ্দ পেয়েছি, তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা সেই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে মুক্তি চাই ‘ তিনি বলেন,  ‘অবাক করার বিষয়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই চলামান উচ্ছেদ অভিযানকে একটি পক্ষ বির্তকিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ওই চক্রটি প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে প্রকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে, কোয়ার্টার বরাদ্দ পাওয়া কর্মচারীদের কোয়ার্টার লাগোয়া বর্ধিত কক্ষ ভেঙে দিতে উৎসাহিত করছে। আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।’

ভেঙে ফেলা হয়েছে অবৈধ ঘর হায়দার হোসেন বাদল বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আমাদেরকে পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিন। প্রশাসন থেকে আমরা যে কোয়ার্টার বরাদ্দ পেয়েছি, তাতে মাত্র দুটি কক্ষ আছে। ওই দুই কক্ষে মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। যে কারণে আমরা পাশে বর্ধিত কক্ষ তৈরি করেছি। যদি বর্ধিত অংশ ভেঙেদেওয়া হয়, তখন এক কক্ষে খাওয়া-ধাওয়া, আরেক কক্ষে সবাইকে নিয়ে থাকা সম্ভব না। ’ তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম অনুয়ায়ী আমরা ৮০০ বর্গফুটের বাসা পাওয়ার কথা। অথচ ব্রিটিশ আমলে তৈরি  কোয়ার্টারগুলো ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ বর্গফুটের বেশি না। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের ৮০০ বর্গফুটের কোয়ার্টার বরাদ্দ দিতেন, তখন আমাদের বর্ধিত কক্ষ তৈরি করার প্রয়োজন হতো না।’

এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম নাছির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিযান। আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রাথমিকভাবে রেলওয়ের জায়গা দখল করে যেসব স্থানে বস্তি গড়ে উঠেছে, অভিযান চালিয়ে সেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। পরে অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।’

কর্মচারীদের বরাদ্দ দেওয়া কোয়ার্টার সংলগ্ন বর্ধিত কক্ষের বিষয়ে তিনি বলেন,  ‘কোয়ার্টারের সঙ্গে কোনও কর্মচারী বর্ধিত কক্ষ তৈরি করলে সেটিও অবৈধ। কারণ, কর্মচারীদের কোয়ার্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্য যদি ১০ জন হয়, তার জন্য তো রেলওয়ে থাকার ব্যবস্থা করবে না। কর্মচারীদের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। আগে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হোক। তারপর কর্মচারীদের বর্ধিত কক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

ভেঙে ফেলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা প্রসঙ্গত, দখল হয়ে যাওয়া জায়গা উচ্ছেদে গত ৯ অক্টোবর অভিযান শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চলমান এই উচ্ছেদ অভিযান বানচাল করতে শুরু থেকেই কাজ করে আসছে দখলদাররা। অভিযান শুরুর একদিন পর ১০ অক্টোবর খুলশী থানার সেগুন বাগিচা এলাকায় অভিযানে গেলে বাধার মুখে পড়েন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমানসহ অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা। দখলদাররা রেলওয়ে কর্মচারীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেন যে, অভিযানে বৈধ-অবৈধ সব স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে। এ কারণে ওইদিন কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে উচ্ছেদে বাধা দেয়। পরে শুধু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে— এমন আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।  এরপর গত একমাস ধরে টানা অভিযান চালিয় যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

অভিযানের অংশ হিসেবে গত সোমবার আমবাগান এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ওই দিন   ১২টি কোয়ার্টারের বর্ধিত কক্ষ ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ৭৯৬-এ কোয়ার্টার বরাদ্দ পাওয়া ইফতেখারুল ইসলাম রাসেল।

উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাকে কর্তৃপক্ষ ৭৯৬-এ কোয়ার্টারটি বরাদ্দ দেয়। সেখানে মাত্র দুটি কক্ষ। ওই কোয়ার্টারে মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য আমরা কোয়ার্টারের দেওয়াল ঘেষে আরেকটি বর্ধিত কক্ষ নির্মাণ করি। সোমবার অভিযানে আমাদের এই বর্ধিত কক্ষটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’ অথচ যারা রেলওয়েতে চাকরি করেন না, তাদের দখল করা স্থাপনাগুলো এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি।’

সোহেল রানা নামে আরেক রেল কর্মচারী বলেন, ‘কোয়ার্টারের পাশে খোলা জায়গা থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন থাকায় আমরা বর্ধিত অংশ তৈরি করি। আমরা তো রেলের কর্মচারী, কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের নোটিশ দেবেন, তখনই আমরা ছেড়ে দিতে বাধ্য। কিন্তু যারা রেলে চাকরি করেন না, জোর করে রেলের জায়গা দখল করে আছেন, তাদের স্থাপনাগুলো আগে উচ্ছেদ করা উচিত।’ আগে বহিরাগতদের দখল করা জয়গা দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া