X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এই রায়ে গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে: এলাকাবাসী

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:০৩আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৫:০৭

হত্যাকাণ্ডের শিকার এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তার স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী ও গাইবান্ধাবাসী। তারা সবাই রায় দ্রুত কার্যকর ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দন কুমারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই রায় শুনতে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে স্বজনরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভিড় জমতে থাকে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক মামলার সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায় শুনে উপস্থিত সবাই স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা বলেন- হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল সর্বস্তরের মানুষ। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কলষ্কমুক্ত হয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘নির্মম ও নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। নিজ বাড়িতে এমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খাঁন, হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া চার কিলার ও সহযোগীদের সর্ব্বোচ শাস্তি ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা করছিল গাইবান্ধাসহ দেশবাসী। সেই প্রত্যাশিত রায়ে সাত আসামিকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এই মামলার রায়ে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। দেশের প্রচলিত আইনে এটি একটি যুগান্তকারী রায়।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল আলম রেজা বলেন, ‘এমপি লিটন ছিলেন একজন দক্ষ, মেধাবী ও জনপ্রীয় নেতা। তার জনপ্রিয়তা ঈর্ষান্বিত হয়ে সাবেক এমপি কাদের খাঁন একটি খুনি চক্র গড়ে তুলে লিটনকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলার রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এই রায়ে সুন্দরগঞ্জের আপামর জনসাধারণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছেন। আমরা চাই এই রায় যেন উচ্চ আদালতেও বহাল থাকে এবং দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর হয়।’

সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আমরা আজকের এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রায় শুনতে সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ছিলাম।  রায় শোনার পর স্বস্তি পাই। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্ব্বোচ সাজার আদেশে প্রমাণ হলো, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবেই।’

মামলার রায়ের প্রক্রিয়ায় এমপি লিটনের নিজ এলাকা সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হবি বলেন, নিজ বাড়িতে ঢুকে এমপি লিটনকে গুলি করে হত্যা করেছে হত্যাকারীরা। আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন বছর পর আজ যে রায় হয়েছে তাতে সবাইকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে। এখন সরকারের কাছে আবেদন, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।

একই এলাকার বাসিন্দা রাসেল মিয়া বলেন, এই হত্যা ঘটনার পরপরই ভারতে পালিয়ে যায় হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া দণ্ডপ্রাপ্ত চন্দন কুমার। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে দেশে এনে এবং কারাগারে থাকা কাদের খাঁনসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করতে হবে। রায় কার্যকর হলে এলাকার মানুষ আরও শান্তি পাবে।

বানডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি রেজাউল হক রেজা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশজুড়েই আলোচিত ছিল। প্রকাশ্যে নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে মারা যান এমপি লিটন। এমন হত্যাকাণ্ডে সুন্দরগঞ্জসহ গোটা জেলায় আতষ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রায় অনুযায়ী প্রত্যেক আসামিকে ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করলে লিটনের আত্মা শান্তি পাবে।’

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজমুল হুদা বলেন, ‘লিটন হত্যার ঘটনায় আদালত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের যে আদেশ দিয়েছেন তাতে জেলাবাসী সন্তুষ্ট। এ রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। রায়ে আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হলে এমন হত্যা ও অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে কেউ সাহস পাবে না।’

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন হত্যা মামলায় সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় ছয় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে মৃত একজনকে ছাড়া বাকিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া এক আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি আবদুল কাদের খাঁন, তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়িচালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, গৃহকর্মী শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। আর চন্দন কুমার ভারতে পলাতক রয়েছেন। সুবল ছাড়া বাকি সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজবাড়িতে খুন হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সেই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর ১১ মাসের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় হলো।

হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানসহ আট জন অভিযুক্ত হন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর লিটন হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েন করেন লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ডা. আবদুল কাদের খাঁনসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল থেকে আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় গত ৩১ অক্টোবর। মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রীসহ ৫৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর জেলা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেন।  

 

 

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে এইচপি ক্যাম্প
তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে এইচপি ক্যাম্প
‘আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের’
‘আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের’
মোনালিসার স্মৃতিতে রঙিন প্রেমপত্রের গল্প
মোনালিসার স্মৃতিতে রঙিন প্রেমপত্রের গল্প
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু