শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কদর বেড়ে যায় খেজুর গাছের। গাছ থেকে রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি; আর রস ও গুড়ের নানা শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে আবহমান গ্রাম বাংলায়। সারাবছর অবহেলিত খেজুর গাছগুলোকে ঝুড়ে নতুন রূপ দেন গাছিরা। ভোলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছগুলোকে প্রস্তুত করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কুঞ্জপট্টি গ্রামের এক নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মাঝবয়সী সিরাজ ব্যাপারী রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন। ব্যস্ততার মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শীত শুরুর আগেই আমরা নিজের ও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে খেজুরের গাছ লিজ নিয়ে থাকি। এবারও নিয়েছি। রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়ার কাজ শেষ করেছি। ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজও শুরু করেছি। এ বছর শীত একটু দেরিতে পড়ায় দেরিতেই রস সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হয়েছে।’
রাজাপুরের গাছি নাছির পালোয়ান বলেন, ‘আমরা শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করি। সেই গুড় বাজারে বিক্রির টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।’
স্থানীয়রা জানান, খেজুরের গুড় এই এলাকার একটি ঐতিহ্য। রস থেকে গুড় তৈরি একটি শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে ভোলা সদর উপজেলার কয়েকশ’ পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। শীত এলেই ভোলার প্রায় প্রতিটি পরিবারকে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে দেখা যেত। নতুন খেজুরের গুড় আর নতুন ধানের চাল দিয়ে শুরু হতো নবান্ন উৎসব। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এবং খেজুর গুড়ের নামে ভেজাল গুড় তৈরি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি হারাতে বসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় তৈরি করছে ভেজাল খেজুরের গুড়। তবে ভেজাল প্রতিরোধ ও গুড় শিল্প রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেজুরের গুড় পুনরায় ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য।
এদিকে, গাছিদের অভিযোগ কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ।