X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যা আছে এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০২:৪০আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০২:৪০

 

মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন বছরের মাথায় রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। আলোচিত এই মামলায় অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে সাত জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এই রায় ঘোষণা করেন।

দীর্ঘ ১৮ মাস আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৯ নভেম্বর হত্যা মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। দণ্ডবিধির ১২০-বি এবং ৩০২/৩৪ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী সাব্যস্তক্রমে অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। এরমধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার পলাতক (ভারত) ও অভিযুক্ত অপর আসামি কসাই সুবল কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। বাকি দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি ২০১৭ সালের ২১ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের পর থেকে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন।

লিখিত রায়ে যা বলা আছে

হত্যা মামলার অভিযুক্ত (সি,এস ভুক্ত) আট আসামি (১) কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খাঁন, (২) রাশেদুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান, (৩) মো. শাহীন মিয়া ওরফে শান্ত, (৪) আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে রানা, (৫) আবদুল হান্নান, (৬) এজেএম শামসুজ্জোহা ওরফে জোহা এবং (৭) চন্দন কুমার রায়কে দণ্ডবিধির ১২০-বি এবং ৩০২/৩৪ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধে দোষী সাব্যস্তক্রমে তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। এই দণ্ডাদেশ বর্ণিত আসামিদের আমৃত্য পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকরের আদেশ দেওয়া হলো।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির-৩৭৪ ধারার বিধান মতে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক এই মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদিত হওয়ার পর এই রায় কার্যকর হবে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত হাজতি ছয় আসামির প্রতি সাজা পরোয়ানা ইস্যুর নির্দেশও দেওয়া হয়। এছাড়া পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়ের সাজা তাকে গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের পর থেকে কার্যকর হবে। আসামি চন্দন কুমার রায়কে গ্রেফতার করতে সাজা পরোয়ানা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা পুলিশ সুপার গাইবান্ধা বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, এই মামলার জব্দ তালিকাগুলোয় উল্লেখিত আলামতগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা এবং তা প্রযোজ্যমতে আইনের সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুযায়ী ধ্বংসের নির্দেশও দেওয়া হয়। পাশাপাশি রায়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির-৩৭৪ ধারা অনুসারে এই রায়ের অনুলিপিসহ নথি এবং যাবতীয় প্রসিডিং সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ ঢাকা বরাবর পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৩ ধারানুসারে রায়ের একটি অনুলিপি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাইবান্ধা এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গাইবান্ধা বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল করার সুবিধার্থে ফৌজদারি কার্যবিধির-৩৭১ ধারা মতে, বিনা খরচে রায়ের অনুলিপি প্রদান এবং পৃথক কাগজে কম্পিউটার কম্পোজ করা রায় নথির সঙ্গে শামিল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, রাজনৈতিক কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার আর এমপি হওয়ার লোভের জেরেই লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন একই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আবদুল কাদের খাঁন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া কিলারদের এক বছর অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণসহ অর্থ ও নানা প্রলোভন দেন কাদের খাঁন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এমপি লিটনকে চিরতরে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ও নানামুখী প্রেক্ষাপট তৈরিতে কাজ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজবাড়িতে খুন হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটন। দুটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানসহ আট জন অভিযুক্ত হন।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর লিটন হত্যাকাণ্ডের পরদিন ১ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েন করেন লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ডা. আবদুল কাদের খাঁনসহ আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল থেকে আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় গত ৩১ অক্টোবর। মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রীসহ ৫৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর জেলা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেন।

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফার ভোট চলছে
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফার ভোট চলছে
ডাকাতি করতে গিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার ৪
ডাকাতি করতে গিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার ৪
পোশাক থেকে সুগন্ধির দাগ কীভাবে তুলবেন
পোশাক থেকে সুগন্ধির দাগ কীভাবে তুলবেন
সংযোগ নেই তবু দিনমজুরের নামে বকেয়া বিদ্যুৎবিল পরিশোধের নোটিশ!
সংযোগ নেই তবু দিনমজুরের নামে বকেয়া বিদ্যুৎবিল পরিশোধের নোটিশ!
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু