অব্যাহতভাবে লোকসান হওয়ায় শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, পেঁয়াজ ওঠার সময় বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে তারা চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রণোদনা না থাকার কারণেও পেঁয়াজ চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন তারা।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হাকিমপুর উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হেক্টরে। ২০১৭ সালে তা কমে ২০ হেক্টর, ২০১৮ সালে ৯ হেক্টর এবং চলতি বছর মাত্র ২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
একই রকম তথ্য জানা গেছে নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রেও। নবাবগঞ্জে ২০১৪ সালে ২৪৪ হেক্টর, ২০১৫ সালে ৩০ হেক্টর, ২০১৬ সালে ২৮ হেক্টর, ২০১৭ সালে ৩০ হেক্টর, ২০১৮ সালে ৩৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়।
বিরামপুরে এবার ৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। গত ১০ বছর আগে এ উপজেলায় ১শ’ হেক্টর এবং ২০ বছর আগে ২শ’ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল।
এসব উপজেলার কৃষক লুৎফর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস ও সামছুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই লাভের আশায় পেঁয়াজ চাষ করি। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে আমাদের খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার মতো। উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। প্রতি বছরই বীজের দাম বাড়ছে। গত বছর যে বীজ দুই হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সেই বীজ কিনতে হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। এর সঙ্গে শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু পেঁয়াজের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পেঁয়াজ চাষ করে আমাদের বারবার লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বেশ কয়েক বছর থেকেই একই অবস্থা। এ কারণে অনেক কৃষক পেঁয়াজ চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে শুধু পরিবারের খাওয়ার জন্য পেঁয়াজ চাষ করেন।’
তারা আরও বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে পেঁয়াজ চাষের পর বাজারে ওঠার আগ মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের পেঁয়াজ তেমন একটা চলেই না। এ কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই।’
সরকারি আনুকূল্য পেলে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়তো উল্লেখ করে স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘আলুর মতো যদি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার থাকতো এবং অন্যান্য ফসলের মতো সরকারিভাবে যদি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কৃষক পেঁয়াজ আবাদে আরও উৎসাহী হতো।’
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিকছন চন্দ্র পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হলেও এখন দিন দিন সেই পেঁয়াজের আবাদ কমছে। যদি বাজার মূল্য স্থির থাকে, আমদানি নির্ভরতা যদি কমানো যায়, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে যদি সরকারি প্রণোদনা দেওয়া যায়, তাহলে আশা করি পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দানা শস্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও মসলা জাতীয় ফসল বিশেষ করে পেঁয়াজে এখনও সেটি অর্জন করতে পারিনি। অন্যান্য স্থানে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। এটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেজন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’
পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য এই এলাকায় সংরক্ষণাগার করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা আছে বলে তিনি জানান।