রংপুর নগরীর মুলাটোল এলাকায় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বসবাসকারী পরিবারকে উচ্ছেদ করে বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। দখলের ঘটনায় পুলিশেরও মদত ছিল বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের বিচার এবং বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে তিন দিন ধরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন পালন করছে ওই পরিবার। এদিকে অনশনের কারণে পরিবারের সদস্য প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী তানভীর ও তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া বড়বোন মার্জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করা মশিউর রহমান জানান, তাদের বাড়ি রংপুর নগরীর মুলাটোল পাকার মাথা এলাকায়। নিজেদের ২২ শতক জমির ওপর বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বাস করছিলেন তিনি। এই জমি নিয়ে বদরগঞ্জ উপজেলার নটারাম গ্রামের ডা. গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা বেগমের সঙ্গে সাব জজ আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু মামলা চলমান থাকা অবস্থায় গত ৯ ডিসেম্বর সকালে আয়েশা আক্তার অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দরজা জানালা ও বাসার দেয়াল ভাংচুর করেন। এ সময় তার স্ত্রী তানজিন নাহার প্রতিবাদ করলে তাকে বেদম মারধর করে দুই শিশু সন্তান তানভীর ও মার্জিয়াসহ সবাইকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ঘরে থাকা খাট, সোফা সেট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, ফ্রিজ, টেলিভিশন, হাঁড়ি-পাতিল ও নগদ অর্থসহ দশ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বাসায় আসলে আমাকেও মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয় সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও বলেন, পরে ঘটনাস্থল আমার বাড়ির কাছেই কোতোয়ালি থানায় গিয়ে ওসি আব্দুর রশীদের সঙ্গে দেখা করি। মালামাল লুট করে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তাকে জানাই। তখন উল্টো তিনি ধমক দিয়ে বলেন ‘যার বাসা, সে দখল করেছে। তারা ঠিক কাজ করেছে, দেখি কে তাদের বাধা দেয়’, এই বলে তিনি আমাকে ও পরিবারের সদ্যদের থানা থেকে বের করে দেন।
এ ঘটনার কোনও বিচার না পেয়ে ৯ ডিসেম্বর রংপুর প্রেসক্লাবে পুরো ঘটনা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী পরিবার।
ঘটনার বিষয়ে থানায় কোনও মামলা রেকর্ড না করায় এবং বিচার না পেয়ে বুধবার সকাল থেকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মশিউর রহমান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন।
এ বিষয়ে অনশনরত মশিউর রহমানের স্ত্রী তানজিন নাহার জানান, সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে বাড়িসহ জমি দখল করে নিয়েছে। আমাদের মালামাল লুট করে নিয়েছে। এরপরেও পুলিশ আমাদের কোনও অভিযোগ নেয়নি। দিনের বেলায় তাণ্ডব চালানো হলেও পুলিশ যদি পদক্ষেপ না নেয় তা হলে আমরা কোথায় যাবো, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মশিউর জানান, অনশনের ফলে চাপে পড়ে বুধবার রাতে আগের তারিখ দেখিয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ করার সুযোগ দেন ওসি। তবে লোক দেখানো অভিযোগ নিলেও সন্ত্রাসীদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের জায়গা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন অব্যাহত রাখাবো।
এদিকি আমরণ অনশন শুরু করা পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়েছিলেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল। ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনে সাংবাদিকদের জানান বিষয়টি নিয়ে তিনি রংপুর পুলিশ কমিশনার ও থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া বিভিন্ন স্তরের মানুষ অনশনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশীদ বলেন, কারো জমি দখল করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার না। ঘটনার বিষয়ে মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।