ঢাকার বিজি প্রেস থেকে এসএসসিসহ পাবলিক বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বগুড়ায় আনতে কেন্দ্র সচিবদের কাছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র সচিবদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও হয়রানির আশঙ্কায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস করছেন না। অভিযোগ রয়েছে, আদায় করা বাড়তি টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নির্ধারিত অঙ্কের টাকাই আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসকের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী বছরে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। বগুড়ার ৪০টি কেন্দ্রে এসএসসি ও ৩২টি কেন্দ্রে দাখিল ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার বিজি প্রেস থেকে বগুড়ার কেন্দ্রগুলোর জন্য ২৫৬টি ট্রাংকে প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনা হবে। প্রশ্নপত্র পরিবহন খরচ বাবদ কেন্দ্র সচিবদের কাছে টাকা আদায় শুরু হয়েছে। আর এখানেই অভিযোগ উঠেছে, জেলা প্রশাসকের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা থেকে যা দরকার তার দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি পরিবহন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে কেন্দ্র সচিবদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিলেও অনেকেই হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।
জানতে চাইলে বগুড়ার সোনাতলা সরকারি মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরিবহনের জন্য তার কাছে ১২ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আর আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার উচ্চমান সহকারি আজমল হোসেন ৮ হাজার টাকা নিয়েছেন।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, গত জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরিবহনের খরচ হিসেবে তার কাছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
সোনাতলার ছোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহিচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন কেন্দ্র সচিব। তারা অভিযোগ করেন, প্রশ্নপত্র ঢাকা থেকে আনতে এত টাকা লাগার কথা নয়। তাদের ধারণা, ঢাকার বিজি প্রেস থেকে ট্রাকে প্রশ্নপত্র বগুড়ায় আনতে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা তাদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব এসএসসি কেন্দ্র সচিব প্রশ্নপত্র পরিবহনের নামে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসকের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার উচ্চমান সহকারী আজমল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কেন্দ্র সচিবদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র আনার পরিবহন ব্যয় যা তার বেশি নেওয়া হচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যা নিতে বলছেন তিনি তাই আদায় করছেন।
ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ঢাকার বিজি প্রেস থেকে বগুড়ায় আনতে ৩ থেকে ৪টি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। প্রশ্ন আনতে যাওয়া অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের যাতায়াত, খাওয়া এবং সম্মানী ভাতা দিতে হয়। এছাড়াও পরীক্ষার আগে কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় নাস্তার খরচও এতে অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার পাপিয়া সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি এডিসি (শিক্ষা)-র সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ জানান, প্রশ্নপত্র পরিবহনে যা ব্যয় হয় সে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়। এখানে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই; কেন্দ্র সচিবরা সঠিক কথা বলছেন না।