X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিআরপি থানায় পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি

খুলনা প্রতিনিধি
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:২৩আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:০৮

পিবিআইয়ের প্রেস ব্রিফিং খুলনা জিআরপি থানায় এক নারীকে রাতভর আটকে রেখে পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই ধর্ষণ মামলায় পিবিআই আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেছে। তবে ওই নারীকে থানায় রেখে মারপিট করার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাটি।

পিবিআই আরও জানায়, অভিযোগকারীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তারা ওই নারীকে ডিএনএ টেস্টের পরামর্শ দিলেও তিনি এই টেস্ট করাতে রাজি হননি।  

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের সামনে এ তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ আগস্ট বেনাপোল-খুলনাগামী ট্রেনের মধ্যে ফুলতলা থেকে এক নারীকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করে খুলনা জিআরপি থানায় নিয়ে আনা হয়। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে রাতে থানা হাজতে রাখা হয়। ওই রাতে খুলনা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ জন পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামিকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে বলে ৩ আগস্ট আসামি নিজে আদালতে অভিযোগ করেন। এরপর আসামি নিজেই বাদী হয়ে সাবেক অফিসার ইনচার্জ উছমান পাঠানসহ পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। আদালতের আদেশে উছমান পাঠানসহ পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা রুজু হয়। তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ প্রদান করেন।’

তিনি আরও জানান, ‘এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেল) ফিরোজ আহমেদ তদন্তকালে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আসামি বাদী হয়ে উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যা রেলওয়ে থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় এবং পিবিআই খুলনাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন আদালত। পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ আবু বকর মামলাটি তদন্তকালে ১ নম্বর আসামি রেলওয়ে থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ কর্তৃক মামলার বাদীকে ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগের সত্যতা পাননি। এ বিষয়ে রেলওয়ে থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট (নং-০১, তাং-০২/০২/২০২০, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৩)/১০/৩০) আদালতে দাখিল করেন। তবে তদন্তে সাবেক অফিসার ইনচার্জ উছমান গনি পাঠান কর্তৃক বাদীকে মারপিট করার সত্যতা পাওয়া যায়।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, ধর্ষণের অভিযোগকারী আসামির নামে আগেও খুলনা দৌলতপুর ও যশোর কোতোয়ালি থানায় মোবাইল চুরির অভিযোগে মামলা রয়েছে। আর তার মা বাদী হয়ে ২০১১ সালে আসামিকে অপহরণের অভিযোগ করে ঢাকার পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই ঘটনার তদন্তেও ঘটনাটি সাজানো নাটক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল।

ধর্ষণ মামলায় বাদীকে আইনি সহায়তা দেওয়া আইনজীবী মুমিনুল ইসলাম বলেন, বাদী পক্ষে এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্টের ওপর আদালতে না রাজি আবেদন করা হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাদীর বোন বলেন, ‘এ মামলাটি সঠিক ছিল। পুলিশ মামলাটি পক্ষে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে টাকার প্রলোভন দিতো। আমরা সাক্ষি হিসেবে তাতে সারা দেইনি। বাদী সিলেটে শ্বশুরবাড়িতে আছে। তার সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা ওই গৃবধূকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করে। পরদিন তাকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত ফুলতলায় পাঠানো হয়। ৪ আগস্ট আদালতে জামিন শুনানিকালে ওই নারী অভিযোগ করেন, জিআরপি থানায় তিনি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা জিআরপি থানায় ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজল, দুই নারী কনস্টেবলসহ বেশ কয়েকজন। ওই রাতে গৃহবধূকে ওসি উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এরপর থানা হাজতে রেখেই ওসি আগে তাকে ধর্ষণ করে। পরে পুলিশের অন্য চার সদস্য তাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

এ ঘটনায় পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ এবং সদস্যরা হলেন−কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ. ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।

আরও পড়ুন−

থানা হাজতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ: তিন পুলিশ সদস্য এখনও বহাল

খুলনা জিআরপি থানা হাজতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণে অভিযুক্তরা এখনও বহাল তবিয়তে

খুলনায় রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত কমিটি

খুলনায় জিআরপি থানার ওসিসহ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম