X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

লাভ নয়, মূলধন নিয়েই দুশ্চিন্তায় পোল্ট্রি খামারিরা

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
১৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩০আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৪০

পোল্ট্রি মুরগির খামার

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারিরা। লকডাউনে হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় কমেছে পোল্ট্রি ও ডিমের চাহিদা। এছাড়া পরিবহনে সমস্যার কারণে মুরগি ও ডিম পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে লাভ করা তো দূরের কথা, মূলধন টেকানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, ছোট-বড় সব মিলিয়ে রাজশাহী জেলায় দুই হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার ও পরোক্ষভাবে দেড় হাজার মানুষ জড়িত আছে।
ক্ষতির ব্যাপারে এনামুল বলেন,  ‘আগে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ২৫-৩০ টাকা বিক্রি হতো। বর্তমানে কমে তা ৫-৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে সাদা ডিম ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা এবং লাল ডিম ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে খাবার  হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ও বাজারে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় বর্তমানে সাদা ডিম ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা এবং লাল ডিম ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, আগের মতোই উৎপাদন হচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতিতে বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে সংরক্ষণের অভাবে মাংস ও ডিম খামারে পড়ে থাকে।
এনামুল বলেন, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তা যেন সঠিকভাবে পোল্ট্রি খাতে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে এই দুর্যোগ মুহূর্তে পোল্ট্রির খাবার পরিবহন আওতামুক্ত হলেও রাস্তায় বিভিন্ন ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। পোল্ট্রি মুরগির খামার
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, এই মুহূর্তে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। লকডাউনে জরুরি সেবাসহ কিছু বিষয়ে আওতামুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পোল্ট্রির খাবার পরিবহনও আছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথভাবে কাগজসহ প্রমাণাদি দেখালে কোনও সমস্যা হবে না। আর পোল্ট্রি খাতের ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মাধ্যমে দেখা হবে। যাতে করে এই খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও ডিলার সাকিব হোসেন জানান, করোনার কারণে রাজশাহীতে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এতে ফিডসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। প্রতিটা খামারি লসের মধ্যে আছে। 
তিনি আরও জানান, প্রতিকেজি মুরগির উৎপাদনে গড়ে খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা। কিন্তু পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ২০-২৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে তার খামারের এক হাজার মুরগি বিক্রি করে ৪৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। 
আরেক খামারি জাহিদ হাসান বলেন, ‘মুরগি নিয়ে আমাদের মতো ছোট খামারিরা চরম ক্ষতির মধ্যে আছে। সামনের দিনে কী হবে আল্লাহ জানে। আমি গত শুক্রবার ৪০০ মুরগি বিক্রি করেছি। যেখানে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমার এখনও সোনালি আছে ১৮০০ আর ব্রয়লার আছে ১ হাজারের মতো। এগুলো আর ১৫ দিনের মতো রাখতে পারবো। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে মূলধনের প্রায় অর্ধেকই হারাতে হবে। এই অবস্থা  সবার। যারা লেয়ার তুলেছে, তারাও ক্ষতি গুনছে। প্রতিটি ডিমে প্রায় দেড় থেকে ২ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।’ 
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সচিব গোলাম জাকির হোসেন বলেন,  ‘আমাদের এখানে পোল্ট্রি খুব খারাপ অবস্থাতে আছে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যবসায়ীরা যেন এই সমস্যা পরিহার করতে পারে। তবে এটা তো শুধু আমাদেরই না আন্তর্জাতিক একটি সমস্যা। আর প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রায় ৭২ কোটি ৭৫০ লাখ টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। যেটা সব ব্যবসায়ীর জন্য। এ বিষয়ে আমাদের সদর আসনের এমপির সঙ্গেও কথা বলেছি। এর আগে আলোচনাও হয়েছে। যেন সঠিক জনের কাছে লোনটা পৌঁছায়। আমরা পুরো অর্থনীতি নিয়ে ভাবছি। এখন পর্যন্ত শুধু পোল্ট্রি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। আর পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরাও এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কোনও আবেদন করেনি।’

পোল্ট্রি মুরগির খামার
করোনা পরিস্থিতিতে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না অনেকেই। তারা বলছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খামারে বাচ্চা তুলবেন। 
খামারি সাগর হোসেন বলেন, ‘আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা। একবার বড় ধরনের লস হলে উঠে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব হবে। দেশে দোকানপাটের ওপর কঠোর নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন আগে খামারের প্রায় ৮০০ মুরগি বিক্রি করে  দিয়েছি। তারপর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কেউ লাভ করতে পারেনি। যে কারণে খামারে আর মুরগি তুলিনি। মুরগি না তুললে কিছুটা লস তো হবে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে মুরগি তুলছি না।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার জানান, লকডাউনের কারণে পোল্ট্রি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বাচ্চা বিক্রির জন্য অথবা কেউ ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে তাদের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে। আর আমরা মন্ত্রণালয়ে আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরছি। তবে এখনও পোল্ট্রি নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। আর পরিবহন নিয়ে কোনও সমস্যা যেন না হয়। কারণ খাদ্যসহ জরুরি পরিবহন চলতে পারবে।

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
ধোনি-জাদেজার লড়াই ছাপিয়ে প্লে অফে বেঙ্গালুরু
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
হীরকজয়ন্তীর পর সংগঠনে মনোযোগ দেবে আ.লীগ
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?