X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২১ জুলাই ২০২০, ২২:০৫আপডেট : ২১ জুলাই ২০২০, ২৩:৫৫

পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের

ভ্যানচালক স্বামীর রোজগারে সন্তান নিয়ে কোনোমতে সংসার চলে গৃহবধূ আমেছার। ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নৌ-ঘাটগামী সড়কের ঢালে বসতি গড়লেও আমেছার অভাব কাটেনি কখনো। তবে ব্রহ্মপুত্রের উগড়ে দেওয়া পানি আমেছার সেই অভাবকে আরও বাড়িয়েছে। বাড়ি ছেড়ে সড়কে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে। এমনকি ঘরের ভেতর বুক সমান পানি, টিউবয়েল আর টয়লেটও পানির নিচে। মেঘমালার সঙ্গে সন্ধি করে বান আর বৃষ্টির পানির বৃদ্ধিতে আমেছাসহ ওই সড়কে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে।

রমনাঘাটগামী সড়কে কাপড় আর পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি করে আশ্রয় নেওয়া গৃহবধূ আমেছা বলেন, 'একে তো বান, তার ওপর বৃষ্টি। স্বামীর কামাই (রোজগার) নাই। মাইনষের কাছত (মানুষের কাছ থেকে) চাল আর চুলা হাওলাত করি আনি রান্দি খাই। সউগ জাগাত পানি, পায়খানা-প্রস্রাব করার জায়গাও নাই।'

আমেছা জানান, সড়কে আশ্রয় নিলেও সেখানে পানি ওঠায় কোলের সন্তানকে অন্যের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সে বাড়িতেও বন্যার পানি প্রবেশ করায় সন্তানকে নিজের কাছে ফেরত আনতে গেছেন তার স্বামী। ঝুঁকি নিয়েই জলমগ্ন সড়কের ওপর সন্তান নিয়ে রাত যাপন করতে হবে তাদের। ভোগান্তি থেকে কবে মুক্তি মিলবে, এমন প্রশ্ন চোখেমুখে থাকলেও তা অনুচ্চারিতই থেকে যায় আমেছার ঠোঁটে।

পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের

রেইনকোর্ট পরে কিছুদূর এগুতেই দেখা যায় ঝুম বৃষ্টিতে সড়কের ওপর পলিথিনের ছাউনির বিছানায় বসে থাকা মধ্য বয়সী ছোলেকা বেগমকে। কোনও খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মধ্যবয়সী এই নারী জানান, 'ত্রাণের আশায় থাকি না বাবা, জীবন বাঁচপার জন্যে সড়কত আছি। হামাক কাই ত্রাণ দেয়, কাইমত (মূল স্থল ভাগ) ত্রাণ নাই!' তবে পানি আর শৌচাগারের সমস্যার কথা জানালেন ছোলেকা বেগমও।

নদ-নদীতে পানি কমা-বাড়ার খেলা আর ভারী বর্ষণে এমনই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ৫৬ ইউনিয়নের প্রায় তিন লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ। সহসাই এই দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না বলে আভাস দিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু স্বল্প বিরতিতে দুই দফা বন্যার শিকার বানভাসি অনেকের ঘরে মজুদ করা খাবার আর হাতে জমানো টাকা শেষ হয়েছে আরও আগেই। খাদ্যকষ্ট আর ভোগান্তি নিয়ে দিনাতিপাত করছেন জেলার ৯ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। শিশু সন্তান আর বয়োবৃদ্ধ সদস্যসহ গবাদি পশু তাদের ভোগান্তি আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের খাবারের পাশাপাশি গো খাদ্যের জোগান দেওয়া বানভাসিদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। খড়ের গাদা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে গাছের পাতা জোগাড় করে গবাদি পশুর পেট ভরাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা শুরু হলেও তা বেশিরভাগ অভাবীর হাতে পৌঁছাচ্ছে না। শুকনো খাবারের অভাবে হাহাকার করছে মানুষ। কিন্তু অপ্রতুল ত্রাণে সেই হাহাকার বানের পানিতেই তলিয়ে যাচ্ছে।

পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০ জুলাই পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১৯০ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ জিআর ক্যাশ এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বণ্টন চলমান রয়েছে। এছাড়াও শিশু ও গো-খাদ্য বাবদ আরও দুই লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, 'পানিবন্দি অভাবী মানুষের তুলনায় বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা নিতান্তই কম। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার দাবি করেন বন্যা কবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। পাশাপাশি ভাসমান টয়লেট সরবরাহের পরামর্শ দেন তারা।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করতে পারে। এমতাবস্থায় জেলায় বন্যার স্থায়ীত্ব আরও বাড়বে, যার ফলে বানভাসিদের ভোগান্তি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বরাদ্দ খাদ্য ও অর্থ ছাড়াও দুইশ ১০ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়াও ঈদের আগেই বণ্টনের জন্য ভিজিএফ বাবদ ৪ হাজার ২৮৫ মেট্রিকটন চাল উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।




/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক