X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবা চালান, মজুত ও লেনদেনের নিরাপদ ঘাঁটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প!

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
২৫ আগস্ট ২০২০, ১৬:০০আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২০, ০৪:৩৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্প রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় দিন দিন অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। গত তিন বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৫ শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই খুন, ডাকাতি, মাদক ও মানবপাচার। এছাড়া রয়েছে ধর্ষণ, অস্ত্র, মারামারি ও অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের মামলা। প্রশাসন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পে কয়েকটি গ্রুপ মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা চালান এনে ক্যাম্পে মজুত রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে ক্যাম্পে ইয়াবা চালান, মজুত এবং লেনদেন করা নিরাপদ।

কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা সেখানে অবস্থান করে। সেখানে যখন তখন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে। এ সুযোগে ক্যাম্পে ঘটছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এছাড়া ক্যাম্পগুলো পাহাড় সংলগ্ন হওয়ায় দু-একটি ডাকাত দলের অপরাধও বেড়েছে। ফলে ক্যাম্প এখন অপরাধীদের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা মজুত ও লেনদেনের জন্য ক্যাম্পগুলো ব্যবহার করছে।

কক্সবাজারের ৩৪ ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ দমনে চলতি বছরের জুলাই থেকে দায়িত্ব পালন করছে ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর সদস্যরা। এর আগে সেখানে জেলা পুলিশ দায়িত্বে ছিল।

জুলাইয়ে টেকনাফে ১৬ এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা মাদক ও অস্ত্রসহ ১৬ রোহিঙ্গাকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ইয়াবা, ৩টি অস্ত্র ও ৩০ লিটার মদ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছি এক মাস পার হয়েছে। প্রতিদিন কোনও না কোনও ক্যাম্প থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। তবে ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।’

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড় ঘিরে ৪-৫টি সংঘবদ্ধ ডাকাত বাহিনী সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে ডাকাত জকির আহমদ ওরফে জকির ও আবদুল হাকিম বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। বেশিরভাগই ডাকাত জকির ও হাকিম বাহিনী টেকনাফের নাইট্যং পাহাড়, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, মিনাবাজার, পুটিবনিয়া, লেদা, জাদিমুরা ও শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে আনাগোনা রয়েছে। তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে পাহাড় ও ক্যাম্পে মজুত করে। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। এছাড়া পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়ে খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় অব্যাহত রেখেছে।

বিজিবি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পসহ বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০ পিস ইয়াবাসহ ১৩২ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া ইয়াবা পাচার ও মজুতকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৩ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, সীমান্তে বিজিবি তৎপরতার কারণে ইয়াবা পাচার কিছুটা কমেছে। তবে রোহিঙ্গাদের কারণে ইয়াবা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ক্যাম্পে মাদক কারবার বেড়েছে। কারণ মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য ক্যাম্প এখন নিরাপদ স্থান। তবে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অর্জনে বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৬৮ জন নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ৫১ জন রোহিঙ্গা ছিল। তাদের মধ্যে ২৬ জন সক্রিয় ডাকাত ছিল। বাকিরা মাদক কারবারি।

গত দুই বছরে ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে অন্তত ৪৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরও ৩২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।

পুলিশ বলছে, টেকনাফে ২০১৮ সালে ৯ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১২৩ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ৩৭ জন রোহিঙ্গা ছিল।

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা জাফর আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ক্ষুদ্র একটি অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা আমাদেরও বিব্রত করে। কিন্তু যারা মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ করছে, তাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজনও জড়িত। যেসব রোহিঙ্গা এসব অপরাধ করছে তারা ক্যাম্পে থাকে না। তবে এটা সত্যি, অপরাধ করার পর অনেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।’

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা নিহত হয়েছে রোহিঙ্গাদের হামলায়। রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয়রা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে ভুগছে। ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির শিকার হবেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে। ফলে চলতি বছরে ২০ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৯ ইয়াবা ও ১৮৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ক্যাম্প থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৪২ ইয়াবাসহ ৬৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে র‌্যাবের প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে ক্যাম্পে।

আরও পড়ুন:

রাখাইনে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করবে 

ইয়াবা চালান, মজুত ও লেনদেনের নিরাপদ ঘাঁটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প! 

শেখ হাসিনার প্রস্তাবনা মেনে মিয়ানমারে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা 

করোনার মধ্যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার ঠিকানাসহ তালিকা পাঠিয়েছে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার পথে সব ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে মিয়ানমার 

নিরাপত্তাহীনতায় স্থানীয়রা, রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব বাড়ছে 

করিডোরে রোহিঙ্গার বসতি, পথ হারিয়ে বিপন্ন বুনো হাতি 

রোহিঙ্গাদের জন্য হুমকিতে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প: বাড়ছে অপরাধ 

করোনা: প্রবল স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়রাও

রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে

সমাবেশের অনুমতি নেই, আজ স্বেচ্ছায় ঘরে থাকবেন রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা সংকট: কূটনৈতিক ও করোনা জটিলতায় শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনে বিশ্বমানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই ফুটবলার
সর্বাধিক পঠিত
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?