পরপর তিন দফা বন্যায় অনেক টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। গ্রামের নারীরা এক কলসি পানির জন্য দিনভর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করেন। এছাড়া ঘর গৃহস্থালির কাজে হাওর ও ডোবার পানি ব্যবহার করার কারণে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বন্যার কারণে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে তারা টিউবওয়েল সংস্কারের কাজ করছেন।
এই বর্ষায় সুনামগঞ্জবাসী তিনবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ির সঙ্গে তলিয়ে যায় হাওর এলাকার হাজার হাজার টিউবওয়েল। টিউবওয়েলগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন হাওর এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর, খলাচানপুর এবং সদর উপজেলার গৌরারং, আহমদাবাদ, নিয়ামতপুর, মনমতেরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের নারীরা দল বেঁধে লাইন ধরে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন।
জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে ১৩ হাজার টিউবওয়েল তিন দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তিন হাজার ও বেসরকারি দশ হাজার। হাওর বেষ্টিত সদর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের রাকেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, খলাচানপুর গ্রামের দুটি টিউবওয়েলের মধ্যে একটি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে, আরেকটি টিউবওয়েল ভালো আছে। গ্রামবাসী সবাই একটি টিউবওয়েল থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকাল পানি সংগ্রহ করছেন।
হরেন্দ্র কুমার বর্মণ বলেন, কলের পানি আনতে নৌকা লাগে। পাড়ার বেশ কয়কজন মহিলা একত্র হয়ে দল বেঁধে গিয়ে অন্য পাড়া থেকে কলের পানি আনেন। এ গ্রামের ৬০০ লোকের জন্য মাত্র দুটি টিউবওয়েল রয়েছে।
ললিতা রানী বর্মণ বলেন, গ্রামের পুরুষরা হালির হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই ঘাটে অনেক সময় নৌকা থাকে না। এসময় মহিলারা কাপড় ভিজিয়ে হেঁটে গিয়ে দূরের কল থেকে খাবার পানি নিয়ে আসেন।
প্রকৃতি বর্মণ বলেন, একটি টিউবওয়েল সচল থাকায় গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ সারাক্ষণ এখান থেকে পানি আনেন। ফলে কিছু দিন পরপর টিউবওয়েল বিকল হয়ে যায়। তখন চাঁদা তুলে এটি সংস্কার করতে হয়।
হরিধন বর্মণ বলেন, গ্রামের চারদিকে পানি থাকলেও বিশুদ্ধ পানির অভাব তাদের যায় না। কারণ জনসংখ্যার অনুপাতে সরকারি টিউবওয়েল খুব কম।
সুপ্রভা বর্মণ বলেন, খলাচানপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। নিজেরা টাকা দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে টিউবওয়েল স্থাপনের সামর্থ্য তাদের নেই। তাই সরকারি উদ্যোগে গ্রামে আরও টিউবওয়েল স্থাপন করা প্রয়োজন। নেমেতা রানি বর্মণ জানান, এক কলসি পানির জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। সকালে ও বিকালে দিনে দুই বার পানি আনতে হয় তাকে। এজন্য অনেক কষ্ট হয় তার।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, তিনবারের বন্যায় অসংখ্য টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, বন্যায় সরকারি বেসরকারি ১৩ হাজার টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে বিশুদ্ধ পানির সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে।