দেশে এবার বন্যা হয়েছে দু’দফায়। তৃতীয় দফার বন্যাও আসার সম্ভাবনা আছে। তবে দুই দফার বন্যাতেই হাড়-কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে দেশের নদীবর্তী এলাকাগুলোর। বন্যায় মানুষের ভয়াবহ ক্ষতির পাশাপাশি বিশাল ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও। একসময় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী থেকে মাইল দূরত্বে ছিল গত কয়েক বছর ধরে আশপাশ ভাঙতে ভাঙতে এবার এমন অনেক বিদ্যালয়কে গ্রাস করেছে নদী। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নদীর উপচে পড়া পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান নথি। ভেঙে নষ্ট হয়েছে অনেক ভবন। উত্তরবঙ্গের পানি দক্ষিণবঙ্গের সাগরে যাওয়ার সময় মাঝবঙ্গের পদ্মা-যমুনাবেষ্টিত মানিকগঞ্জকে এবারও চুবিয়ে গেছে। তাতে আর সব কিছুর সঙ্গে নষ্ট হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, বিশেষ করে নদী তীরের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদীবর্তী কোনও কোনও বিদ্যালয়ে তীব্র স্রোতের ধাক্কায় দেয়াল দেবে গেছে, কিছু বিদ্যালয়ে খেলার মাঠের মাটি সরে গেছে, আবার অনেক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ সড়কটিও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা শিক্ষা অফিস ও পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৩০৬টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব বিদ্যালয় পাঠদানের উপযোগী করতে ২ কোটি ৬০ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭০টি, ঘিওর উপজেলায় ৬৮টি, সিংগাইর উপজেলায় ৪০টি, সাটুরিয়া উপজেলায় ৪৯টি, হরিরামপুর উপজেলায় ১৫টি, শিবালয় উপজেলায় ৩০টি বিদ্যালয়ে, এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৩৪টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তার উপজেলার ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ নম্বর বাঁচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৮ নম্বর সুবুদ্ধি-পাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩ নম্বর চরকাটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে মুসলিম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও ৭টি প্রাথমিক স্কুল। এগুলো যমুনার নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত।
তিনি আরও জানান, তার উপজেলার ৪৩টি স্কুল প্রাঙ্গণ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ২২টি স্কুলের ভেতরে পানি ঢুকে বেঞ্চসহ আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আবার বন্যার সময় ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছিল আশ্রয়ণ কেন্দ্র। এগুলোও মেরামত করতে হবে।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কারে যে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে তাতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়া ঘিওর উপজেলায় ৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষতি সামলাতে দরকার পড়বে ৫৯ লাখ টাকা, সিংগাইর উপজেলায় ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারে লাগবে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সাটুরিয়া উপজেলায় ৪৯টি বিদ্যালয়ের জন্য দরকার পড়বে ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, হরিরামপুর উপজেলায় ১৫টি বিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, শিবালয় উপজেলায় ৩০টি বিদ্যালয় ঠিকঠাক করতে চাওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকা এবং দৌলতপুর উপজেলোয় ৩৪টি বিদ্যালয়ের ক্ষতি নিরূপণ হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। এছাড়া এ উপজেলায় তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এগুলোর জন্য ৯ লাখ টাকার ক্ষতি দেখানো হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বরাদ্দ পেলে এসব টাকা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দ্রুত সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।