নীলফামারীতে হু হু করে বাড়ছে কাঁচামরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১২ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, দুর্যোগের দোহাই দিয়ে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা সবজির আকাশচুম্বি দাম নিচ্ছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষজন।
শনিবার (২৯ আগস্ট) বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচামরিচ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি করছে ২০০ টাকায়। শুকনো মরিচ পাইকারি বাজার থেকে ২১০ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা। আদা পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি ২০০ টাকা, আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা।
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৃষ্টির কারণে বাজারে আমদানি কমেছে। এবার পরপর চারবার বন্যায় মরিচ ও আদা পচে যাওয়ায় এই দুই পদের পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এর থেকে বাদ পড়েনি রসুন, পেঁয়াজ ও শাক সবজি।
সবজির খুচরা বিক্রেতা বুলবুল মিয়া ও ইলিয়াস আহম্মেদ বলেন, বেগুন বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। উচ্ছে বিক্রি করছেন ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। ঢেঁড়স বিক্রি করছেন ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২ টাকা। পটল বিক্রি করছেন ৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮ টাকা। করলা প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ টাকা। তারা বলেন, কাঁচা সবজি পচনশীল। তাই একদিন বিক্রি না হলে লোকসান গুনতে হয়। তাছাড়া বর্ষায় বাজারে আমদানি কম। একারণে গত সপ্তাহের চেয়ে আজ একটু দাম বেশি।
এছাড়াও ঝিঙে বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। লাউ প্রতি পিচ বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা। বরবটি ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৩০, কাঁচাকলা ২০ ও শসা ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছিল ৩০।
জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের আড়ৎদার ও পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আলম হোসেন জানান, জুলাই থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী বেশ কিছু এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এতে ডোমার, ডিমলাসহ বিভিন্ন উপজেলার সবজির ক্ষেত, কাঁচা মরিচ ও আদা নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি পড়ে। নতুন করে সবজি আবাদে চাষিদের আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা ও বাজারের সবজি কিনতে আসা খোকন মিয়া অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ ঊর্ধ্বগতির বাজারে কেনা কাটা করা সম্ভব হচ্ছে না। জীবন বাঁচার তাগিদে খেতে হয় বলে বাজারে এসেছি। কিন্ত প্রতি সপ্তাহে এভাবে সবজির দাম বাড়লে সামনের দিনগুলো না খেয়ে থাকতে হবে।’
নীলফামারী পৌর শহরের নিউবাবু পাড়ার হায়দার আলী আক্ষেপ করে বলেন, বন্যা আর বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে ঠিকই। কিন্ত একদিনে একেবারে সব সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে এমনটা নয়। উঁচু জায়গার ক্ষেত থেকে জমা পানি নেমে যাওয়ায় সবজি আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্যা আর বৃষ্টির দোহাই দিয়ে সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে কেজিতে ১০-১২ টাকা বাড়তে পারে না। আর আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচের ঝাল সাধারণ মানুষকে পাগল করে দিয়েছে।
নীলফামারী জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এটিএম এরশাদ আলম খাঁন জানান, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ অনুযায়ী আড়ৎ থেকে পাইকারি মূল্যে পণ্য কিনে খুচরা দোকানিরা সবজিতে ১৫-২০ ভাগ মূল্য সংযোজন করে বিক্রি করতে পারেন। এর বেশি দাম নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। তবে আমরা খুব শিগগিরই কিচেন মার্কেটে অভিযানে নামবো।