X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প উত্তপ্ত: সপ্তাহজুড়ে চলা সংঘর্ষে নিহত ৭

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
০৭ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৮আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২০, ১১:০২

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ইয়াবা ও ক্যাম্পভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলমান সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ৭ রোহিঙ্গা।





রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক সূত্র জানায়, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দোকানপাট থেকে চাঁদা আদায়, মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা ইয়াবা ও নানা প্রকার মাদক ও অস্ত্র বাণিজ্য, সংগঠনভিত্তিক এলাকা দখল নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত চলছে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশিরভাগ ক্যাম্পে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে শুধু উখিয়ার কুতুপালং ও লম্বাশিয়া ক্যাম্পে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। দু’গ্রুপের এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৭ রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা। 

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাহউদ্দিনের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৪ অক্টোবর দুই জন, ৫ অক্টোবর একজন ও ৬ অক্টোবর চার জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মধ্যে এখনও উত্তেজন চলছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ টেকনাফের চাকমারকুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করেছে। 

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানান, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই জের ধরে কুতুপালং ২ ওয়েস্ট ডি-ব্লকে ৪ অক্টোবর রাতে মুন্না গ্রুপের ৪/৫ শত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দা-লাঠি নিয়ে ক্যাম্পের শতাধিক ঝুপড়ি ঘর ও ৫০টি দোকান ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আনাস গ্রুপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং মুন্না গ্রুপের ওপর চড়াও হয়। এভাবে গত সপ্তাহজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলে আসছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, গোলাগুলির ঘটনা চলমান রয়েছে। এ কারণে প্রাণ বাঁচাতে কয়েকশ’ সাধারণ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে অন্য ক্যাম্পে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি জমিতে ৩৪টি ক্যাম্পে রয়েছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয় নেওয়ার পর এক বছর রোহিঙ্গারা নীরব থাকলেও যত দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ বাড়ছে। স্থানীয় মাদক ও ইয়াবা কারবারি এবং চোরাচালানিদের সঙ্গেও তাদের অবাধ যাতায়াত। আর ক্যাম্পগুলোকে মাদক, ইয়াবা, অস্ত্রের মজুত বানিয়ে ফেলেছে। অপরাধের মাত্রা বেড়ে এখন রোহিঙ্গাদের মধ্যেই প্রায় প্রতি রাতে ক্যাম্পে সংঘর্ষ চলে। অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, পুলিশ আক্রান্ত, ডাকাতি, হত্যা, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত রয়েছে রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প (ছবি: টেকনাফ প্রতিনিধি)
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি, আর আসামি হয় ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি হয়েছে ৪১৪ জন। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি আর আসামি হয় ৬৪৯ জন। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা অপরাধীদের বিরুদ্ধে হওয়া ১৮৪ মামলায় আসামি হয় ৪৪৯ জন।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়াবার চালানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। ক্যাম্পে কয়েকটি গ্রুপ মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা চালান এনে ক্যাম্পে মজুত রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যেও ক্যাম্পে ইয়াবা চালান, মজুত এবং লেনদেন করে তারা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম জানান, ক্যাম্পগুলো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুন, ধর্ষণ, মাদকপাচার, অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসায় মতো অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এতে করে গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষ, খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও ক্যাম্পে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কোনও না কোনও ক্যাম্প থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। তবে ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলমান উত্তেজনা, সংঘর্ষের ঘটনার কথা উল্লেখ করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার সামশুদ্দোহা নয়ন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমানে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

 

 

/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী