X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঠাণ্ডাত ঘর থাকি বাইরোত আসিবার উপায় নাই’

নীলফামারী প্রতিনিধি
২৭ জানুয়ারি ২০১৬, ০৯:০৫আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০১৬, ০৯:৫৩
image

শীত, নীলফামারী

নীলফামারীতে শীতের দাপটে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের লোকজন। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই ঘর থেকে বের হতে না পারায় কাজে যেতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকার তাগিদে শীতের মধ্যেই নেমে পড়েছেন কাজে। শীতের কারণে দিন আনে দিন খায় এসব লোকজনের দিন কাটছে অতি কষ্টে।

এদিকে, শীতের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুদের শীতজনিত রোগবালাই। বুধবার সকালে নীলফামারী জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে মানুষের দুর্দশার চিত্র। সামান্য উকি দেওয়া সূর্য আলো তাপ ছড়াতে না পারলেও তা থেকেই উষ্ণতা নেওয়া চেষ্টা করছে গ্রামের নারী-শিশুরা।

আবার খেটে খাওয়া মানুষ নিরুপায় হয়ে জীবিকার তাগিদে নেমেছেন কাদা-পানির বোরো আবাদের জমিতে চারা রোপনের কাজে।

কুয়াশা, নীলফামারী

এ ইউনিয়নের গুড়গুড়ি গ্রামের কৃষি শ্রমিক কানাই লাল রায় বলেন (৫৫) বলেন, ‘হামরা গরিব মাইনসি। কাম (কাজ) করি সংসার চালেবার নাগে (লাগে)। ঠাণ্ডাত কাহো কমোত নেয় না। আইতের (রাতের) ঠাণ্ডাতও নিন (ঘুম) হয় না। খেতা (কাথা) দিয়া এলা জ্বার (শীত) কাটে না।’

তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের কারণে কাজের অভাবে আয় কমেছে। নিরুপায় হয়ে অল্প মজুরীতে কৃষি জমিতে কাজ করছেন। আজ জমিতে বোরো চারা রোপনের কাজে নামলেও আয় হয় দেড়শ টাকার মতো। যা দিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালানো দায়।

ইটাখোলা গ্রামের চৌধুরী পাড়ার মামুদ বলেন,‘ঠাণ্ডাত ঘর থাকি বাইরোত আসিবার উপায়ও নাই। কিন্তু কাম (কাজ) না করিলে মোর সংসারও চলিবে না।’

শীতে মাঠে কাজ করছেন শ্রমিকরা

পৌর এলাকার দক্ষিণ হাড়োয়া গ্রামের কৃষক হিরম্ব কুমার রায় (৫৫) প্রতি বছর বেরো আবাদ করেন পাঁচ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে শীতের কারণে জমিতে কাজ করাচ্ছি না। ঠাণ্ডায় শ্রমিকরা কম কাজ করতে পারে।’ অন্যান্য বছর এ সময়ে বোরো আবাদের জমিতে চারা রোপেনের কাজ শেষ করলেও এবার শীত কমার অপেক্ষায় তিনি বন্ধ রেখেছেন সে কাজ।

শীতে শুধু মানুষই নয়, কাবু হয়ে পড়েছে পশু-পাখি। শীত থেকে রক্ষার জন্য অনেকে গরুর গায়ে চট জড়িয়ে দিয়েছেন।

দক্ষিণ হাড়োয়া গ্রামের কৃষক সুবাশ রায় (৪৫) বলেন, ‘আমার পাঁচটি গরু চট জড়িয়ে রেখেও রক্ষা করছি। শীতের কারণে গত চার দিন ধরে গরু স্বাভাবিক খাদ্য খাচ্ছে না।’

এদিকে শীতের কারণে বাড়ছে শিশুর শীতজনিত রোগবালাই। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিম্ন আয় ও ছিন্নমূল পরিবারের শিশুরা। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রমকাইটিস, সর্দি, কাশি এবং জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।

বুধবার দুপুরে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসতালে এসব রোগে ভর্তি রয়েছে ৬৪ শিশু। তাদের বেশির ভাগের বয়স এক বছরের মধ্যে। রোগীর চাপে হাসপাতালেও গাদাগাদি অবস্থা। ওই ৬৪ শিশুর মধ্যে ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২০ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে রয়েছে ৪৪ জন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু

নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাছিনুর রহমান বলেন, ‘শীতের কারণে শীতজনিত রোগবালাইয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আর বয়স্করা হাঁপানি (শাসকষ্ট) রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

সদরের ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রশীদ বলেন, ‘এলাকায় শীত অনেক বেশি। আমার ইউনিয়নে ত্রাণ দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখা ৬ হাজারের ওপরে। সেখানে আমি এবার দুই দফায় ২০৫ টি কম্বল দঃস্থদের মাঝে বিতরণ করেছি।’

নীলফামারী সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু আসাদ মিয়া বলেন, ‘উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় এবার ৫,৪৮০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, নীলফামারী জেলায় এ পর্যন্ত ২৪ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

 

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!