X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন আবিষ্কার

তৈয়ব আলী সরকার,নীলফামারী
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৩:২১আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৩:২৩


নীলফামারীতে বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন আবিষ্কার প্রায় ৯শ’ বছরের পুরনো একটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খেরকাটি ইউনিয়নের ধর্মপাল গ্রামে।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, ১২ শতকের দিকে পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি দল ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটির খনন করছেন। সাত সদস্য বিশিষ্ট খননকারী দলের প্রধান বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক মুজিবুর রহমান জানান, তারা চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে খনন কাজ শুরু করেছেন ।
তিনি আরও জানান, মন্দিরটির উপরের অংশ পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এর নিচের কিছু অংশ এখনও মাটির নিচে রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত স্থানটিতে ভাঙা কিছু মাটির পাত্র, সাদা মার্বেলের ফলক এবং পোড়া মাটির বড় বড় খণ্ড দিয়ে নির্মিত একটি দেয়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে।
দেয়ালটি ২৫ মিটার দীর্ঘ এবং ০.৮৫ মিটার (প্রায় ৩৩.৫ ইঞ্চি) পুরু। মন্দিরটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি ১.২ মিটার প্রশস্থ রাস্তা। ধর্মীয় প্রার্থনার অংশ হিসেবে রাস্তাটি প্রদক্ষিণ করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের বাৎসরিক খনন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্মপাল গড়ে কাজ শুরু করেন বলে তিনি জানান।

স্থানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এখানকার ময়নামতির কোট, খেরকাঠি পীরের আস্তানা এবং আরো একটি স্থানসহ মোট ৩০ একর জায়গা সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।

মহাস্থানগড় জাদুঘরের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এসএম হাসনাত বিন ইসলাম জানান,ধর্মপালগড়ে প্রাপ্ত পোড়া মাটির খণ্ডগুলোর সঙ্গে মহাস্থানগড়ের পোড়া মাটির খণ্ডগুলোর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে।

ঐতিহাসিক এ স্থানটি সম্পর্কে রংপুর জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং খননকারী দলের সদস্য আবু সায়েদ ইনাম তানভিরুল বলেন, ১৮০৭-১৮০৮ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ড.ফ্রান্সিস ধর্মপাল গড় ভ্রমণ করেছিলেন। এর পরের বছর তিনি সরকার এবং ইতিহাসবিদদের কাছে স্থানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটি মানচিত্রও প্রস্তুত করে পাঠিয়েছিলেন। ১৮৭৬ সালে আরও এক ব্রিটিশ গবেষক মেজর রেনেল এখানে এসেছিলেন। তিনি এখানে একটি জরিপ চালান এবং নিদর্শনটির খনন কাজ সম্পর্কে একটি বইও লিখেছেন। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, দ্বিতীয় ধর্মপাল এখানে তার রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এবং তার নামানুসারেই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে ধর্মপাল গড়।

পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের দ্বিতীয় শাসক। তিনি ছিলেন পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের ছেলে। পৈত্রিক রাজত্বের সীমানা তিনি বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছিলেন। পাশাপাশি পাল সাম্রাজ্যকে উত্তর ও পূর্ব ভারতের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছিলেন।

বর্তমান জেলার জলঢাকা উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তিনি রাজধানী স্থাপন করেন। বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি প্রাসাদের বাইরে মাটির উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করেন। সেই থেকে স্থানটির নাম হয় ধর্মপালগড়। ধর্মপালের রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ৭৮১-৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার রাজত্বকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ। উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দাক্ষিণাত্যের রাজকূট এবং মালব ও রাজস্থানের গুর্জর-প্রতীহারদের সঙ্গে বাংলার পালগণ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

স্থাপনাটি দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে কয়েক হাজার লোক ভিড় জমাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ স্থানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য।

/জেবি/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা