X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটার জীবনযাত্রা পাল্টে দেবে শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতু

শফিকুল ইসলাম
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২০:১৯আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:৫৬

কুয়াকাটার পথে নতুন সেতু পটুয়াখালী কুয়াকাটার পথে তিনটি নদী পাড়ি দিতে এখন আর ফেরির দরকার হবে না। তিনটি নদীতেই তৈরি হয়ে গেছে সেতু। একটি খুলে দেওয়া হয়েছে গত বছর। বাকি দুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু দুটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে পর্যটক আর দর্শনার্থীদের যেন তর সইছে না। শেষ হচ্ছে না তাদের অপেক্ষার প্রহর। কবে কখন সেই শুভক্ষণ ধরা দেবে এমন স্বপ্নেই বিভোর এ জনপদের লাখ লাখ মানুষ। মুখিয়ে আছেন তারা কবে সেতু পেরিয়ে মুহূর্তেই পৌঁছাবেন কুয়াকাটায়। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চার দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ স্বপ্নের বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসেনি। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সেই সাথে পাল্টে যাচ্ছে এ জনপদের সড়ক যোগাযোগের দৃশ্যপট। মাত্র চার বছরের মধ্যে সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় এ এলাকার পুরো চেহারাই বদলে যাচ্ছে।

পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার হলেও কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। আর এই ২২ কিলোমিটার সড়কেই রয়েছে তিনটি নদী। এতোদিন এই তিনটি নদীতে ছিল তিনটি ফেরি। তিনটি ফেরি পার হয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় যেতে সময় লাগতো প্রায় দুই ঘণ্টা। কখনও তিন থেকে চার ঘণ্টাও চলে যেতো। এখন সেদিন শুধুই স্মৃতি। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দুটি ব্রিজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্রিজ দুটি খুলে দেওয়া হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রমানের শহীদ তিন সন্তানের নামে কলাপাড়া শহরের আন্ধারমানিক নদীর ওপর শেখ কামাল, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর ওপরে শেখ জামাল ও শিববাড়িয়া নদীর উপরে শেখ রাসেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ডিইবিটি কনসালটেশন ফান্ডের সহযোগিতায় এই সেতু তিনটি নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এই তিনটি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গতবছর ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট শিববাড়িয়া নদীর ওপর নির্মিত শেখ রাসেল সেতু উদ্বোধনের পর তা জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

২০১২ সালে একই সঙ্গে তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া ছিল এ জনপদের মানুষের কাছে অপ্রত্যাশিত, অবাস্তব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা বাস্তবেই পরিণত হলো।

সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন এ মাসের শেষ সপ্তাহেই শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বক্তব্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় বৃহস্পতিবার কাঙ্খিত শেখ কামাল ও শেখ জামাল সেতুর উদ্বোধন করা হচ্ছে।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৪৯তম কিলোমিটারের খেপুপাড়া নামক স্থানের আন্ধার মানিক নদীর ওপরে শেখ কামাল সেতুটি ৮৯৩ দশমিক ১০ মিটার দীর্ঘ। প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। ১৯টি স্প্যানের ওপর সেতুটির রয়েছে ৬০৯ মিটার দৈর্ঘের সংযোগ সড়ক। এর পটুয়াখালী প্রান্তে ৩০৯ মিটার ও কুয়াকাটা প্রান্তে ৩০০ মিটার। এটির ব্যয় বরাদ্দ ৬৫ কোটি ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ২০১০ সালের ১৬ মে এ সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়।

অপরদিকে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৬১তম কিলোমিটারে হাজীপুর নামক স্থানের সোনাতলা নদীর ওপর ১০টি স্প্যানের ওপরে নির্মিত হয়েছে ৪৮৩ দশমিক ৭১৫ মিটার দীর্ঘ শেখ জামাল সেতু। এ সেতু নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। সেতুতে সংযোগ সড়ক রয়েছে ৪৭৪ মিটার। সংযোগ সড়কের পটুয়াখালী প্রান্তে ২০০ মিটার ও কুয়াকাটা প্রান্তে ২৭৪ মিটার। শেখ জামাল সেতুর প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ১ দশমিক ৪৭৫ মিটার ফুটপাত রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ এ সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ৩০ জুন।

আর উদ্বোধন হওয়া ৪০৮ দশমিক ৩৬ মিটার দৈর্ঘের শেখ রাসেল সেতুটি নির্মাণ হয়েছে শিববাড়িয়া নদীর ওপর। নয়টি স্প্যানের উপরে নির্মিত সেতুটির ব্যয়বরাদ্দ ছিল ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ২০০৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি এটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৪০০ মিটার সংযোগ সড়ক নিয়ে সমস্যার কারণে এ সেতুটির নির্মাণ কাজে বিলম্ব ঘটে। কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়েছে সেতুটির নির্মাণ কাজে। সমস্যা শেষে শেখ রাসেল সেতুর উদ্বোধনও করা হয়েছে।

এই সেতুটির দেখভালে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবির পান্না জানান, এ সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষ তাদের স্বপ্নের কুয়াকাটায় যেতে ঝক্কি ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

/এসআই/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছর
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক