আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী নুরুল্লাহ ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসায় অধ্যক্ষসহ তিন পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
গত ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন কুড়িগ্রাম সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত। আদেশের কপি মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও নিয়োগকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সদস্যদের কাছে পৌঁছানো হয়। অধ্যক্ষ প্রার্থী ও মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেহের আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
মাদ্রাসার শিক্ষক মেহের আলী জানান, তিনি ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাকে বরখাস্ত দেখিয়ে এবং স্বাক্ষর জাল করে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন ‘অবৈধ’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ ও কমিটির সভাপতি আফতাব উদ্দিন। অধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর এবং ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া অগ্রগামী করা হয়। ‘মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে’ পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে নিয়োগ বোর্ড গঠনসহ গত ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি আদালতে যান। আদালত তার আবেদন আমলে নিয়ে গত ৪ এপ্রিল ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে ওই দিনই আদেশের কপি নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে গোপনে অধ্যক্ষ পদে রাজারহাট উপজেলার চাঁন্দামারী ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক নুরে আলম সিদ্দিকীকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মেহের আলী বলেন, ‘৫ এপ্রিল আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারি আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা হবে না। কিন্তু এক সপ্তাহ পর জানতে পারি ওই দিনই গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বাস্তবে নিয়োগ পরীক্ষা না হলেও কাগজ-কলমে তিন পদেই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন বিলের কাগজপত্র প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে আবারও আদালতে যাবো।’
ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক তাকে বরখাস্ত করার দাবি প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বঞ্চিত এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কোনও পত্র পাইনি। বরখাস্ত করে থাকলে শুধু খোরপোশ ভাতা হিসেবে মূল বেতনের অর্ধেক পেতাম। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ বেতন ভাতা পেয়ে আসছি। তাহলে কীভাবে বুঝবো আমি সাময়িক বরখাস্ত।’
সদ্য নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিয়োগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে, এটা আমার জানা নেই। গত ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছি।’ পরীক্ষার সম্পন্ন হওয়ার সময় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে অপর দুই পদে নিয়োগ পাওয়া দুই প্রার্থী নাফসীন নাহার ও সাধবী আক্তার নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
নিয়োগ সম্পন্ন করার বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মাদ্রাসার নিয়োগকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সব সভাপতি জানেন। আপনি তাকে ফোন দেন।’
গভর্নিং বডির সভাপতি আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি। পরে ফোন দিয়েন কথা হবে।’
নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন বিলের ফাইল প্রাপ্তি ও তা অগ্রগামী করার বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।