X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ বিশেষ

কোন তারকার বিদ্যা কতদূর? (পর্ব- দুই)

মাহমুদ মানজুর ও সালমান তারেক শাকিল
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৮:৫০আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:০৭

১৪ সেপ্টেম্বর বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশ পায় ‘কোন তারকার বিদ্যা কতদূর?’ শিরোনামের ঈদ বিশেষ প্রতিবেদন। এটি প্রকাশের পর পাঠক ও তারকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেক তারকাই উক্ত ফিচারে নিজের নাম না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটি সত্য নয়! যদিও সেই তারকাদের কেউ কেউ নিজের শিক্ষা প্রসঙ্গে ‘সত্য’ তথ্য হাজির করতে পারেননি।

কোন তারকার বিদ্যা কতদূর? এরমধ্যে লাক্স তারকা বিদ্যা সিনহা মিম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তিনি অনেক আগেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এখন মাস্টার্স-এ পড়ছেন বাংলা বিষয়ে। তবে সেটি কতদিন ধরে কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বলেননি এই অভিনেত্রী। প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম কিস্তিতে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশি দিন ক্লাস করতে পারেননি। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার পড়াশোনাও শেষ করতে পারেননি এ লাক্স সুন্দরী।

এদিকে আজ প্রকাশিত হলো আলোচিত এ প্রতিবেদনের দ্বিতীয় কিস্তি। যেখানেও তুলে ধরা হচ্ছে পাঠকদের আগ্রহের অন্যতম বিষয়, আমাদের অভিনয় জগতের মানুষদের পড়াশোনার নাম-ঠিকুজি।

জনপ্রিয় অভিনেতা সজল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি অনেকে আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগ থেকে সাফল্যের সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অভিনেত্রী বিন্দুও একই বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন।

একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, ফারুক আহমেদ, মাজনুন মিজান প্রমুখ। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে... এদিকে বাংলা ট্রিবিউন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব অনেক বেশি হলেও টেলিভিশন বিভাগে সেটি খুব কমই। জানা গেছে, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাশ করেছেন আফজাল হোসেন, বিপাশা হায়াত, চঞ্চল চৌধুরী, সাজু খাদেম, প্রাণ রায়সহ এমন বেশ ক’জন তারকা শিল্পী।

চারুকলার চার প্রিয়মুখ- আফজাল, বিপাশা, চঞ্চল ও সাজু খাদেম। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা (ইংরেজি বিভাগ), রোকেয়া প্রাচী, বিজরী বরকতুল্লাহ, বন্যা মির্জা এবং গোলাম ফরিদা ছন্দা। বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ, মডেল ফয়সাল ব্যাবস্থাপনা বিভাগ থেকে, ব্যবসায় প্রশাসনে ব্যাচেলর (মার্কেটিং) ও মাস্টার্স (ফাইন্যান্স) শেষ করেন তাহসান খান। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। 

ঢাবি’র চার প্রিয়মুখ সূবর্ণা মুস্তাফা, বন্যা মির্জা, তাহসান ও আজাদ আবুল কালাম। এদিকে অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ পড়াশোনা করেছেন বুয়েট থেকে। স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিমও। তবে তার কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানা যায়নি।

ছোটপর্দার অভিনেতা নাঈম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন।

অভিনেত্রী জেনির শিক্ষাজীবনের খোঁজ নিতে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের কথা জানা গেলেও সেটি অসম্পূর্ণ বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে বর্তমানে অভিনয়ে অনিয়মিত অভিনেত্রী ঈশিতা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এদিকে উপস্থাপক-অভিনেত্রী নাবিলা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন ২০১০ সালে।
বর্তমানে দুই বাংলার প্রিয় মুখ জয়া আহসান ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। অন্যদিকে লাক্স সুন্দরী বাঁধন বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ থেকে সাফল্যের সঙ্গে বিডিএস (গ্র্যাজুয়েশন) সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে অভিনেত্রী ভাবনা ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস থেকে ইংরেজি এবং নাজনীন হাসান চুমকী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। আর এই সময়ের ব্যস্ত অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাডেমিক শিক্ষা শেষ করেছেন। তিনি সেখানকার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও বেশ সক্রিয় ছিলেন।

জয়া, জেনি, ভাবনা ও বাঁধন।  এই সময়ের অন্যতম আলোচিত নায়িকা পরীমনির শিক্ষাজীবনের তথ্য পরিষ্কার জানা যায়নি। নিজের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও পিরোজপুরে নানাবাড়িতে বড় হয়েছেন বলে জানা গেছে ঘনিষ্ট একটি সূত্রে। সূত্র জানায়, খুব সম্ভবত তিনি এসএসসি পাস করেছেন!

পরীর প্রথম ছবি রানা প্লাজা ছবির পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘যখন আমি ‘রানা প্লাজা’ করার জন্য পরীকে চূড়ান্ত করি তখন যতদূর জানতাম ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ত। তবে পরীক্ষা দিয়েছে কী না, জানি না। ’’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় পরীমনির সঙ্গে। তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলবো না।’ তবে গুগুল উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে সন্মানের ছাত্রী!

এছাড়া পূর্ণিমা, পপি, বর্ষা, সিমলা, সায়মনসহ অনেক নায়ক-নায়িকাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে পরিষ্কার কোনও তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। তাদের ফোন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তৌকির, পরীমনি ও নাঈম-নাদিয়া দম্পতি। তারা যা বললেন

দেশের অন্যতম নায়ক ও পরিচালক সোহেল রানা বলেন, ‘কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আর একজন শিল্পীর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা না থাকা কোনও বিষয় নয়, পৃথিবীর অনেক গুণী শিল্পী আছেন যারা বেশি দূর পড়েননি। পড়ালেখা এক জিনিস আর প্রয়োগ আলাদা। এখানে শিল্পীদের অভিনয় যোগ্যতাই প্রধান।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পড়াশোনা নিয়মিত করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকে অভিনয়ে ব্যস্ত হওয়ার আগে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এটা ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে অভিনয়টাও যে শিখতে হয়, সেটা তারা বুঝতে পারেন না। অর্থ আয়টা বড় হয়ে ওঠে।’

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করা চিত্রনায়িকা ববি বলেন, ‘শুধু অভিনয় কেন, শিক্ষা তো মানুষ মাত্রই দরকার। আধুনিক যুগে  মানুষ তো শিক্ষাটাকেই যাচাই করে। যদিও অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে, যারা দুর্জন। এ কারণে অভিনয় যেহেতু বড় শিল্প মাধ্যম, এখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা জরুরি।’

ইডেন কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করা অভিনেত্রী রুনা খান বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, একাডেমিক শিক্ষার অবশ্যই দরকার আছে। আর এই শিক্ষাটা সম্পূর্ণ করতে পারাটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। এবং এটি শেষ করা যে কারও জন্যই উচিত। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, অভিনয়ের জন্য আগে তো শিক্ষাগ্রহণ করার তেমন সুযোগ ছিল না। এখন কিন্তু বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয়ের ওপর বিষয় আছে। আমার জানা মতে, ইউল্যাবেও নাট্যকলা আছে। যারা আসতে চায় এই শিল্পে, তাদের জন্য এটা বড় সুযোগ। এর মানে কিন্তু এই না, এগুলো পড়েই অভিনয়ে আসতে হবে। অন্য বিষয় থেকেও হতে পারে, তবে অবশ্যই অভিনয় জানতে হবে।’

ববি, সোহেল রানা ও রুনা খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘একজন অভিনয় শিল্পীর অভিনয় করার সময় কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের রিঅ্যাক্ট করতে হবে, এছাড়া অভিনয়ের বেসিক কিছু বিষয় জানার জন্য একাডেমিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। কেননা, অনেকেই হয়তো প্রাকৃতিকভাবে এই জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু সবার পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে একাডেমিক জ্ঞান তাদের জন্য সহায়ক হয়।’

তারকাদের শিক্ষা বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ খান বলেন, ‘যেকোনও ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই। যেমন আমাদের ক্রিকেটর প্রাতিষ্ঠানিক রুপ আছে বলেই আজ ক্রিকেটে এত উন্নতি। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুর কাছে শিক্ষা নিত। সে দিক দিয়ে অভিনয় তো একটি শিল্প। অতএব, এর বিস্তারের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অবশ্যই জরুরি।’

/এসটিএস/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল