X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৌঁছাননি বাচ্চু গাইতে হলো জেমসকে

সুধাময় সরকার
১৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:০৪আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:০৪

আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস এমনটা হয়েই থাকে। একজন শিল্পী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাতে দেরি করলে আগের জন মঞ্চে খানিক সময় নিয়েই গান করেন। পরের শিল্পী পৌঁছে গেলে মাইক্রোফোন-মঞ্চ ছেড়ে দেন আগের জন।

আবার উল্টোটাও হয়। যেমন একজন শিল্পী গ্রিন রুমে অপেক্ষা করছেন অনেকক্ষণ অথচ মঞ্চে যিনি আছেন তিনি তার নির্দিষ্ট সময়ের পরও গেয়েই চলেছেন!
প্রথমটির উদ্দেশ্য সহশিল্পী-আয়োজককে সহযোগিতা করা। আর পরেরটি যেন সহশিল্পীর সময়টা খেয়ে নিজের কৃতিত্ব জাহির করা! অবিশ্বাস্য হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরের ঘটনাটাই প্রায়শই স্টেজ শো’র ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। আর সেটি নাকি তারকা শিল্পীদের ব্যক্তি শত্রুতার জের ধরেই।
শুক্রবার মহান বিজয় দিবসে দেশের দুই শীর্ষ রকার আইয়ুব বাচ্চু এবং জেমসের মধ্যে উপরোক্ত দুটি ঘটনার একটি ঘটে গেল! খবরটি বেশ অস্বস্তিকর হলেও এটাই সত্যি।
শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের কনসার্ট ‘লাল সবুজের মহোৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সবচেয়ে বড় এই কনসার্টের প্রধান দুই চমক ছিলেন নগর বাউল জেমস এবং এলআরবি তথা আইয়ুব বাচ্চুর সরাসরি পরিবেশনা। এরমধ্যে কনসার্টের শেষ চমক হিসেবে বিকাল সোয়া পাঁচটায় মঞ্চে উঠার কথা আইয়ুব বাচ্চুর। তার আগের পারফর্মার হিসেবে ঠিক সাড়ে চারটায় মঞ্চে ওঠেন জেমস।
কিন্তু কনসার্টের দর্শকরা শেষ পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চুর গান ও গিটার উপভোগ করতে পারলেন না। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত একাই পারফর্ম করেন জেমস ও তার দল! শেষ পর্যন্ত মঞ্চ থেকে নামেননি জেমস, উঠেননি আইয়ুব বাচ্চু! কনসার্টের শেষটা হয় এভাবেই।
বিকাল সাড়ে ৪টায় মঞ্চে জেমস তবে কি আইয়ুব বাচ্চু ও তার দল গ্রিন রুমেই বসে ছিলেন? নাকি রেগে বেরিয়ে গেছেন? তবে কি আইয়ুব বাচ্চুর নির্দিষ্ট সময় ইচ্ছে করেই নষ্ট করলেন জেমস? দর্শক মনে এমন প্রশ্ন উঠেছে তখনই। সেটি চলছে এখনও। কিন্তু সঠিক উত্তর মিলছে না। কেউ বলছেন, আইয়ুব বাচ্চু এসেছেন; কেউ বলছেন, এসে ফিরে গেছেন; কেউ বলছেন তিনি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর এসেছেন, ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেমসের ব্যক্তিগত মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং বিব্রতকর। আমাদের শিল্পীদের আরও সময় সচেতন হওয়া উচিত।’
কিন্তু বিষয়টি কী? জবাবে রবিন জানান নতুন খবর। কনসার্ট শেষ হওয়ার পূর্ব নির্ধারিত সময় ঠিক ৬টা হলেও শেষ পারফর্মার হিসেবে আইয়ুব বাচ্চু ও তার দল অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান ঐদিন রাত পৌনে ৭টার দিকে! ততক্ষণে অনুষ্ঠানের সমাপণী ঘোষণা করে জেমস ও তার দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছেড়ে বাংলা একাডেমি চলে এসেছেন।
রবিন বলেন, ‘‘আমরা অনুষ্ঠান শেষ করে বাদ্যযন্ত্র গুছিয়ে আনুমানিক পৌনে সাতটার দিকে যখন টিএসসি হয়ে বাংলা একাডেমি অতিক্রম করছি তখন দেখলাম বাচ্চু ভাইরা কনসার্টের দিকে ভিড় ঠেলে এগুচ্ছেন! তখনই আমি উনাদের ডেকে বললাম, ‘আপনারা ব্যাক করেন। কনসার্ট ক্লোজ। টাইম ওভার।’ তবুও তারা সেদিকেই এগুলেন। এরপর কী হয়েছে আমরা জানি না।’’
তার আগের বর্ণনা দিতে গিয়ে রবিন জানান, জেমসের মঞ্চে উঠার সময় বিকাল সাড়ে চারটা থাকলেও শহরের জ্যাম এবং গ্রিনরুমের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে এদিন তারা বেলা তিনটার মধ্যে কনসার্টস্থলে হাজির হন। যথা সময়ে মঞ্চেও উঠেন জেমস। ঠিক সোয়া ৫টায় মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার কথা থাকলেও আইয়ুব বাচ্চুর পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে বলে আয়োজকরা জেমসকে আরেকটু সময় স্টেজে থাকার অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ রাখতে গিয়ে ৪৫ মিনিটের শো টানা দেড় ঘণ্টা টেনে নেন জেমস! এবং মঞ্চ থেকে নেমে সন্ধ্যা ছয়টার পরেও অনুষ্ঠানস্থলে আইয়ুব বাচ্চুকে না দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
সন্ধ্যা ৬টায় কনসার্টের শেষ গানে জেমস এ প্রসঙ্গে জেমস মুখপাত্র রবিন বলেন, ‘আমি জানি না বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে যারা থাকেন- তারা আসলে কী করেন? দেখুন, কনসার্টের দিন আমরা দেড় ঘণ্টা আগেই পৌঁছেছি। তার আগের দিন রাত তিনটার দিকে আমরা কনসার্টের স্টেজ-সাউন্ড-লোকেশন সব চেক করে গিয়েছি। এটা বরাবরই করার চেষ্টা করি আমরা।’     
এদিকে এই বিষয়ে আইয়ুব বাচ্চুর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে কনসার্টের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ওয়ান মোর জিরো’র ব্যস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার দর্শক হবে। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে চারগুণ বেশি। এদিন কম হলেও দুই লাখ দর্শক সমাগম ছিল। ফলে কনসার্ট ও শিল্পীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশের সহযোগিতা নিয়েও শেষদিকে আমরা কনসার্টের নিরাপত্তা বেষ্টনি রক্ষা করতে পারছিলাম না। মূলত, সেই কারণে পূর্ব নির্ধারিত সময় ঠিক ছয়টার মধ্যেই কনসার্টটি সমাপ্ত করতে হয়েছে। যার ফলে শুধু বাচ্চু ভাই নয়, আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন ফারজানা মুন্নিও তার সমাপনী বক্তব্য রাখতে পারেননি।’
তাপস আরও বলেন, ‘শাহবাগ-মৎস ভবন এলাকার ভয়াবহ যানজট ছিল এদিন। বাচ্চু ভাইয়ের মতো জেমস ভাইও দেড় ঘণ্টা আটকে ছিলেন। যথাসময়ে শিল্পীদের পৌঁছানোর জন্য আমরা তিনটি মটরসাইকেলও রেখেছি। যখন জানলাম তারা জ্যামে আটকে আছেন সেগুলো জেমস ভাই ও বাচ্চু ভাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত বাচ্চু ভাইয়ে কাছে মোটরসাইকেলটি পৌঁছাতেই পারেনি বলে জেনেছি। যার কারণে তিনি পৌঁছানোর আগেই কনসার্ট শেষ করার সময় হয়ে গেছে। আবার পৌঁছানোর পর বাচ্চু ভাই পুলিশকে অনুরোধ করেছিলেন অন্তত দুটি গান গাওয়ার। কিন্তু নিরাপত্তার চিন্তা করে সেটা আর সম্ভব হয়নি। পরে আমি বাচ্চু ভাইয়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বাড়তি সময় দিতে পারেনি বলে পুলিশও দুঃখ প্রকাশ করেছে। আসলে আমরা সেদিন সবাই যানজটের শিকার হয়েছি। এখানে কারও কোনও গাফিলতি নেই।’
এদিকে দেরি বিষয়টির উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি চিরকুটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাপস জানান, জেমস যানজটে আটকে থাকার কারণে তার আগের ব্যান্ড চিরকুটকে অতিরিক্ত ২টি গান গাইতে হয়েছে। মঞ্চে গাইছেন চিরকুটের সুমি
প্রসঙ্গত, গৌরবময় বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর গানে-সুরে উদযাপন করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই কনসার্টটি দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এতে জেমসের পাশাপাশি পারফর্ম করে ব্যান্ড চিরকুট, ভাইকিংস এবং শূন্য। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।


/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানে আবার আমন্ত্রিত ঢাকার ঋতি
কানে আবার আমন্ত্রিত ঢাকার ঋতি
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
মনে হয়নি দেশের বাইরে আছি: যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্থ 
মনে হয়নি দেশের বাইরে আছি: যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্থ 
কাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সিনেমা সমালোচনাকাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সম্প্রচারের দুই দশকে...
সম্প্রচারের দুই দশকে...