X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পর্দায় তিন গোয়েন্দা, দর্শকরা কাকে জেতাবেন?

কলকাতা প্রতিনিধি
৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:৪৩আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১৩

গোয়েন্দা জনপ্রিয়তার বিচারে এ পার বাংলার বাঙালিদের কাছে বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের তিন সেরা গোয়েন্দা- ব্যোমকেশ বক্সী, কিরীটী রায় ও প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা। ব্যোমকেশের স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, কিরীটীকে গড়েছিলেন ডাক্তার নীহাররঞ্জন গুপ্ত এবং ফেলুদা সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি। শুক্রবার এই তিন গোয়েন্দাকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্স ও প্রেক্ষাগৃহে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন‌ দর্শকেরা।

শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘কিরীটী রায়’। যাতে নাম ভূমিকায় রয়েছেন চিরঞ্জিত। এ মাসের ১৬ তারিখ একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে অরিন্দম শীলের ‘ব্যোমকেশ পর্ব’ ও সন্দীপ রায়ের ‘ডবল ফেলুদা’। দু’টি ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যথাক্রমে আবীর চট্টোপাধ্যায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তী। এ দু’টি ছবি অবশ্য মাল্টিপ্লেক্স ও সিনেমা হলে চলছে। কাজেই শুক্রবার ‘কিরীটী রায়’ মুক্তি পেলে বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের তিন মূর্তিকে এক সঙ্গে সেলুলয়েডের পর্দায় দেখা যাবে। অবশ্যই তিনটি ভিন্ন ছবিতে। তবুও সিনেমার দর্শকদের কাছে এমন সুযোগ আগে কখনও আসেনি।

সন্দীপ রায় বলেন, ‘আমার কাছে এটা বাংলা গোয়েন্দা-সাহিত্যের প্রতি কুর্নিশ।’

অরিন্দম শীল বলেন, ‘এই সাহিত্য নির্ভরতা বাংলা ছবির পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ, চমকপ্রদও বটে।’

অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘যেসব চরিত্র আমরা এক সময়ে দমবন্ধ করে পড়তাম, আজ তারা সেলুলয়েডের পর্দায়। এটা ভালো লক্ষণ। কে বলতে পারে, আগামী বছর জয়ন্ত-মানিক ছবির পর্দায় আবির্ভূত হবেন না!’

জয়ন্ত-মানিকের স্রষ্টার নাম হেমেন্দ্রকুমার রায়। কালের হিসেবে ব্যোমকেশের চেয়েও প্রাচী‌ন ওই গোয়েন্দা জুটি।

গত দু’তিন বছর যাবৎ গোয়েন্দা কাহিনি বা রহস্য উপন্যাস নির্ভর ছবি টালিগঞ্জে, মানে কলকাতার সিনেমা পাড়ায় তৈরি হচ্ছে। গত শতকের পাঁচের দশকে অজয় করের ‘জিঘাংসা’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘হানাবাড়ি’, ছয়ের দশকের গোড়ায় প্রেমেন্দ্র মিত্রেরই পরিচালনায় ‘চুপি চুপি আসে’ সাড়া ফেলে দিয়েছিল।

পরে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিড়িয়াখানা’ নিয়ে খোদ সত্যজিৎ রায় ছবি তৈরি করেন। গোয়েন্দা ব্যোমকেশের ভূমিকায় সেখানে ছি‌লেন স্বয়ং উত্তমকুমার। আর নিজের কাহিনি ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ সত্যজিতের ফেলু হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিতের পর তার পুত্র সন্দীপ রায় ফেলুদাকে নিয়ে ছবি তৈরি শুরু করার গোড়া থেকেই সব্যসাচী চক্রবর্তী ফেলু হচ্ছেন। তবে মাঝখানে দু’বছর আগে ‘বাদশাহী আংটি’ ছবিতে বদল এনেছিলেন সন্দীপ। সেবার ফেলুর ভূমিকায় তিনি নামান আবীর চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি আবার একই সঙ্গে ব্যোমকেশও। কিরীটীকে নিয়ে আগে সেভাবে ছবি হয়নি। উত্তমকুমার ওই চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অভিনয় করবেন বলে নীহাররঞ্জ‌ন গুপ্তের কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেন। কিন্তু পেশায় চিকিৎসক, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নীহারবাবু সটান বলে দেন, কিরীটীর ভূমিকায় তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া অন্য কারও কথা ভাবতে পারেন না, তাই নিজের কাহিনি থেকে ছবি করার স্বত্ব তিনি উত্তমকুমারকে দেবেন না।

এ বছরের মাঝামাঝি ‘কিরীটী ও কালো ভ্রমর’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল বটে, তবে সেখানে আমাদের কলেজ-জীবনে বইয়ে পড়া ও শৈল চক্রবর্তীর (চিরঞ্জিত ওরফে দীপক চক্রবর্তীর বাবা এই শৈলবাবু) তুলিতে রূপ দেওয়া কিরীটীর সঙ্গে কোনও মিল খুঁজে পাইনি। দেখলাম এই কিরীটী জিনস পরে, মোবাইলে কথা বলে আবার মাওবাদীদের সঙ্গে একে ফর্টি সেভেন নিয়ে লড়াই করে! কিরীটী মূলত গত শতকের পাঁচের দশকের গোয়েন্দা। অথচ সেই ছবি ‘পিরিয়ড পিস’ করার কোনও তাগিদ পরিচালকের ছিল না। আমার মনে হয়েছে, কিরীটী রায় নামটাই শুধু ব্যবহার করেছেন পরিচালক, এমনিতে ওই গোয়েন্দার যে কোনও নামই হতে পারত। বরং কিরীটীর চিরশত্রু কালো ভ্রমর যেন নীহারবাবু বর্ণিত ভিলেনের মতো ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর।

তবে অনিকেতের ‘কিরীটী রায়’-এর পোস্টার অন্তত বলছে, এই কিরীটী বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা। মাথায় হ্যাট, গায়ে ওভারকোট ও ঠোঁটে পাইপ। চিরঞ্জিতের চেহারাও কিরীটীর মতো ভারিক্কি। অনিকেত অবশ্য জানাচ্ছেন, শৈল চক্রবর্তীর অলঙ্করণে কিরীটীর কোনও গোঁফ ছিল না। তবে চিরঞ্জিতের মুখাবয়বের সঙ্গে গোঁফ মানানসই হবে বলে মনে করে ছবিতে কিরীটীকে গোঁফ দিয়েছেন পরিচালক।

তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে এই মাতামাতির মধ্যেও চিরঞ্জিত বলেন, ‘বাংলা সাহিত্য থেকে অনেক কিছু নেওয়ার আছে। সেখানে শুধু গোয়েন্দারা চলে এ‌ল! এ দিকটাও আমাদের ভাবতে হবে।’

আবীর বলেন, ‘সাহিত্য-নির্ভর বাংলা ছবি টলিউডে আবার রমরমিয়ে হচ্ছে, এটা অবশ্যই ভালো কথা। কিন্তু শুধু গোয়েন্দা-সাহিত্য বা রহস্য কাহিনির মধ্যেই এটা সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমরা যেন শুধু গোয়েন্দা-নির্ভর না হয়ে পড়ি।’

সব্যসাচী বলেন, ‘গোয়েন্দা কাহিনি ছাড়াও ছবি করার মতো আরও বহু উপাদান আছে বাংলা সাহিত্যে।’

সেলুলয়েডের পর্দায় তিন গোয়েন্দার মধ্যে বাজিমাত করলেন কে? সেটা আরও কয়েক দিন পর বোঝা যাবে। কিন্তু সেই লড়াইয়ে না গিয়ে তিন গোয়েন্দা আপাতত বাংলা ছবির উৎকর্ষের কথা ভাবছেন, সেটাই সম্ভবত ইংরেজি নববর্ষের আগে টলিউডের সব চেয়ে বড় পাওনা।

/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)