X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা ট্রিবিউনকে আবারও ইন্দ্রনীল: হ‌ুমায়ূন পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বরও ফারুকী দিয়েছেন (অডিও)

বিনোদন রিপোর্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:১০আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০০

ফারুকী ও ইন্দ্রনীল ‘ডুব’ নিয়ে বিতর্কে আবারও মুখ খুলেছেন কলকাতার সাংবাদিক ইন্দ্রনীল রায়। তিনি বলেন,  ‘‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ক্লিয়ার করে বলেছেন, ‘এটা হ‌ুমায়ূনের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, যেমনটা বায়োপিকে হয়। তবে ছবির শুরুতে লেখা থাকবে, এটি জীবিত বা মৃত কোনও ব্যক্তির জীবন থেকে নেওয়া নয়।’ এমনকি, হ‌ুমায়ূন পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন নম্বরও তিনি সরবরাহ করেছেন।’’ ইন্দ্রনীল রায় প্রথম প্রতিবেদন করেছিলেন, হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়েই ‘ডুব’ চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছে! কিন্তু পরিচালক ফারুকী দাবি করে আসছেন, তিনি কোথাও বলেননি হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকে ছবিটি করা হয়েছে। ফারুকী সম্পর্কে ইন্দ্রনীলের মন্তব্য ‘ফারুকী মানুষটা ক্লিয়ার নন। এতদিন মিডিয়াকে ব্যবহার করে এখন নিজেই ভয় পেয়ে গেছেন।’ সোমবার বিকালে আবারও ইন্দ্রনীলের টেলিফোন সাক্ষাৎকার নেয় বাংলা ট্রিবিউন। সাক্ষাৎকারটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:

বাংলা ট্রিবিউন: কিভাবে জানতে পারলেন যে, ‌‘ডুব’ ছবিটি কথাসাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনের একটি অংশ নিয়ে? প্রথম খবরটি কোথায় পেলেন?

ইন্দ্রনীল: আমি প্রথম জানতে পারি এসকে মুভিজের হিমাংশু ধানুকার কাছে। তারা বাংলাদেশে বহু ছবি যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করছেন। আমি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে চিনতাম না। তারাই আমাকে ফারুকীর সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। তারা জানায়, এমন একটি জিনিস হচ্ছে! আপনি কি ইন্টারেস্টেড হবেন? এটা ছিল সোমবার। আমাদের সে সময় পাতা হচ্ছে বুধবারে (আনন্দবাজারের সাপ্তাহিক বিশেষ আয়োজন)। আমি তাকে বলি, আপনি যে করেই হোক খবরটা তিন-চার দিন আটকিয়ে রাখুন। আমাকে ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলান। তার অফিস থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে ফারুকী ভাইকে ফোন দেন ধানুকা। সেখানেই আমি প্রথম তার (ফারুকী) সঙ্গে কথা বলি। ফারুকী মানুষটা কিন্তু ক্লিয়ার নন! নিজের মতো করে মিডিয়া ইউজ করতে করতে এখন নিজেই ভয় পেয়ে গেছেন।

তবে সে মুহূর্তে তিনি (ফারুকী) বলেন, আমরা কোথাও নাম ( হ‌ুমায়ূন) নেইনি। তবে এটি হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকেই নির্মিত।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী বললেন?

ইন্দ্রনীল: আমি বললাম, এটাকে কোনোভাবে একটু চেপে রাখুন। তবে তিনি বললেন, এখানের লোকেরা (মিডিয়া) কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। খবরটা কি আগে আপনাদের ওখানে বের করা যায়? আমি বললাম, এখন আমি কোনোভাবেই বের করতে পারব না। শুক্রবার অবধি ওয়েট করুন। তিনি বললেন, খবরটা হ‌ুমায়ূন আহমেদ-বিষয়ক, তাই বের (ঢাকায় প্রকাশ) হয়ে যেতে পারে! তবু আমি পাল্টা বলি, আপনি কিছু একটা করে চেপে রাখুন।
এরপর দিন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। আমি তার কাছ থেকেই নম্বর পাই হ‌ুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শীলা আহমেদ ও তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলি। নিউজটা বুধবারে লেখা হয়। আর প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবারে। হুমায়ূন আহমেদ, ফারুকী ও ইরফান

বাংলা ট্রিবিউন: কেন তিনি আপনাকে নম্বরগুলো দিলেন?

ইন্দ্রনীল: কারণ আমি তাকে বলেছিলাম, দেখুন এ স্টোরি আমি তো আপনার কথায় শুধু লিখব না। আমার আরও কথা বলতে হবে। তাদের (পরিবারের সদস্যদের) সঙ্গে কথা বলতে হবে। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি আপনাকে তাদের নম্বর দিচ্ছি। এ সম্পর্কিত সব তথ্যই ফারুকী নিজে আমাকে দিয়েছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: হ‌ুমায়ূন আহমেদ বিষয়ে আপনাকে ফারুকী আর কী বলেছিলেন?

ইন্দ্রনীল: ক্লিয়ার বলেছেন, এটা হ‌ুমায়ূনের  জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেওয়া। যেমন বায়োপিকে হয়। তবে ছবির শুরুতে একটা লেখা যাবে, এটি জীবিত বা মৃত কোনও ব্যক্তির জীবন থেকে নেওয়া নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: যোগাযোগটা তাহলে এসকে মুভিজের মাধ্যমে?

ইন্দ্রনীল: হ্যাঁ, এটি মূলত এসকে মুভিজের দৌলতেই ঘটেছে। তারাই আমাকে লিংকআপটা করে দেয়।

বাংলা ট্রিবিউন: আচ্ছা পর দিন কে প্রথম যোগাযোগ করেন। আপনি না ফারুকী?

ইন্দ্রনীল: না, না আমিই করেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি বলেছিলেন, ফারুকী আপনাকে তাড়া দিচ্ছিলেন! কিন্তু কেন?

ইন্দ্রনীল: এক্সক্লুসিভ কিছু হলে তখনই তা আমরা প্রকাশ করি। এখন যদি অন্য কোথাও খবরটি যায়, তাহলে তো আর এক্সক্লুসিভ থাকে না। তাহলে তো আমরা খবরটি করব না। তাই তিনি তাড়া দিচ্ছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: তার অর্থ দাঁড়ায়, তারাই আপনাকে খুঁজে বের করেছিল খবরটি করার জন্য!

ইন্দ্রনীল: আমি মুস্তফা সরয়ার ফারুকীকে চিনতাম না। আমি জানতামও না এ ছবিটি হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে যখন এ ছবিটির প্রেস কনফারেন্স হয়েছিল, সে সময় আমার সে পত্রিকার কেউ সেখানেই যাননি। মূলত ফারুকীই আমাকে খুঁজে বের করেন। যখন ফারুকী প্রথম কথা বলেন, তখন তো তিনি ঢাকা থেকে কথা বলেন। তার পরদিন বোধহয় তিনি আমেরিকা যাচ্ছিলেন।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে ইন্দ্রনীলের কথোপকথন: 

বাংলা ট্রিবিউন: পরের কথাগুলো কী হোয়াটসঅ্যাপে হয়েছে, নাকি ফোনে?

ইন্দ্রনীল: ফোনে হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার স্টোরিতে বেশ বর্ণনা আছে, নায়ক কিভাবে কথা বলেন, হ‌ুমায়ূনকে বোঝার জন্য ইরফান খান অনেক বইপত্র পড়েছেন, এগুলো তথ্য আপনাকে কে দিলেন!

ইন্দ্রনীল: অবশ্যই ফারুকী দিয়েছেন। নইলে আমি জানব কী করে? আপনিই বলুন। আমার পক্ষে তো জানা সম্ভব নয়। এখানে টালিগঞ্জে যে অভিনেত্রী ছবিটিতে কাজ করেছেন—পার্নো মিত্র, তার সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, এটি অবশ্যই হ‌ুমায়ূনের জীবন নিয়ে ছবি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো নিজেই পার্নো মিত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন?

ইন্দ্রনীল: হ্যাঁ। সে যেহেতু টালিউডের, সেহেতু তার নম্বর আমার কাছে আছে। সে আমার বন্ধুও। আমি তাকে বলছিলাম, এটা আসলেই হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনী অবলম্বনে? পুরো স্ক্রিপ্ট আসলে কাউকেই দেয়নি ফারুকী। পার্নো বললো, এটি অবশ্যই হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনী অলম্বনে। সেটে আমাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। আমি নিশ্চিত এটা হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত।

বাংলা ট্রিবিউন: আমার তো মনে হয়, ফারুকী সাহেব আপনার সঙ্গে আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। চরিত্র, পাণ্ডুলিপি; এগুলোও।

ইন্দ্রনীল: এসব তথ্য ফারুকীই দিয়েছেন। তিনিই আমাকে বলেন, ইরফান খান ছবিটি নিয়ে অসম্ভব উত্তেজিত। এজন্য তিনি হোমওয়ার্কও করছেন। আর এ তথ্যটি কিন্তু এখানকার প্রডিউসার হিমাশুও আমাকে দেন। 

বাংলা ট্রিবিউন:  ইরফানের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?

ইন্দ্রনীল: না, ইরফানের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। 

বাংলা ট্রিবিউন: এই স্টোরিটা করার পর আপনার সঙ্গে পরবর্তী সময় ফারুকী কি যোগাযোগ করেছিলেন? কোনও বিষয়ে কথা বলেছিলেন? আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির কোলাজ

ইন্দ্রনীল: এরপর হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ হয়েছে। আমি যখন আনন্দবাজার ছেড়ে দেই, তখনই ফারুকী যোগাযোগ করেছিলেন। হাই-হ্যালো টাইপ যোগাযোগ হয়েছে। ছবি সংক্রান্ত কোনও কথা হয়নি। 

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের এখানে আপনার একটি সাক্ষাৎকার ১৮ ফেব্রুয়ারি ছোট করে প্রকাশিত হয়েছে। এটির বিষয়ে আপনাকে কিছু বলেছেন ফারুকী?

ইন্দ্রনীল: হ্যাঁ, এটি তিনি দেখেছেন।  আমাকে লিংকটা পাঠিয়েছিলেন। তিনি লিংকটা দিয়ে বললেন, ইন্দ্রনীল দেখুন, এখানের কাগজে কী খবর বেরিয়েছে! এটুকুই! 

বাংলা ট্রিবিউন: সেখানে কি কোনও ভুল তথ্য ছিল?

ইন্দ্রনীল: না, না। কোনও ভুল নেই। একদম কোট-আনকোট করেছেন। ঠিক ঠিক ছাপিয়েছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু একটি কথা, ফারুকী কিন্তু বার বার বলেছেন, আপনার সঙ্গে তার ইন্টারভিউতে তিনি কিছু বলেননি। হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনী নিয়ে যে ছবিটি হচ্ছে, এ ব্যাপারে কিছু বলেননি!

ইন্দ্রনীল:  সেটা ফারুকী কেন এখন বলছেন, তিনিই বলতে পারবেন। আমি ১৫-১৬ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। আমাকে একটা স্টোরি আগবাড়িয়ে দেওয়া হলো, তার কারণ সেটা হ‌ুমায়ূন আহমেদ বলেই! আমার মনে হয়, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তারা (ফারুকী) এটা (ডুব ছবি হ‌ুমায়ূনের  জীবনী থেকে নেওয়ার বিষয়টি) অস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ডুব-এর সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়া প্রাচী, ইরফান খান, তিশা ও পার্নো মিত্র। (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)  

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কি মনে হয়, তারা এ নিউজটির জন্য বেশ পরিকল্পিতভাবে আপনাকে ঘিরে ধরেছিল ওই সময়?

ইন্দ্রনীল: হ্যাঁ, অবশ্যই। এ স্টোরিটা আমার কাছে লোপ্পা ক্যাচের মতো এসে পড়েছিল। আমার সাংবাদিকতার বিচক্ষণতায় বলে, এটি একটি বিরাট স্টোরি। আমি সঙ্গে সঙ্গে এটি করিও। আজ যদি তিনি (ফারুকী) ডিনাই করতে চান, তবে এটি বুঝতে হবে, কোন সময়ে এসে তা করা হচ্ছে? যখন ঝামেলা শুরু হচ্ছে, তখনই ডিনাই করা হচ্ছে।  তখন কিন্তু এটা (আনন্দবাজারের সংবাদ) করার পর ফারুকী আমাকে ফেসবুকে ‘থ্যাংকস’ও জানিয়েছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: শেষ জানতে চাওয়া, সে ‘ধন্যবাদ’ সংক্রান্ত মেসেজটিতে আর কী ছিল?

ইন্দ্রনীল: আপনি তার ফেসবুকে গেলে ৪ অথবা ৫ নভেম্বর একটু স্ক্রল করে যান, এই ‘থ্যাংকস’টা আপনি দেখতে পারবেন। প্রকাশ্যেই তিনি এই নিউজ শেয়ার করেছিলেন!

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক ইন্দ্রনীল রায় দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতায় যুক্ত। তার বাইনেমে ‘হ‌ুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে ইরফান?’— শিরোনামের সংবাদটি ৪ নভেম্বর প্রকাশ করে ভারতের অন্যতম পত্রিকা আনন্দবাজার। তখন এ ইন্দ্রনীল রায় আনন্দবাজারে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কাজ করছেন দেশটির সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায়। 

আরও পড়ুন:  আনন্দবাজারকে ফারুকীই জানান- ‘ডুব’ হ‌ুমায়ূনের জীবন থেকে নেওয়া

/এম/ এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!