X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

একুশের গানের সূচনা

শাওন মাহমুদ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:০১আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:২২

শহীদ আলতাফ মাহমুদ
আলতাফ মাহমুদের নতুন সুরে একুশের গানটির পরিবেশনের সময়কাল নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ’৫৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আলতাফ মাহমুদ নতুন সুরারোপে মনোনিবেশ করেন এবং ১৯৫৪ সালেই আলতাফ মাহমুদ তার দেওয়া নতুন সুরে নিজেই গানটি পরিবেশন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে।

ইতিহাসকে সামনে রেখে সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে লেখক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস এভাবে লেখেন – ‘আব্দুল লতিফের সুরটি মন্দ ছিল না। কিন্তু কিসের যেন অভাব ছিল তাতে। ...আলতাফ মাহমুদের নতুন সুরে জনতার কর্ণে যেন মধু ঢেলে দিল। কী ভীষণ মাদকতা, কী ভয়ঙ্কর আকর্ষণ সে গানের! গানের এক একটি কলি তার কণ্ঠে ধ্বনিত হলেই শ্রোতা যে অবস্থায় এবং যেখানেই থাকুক নিজের মন নিজের কাছে ধরে রাখতে পারেন না। এই গানের সুর নিয়ে আব্দুল লতিফ নিজে কোনওদিন বলেননি এটি আমর সুর; বরঞ্চ আলতাফ মাহমুদের সুরের প্রশংসা করে নিজের আরোপিত সুরটি প্রত্যাহার করেন যা কালের গর্ভে বিলীন- বহু অনুসন্ধান করেও আব্দুল লতিফের সুরের সন্ধান করা যায়নি। আলতাফ মাহমুদ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ কবিতায় কালাতীত ধ্রুপদি সুরারোপের পর আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত কবিতাটি বাংলাদেশে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে পরে।
প্রথমদিকে আলতাফ মাহমুদ নিজেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুরো কবিতাটি গেয়ে পরিবেশন করেছেন। এর পর দু-তিনবার নিজের সুরকে সামান্য পরিবর্তন করেন। যতদূর জানা যায়, তৃতীয় সুর করার পর বাংলাদেশের গণসংগীতের দুই দিকপাল শেখ লুতফর রহমান এবং আব্দুল লতিফের কাছে গিয়েছিলেন মতামত জানবার জন্য । তারা দুজনে আলতাফ মাহমুদের সুরকরা গানকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে মতামত দিয়েছিলেন। বর্তমানে যে সুরে এই গানটি পরিবেশন করা হয়, তা তৃতীয় মডিফিকেশনের ফল। শুধু যে গানের সুর পরিবর্তন করেছেন, তা নয়; কবিতাটির শেষের ছয়টি চরণও বাদ দিয়েছেন। তবে তিনি আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অনুমুতি নিয়ে বাদ দিয়েছিলেন। শহীদ আলতাফ মাহমুদ চত্বরে শাওন মাহমুদ। ছবি সংগৃহীত

একুশের গান:
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি

জাগো নাগিনীরা জাগো জাগো নাগিনীরা জাগো জাগো

জাগো কালবোশেখীরা শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগনে তবু তোরা পার পাবি তবু তোরা পার পাবি
না, না, খুনে রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই

একুশে ফেব্রুয়ারী একুশে ফেব্রুয়ারী

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন

এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো

সেই আঁধারে পশুদের মুখ চেনা

তাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের বুকে দেশের দাবীকে রুখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয় দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা বাঙ্গালীর অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারী একুশে ফেব্রুয়ারী

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারী
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারী
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারী

 

লেখক: শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
সহযোগিতায়: শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন

/এম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল