ভারতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের বাসায় এক বছরের ব্যবধানে আবার গেলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকা রুনা লায়লা। সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের পেডার রোডে লতার বাড়ি প্রভুকুঞ্জে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
প্রভুকুঞ্জে বসার ঘরে ঢুকেই লতার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন রুনা। তখন তাকে জড়িয়ে ধরেন লতা। আড্ডা শেষে রুনাকে একটি শাড়ি, নিজের আত্মজীবনী, ভাগ্নীর লেখা বই এবং নিজের গানের সিডি উপহার দেন তিনি। আর তাকে একটি জামদানি শাড়ি উপহার দেন রুনা। তারা একসঙ্গে বেশকিছু ছবিও তুলেছেন।
লতা মঙ্গেশকরের বাসায় যাওয়া প্রসঙ্গে সার্কের শুভেচ্ছদূত রুনা লায়লা বাংলা ট্রিবিউনকে সোমবার দিবাগত রাত দেড়টায় মোবাইল ফোনে বলেছেন, ‘তিনি (লতা) একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তার সঙ্গে দেখা করতে পারা আমার কাছে বরাবরই অনেক সম্মানের ব্যাপার। এবার তার বাসায় আড়াই ঘণ্টা ছিলাম। ২৭ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় গিয়ে বেরিয়েছি রাত ৮টায় (ভারতীয় সময়)।’
এ সময় আরও ছিলেন রুনার স্বামী অভিনেতা আলমগীরের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর, লতার ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের ছেলে বায়েজনাথ মঙ্গেশকর ও ভাগ্নী রচনা। আঁখিকেও বই আর নিজের গানের সিডি উপহার দিয়েছেন লতা।
লতার সামনে যাওয়ার স্বপ্নটা সত্যি হওয়ায় রুনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আঁখি আলমগীর। লতার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই অস্ট্রেলিয়ায় গাইতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও তা ফিরিয়ে দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সোমবার (২৭ মার্চ) রাতে আঁখি লিখেছেন, ‘অবশেষে দেবীর সঙ্গে দেখা হলো। এক ও অদ্বিতীয় লতা মঙ্গেশকরকে ছুঁয়ে দেখলাম। তার সঙ্গে আড্ডা দিলাম, আশীর্বাদ নিলাম। হাসিখুশি সময় কেটেছে। আনন্দে চোখে জলও এসেছে। এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছি।’
রুনার মেয়ে তানি লায়লার প্রশংসাও করেছেন লতা। এক ভিডিওতে ৮৭ বছর বয়সী এই শিল্পী বলেন, “তানি, আপনার গান শুনেছি। আপনারা মা-মেয়ে দু’জনই খুব ভালো গান করেন। সবসময় ভালো থাকুন এই দোয়া করি। নমস্কার।”
লতার শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে ধন্য তানি ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাকে। আঁখির কাছ থেকে ভিডিওটি পেয়ে বিস্মিত, আবেগপ্রবণ আর নির্বাক হয়ে যান তিনি! ফেসবুকে তানি লিখেছেন, ‘আমি সত্যিই ভাগ্যবতী। এক ও অদ্বিতীয় লতা মঙ্গেশকরজি, প্রার্থনা ও অনুপ্রেরণার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি হাজার বছর বেঁচে থাকুন!’
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ভারতের মুম্বাইস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের আয়োজনে ২৬ মার্চ এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন রুনা। তার সঙ্গে আছেন কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। তারা উঠেছেন ভারতের তাজ প্যালেস হোটেলে। একই আয়োজনে কণ্ঠশিল্পী মিতালী সিং (মিতালী মুখার্জি) আর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নাবিসের স্ত্রী গায়িকা ও সমাজকর্মী অম্রুতা ফাড়নাবিস ছিলেন।
এদিকে কলকাতায় ইন্দো-বাংলা মৈত্রী পুরস্কার পাচ্ছেন তারকা দম্পতি আলমগীর ও রুনা লায়লা। আগামী ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতার হোটেল ওবেরয়ের গ্র্যান্ড বলরুমে তাদের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে।
গত বছরও মার্চেই মুম্বাইয়ে দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ডসের বিচারক হিসেবে কাজ করার ফাঁকে লতার বাসায় গিয়েছিলেন রুনা । তার আগে ২০১১ সালে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন সঙ্গে ছিলেন আলমগীর।
মুম্বাইয়ে ১৯৭৪ সালে লতার সঙ্গে রুনার প্রথম দেখা হয়। ওই বছর ভারতীয় বিদ্যাভবনে প্রথমবার সংগীত পরিবেশন করতে যান তিনি। এর পরের বছর প্রথমবার হিন্দি ছবির জন্য গান করেন রুনা। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন কল্যাণ-আনন্দ।
আশির দশকে কলকাতায় সল্টলেক স্টেডিয়ামে জ্যোতিবসুর আয়োজনে তিন দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ছিল রুনার গান। শেষ দিন লতা ও তার বোন আশা ভোঁসলের গান শুনতে উপস্থিত ছিলেন রুনা। পরে জ্যোতিবসুর অনুরোধে মঞ্চে উঠে দুই বোনের পা ছুঁয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রুনা।
/জেএইচ/এমএম/