X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
৩ পেরিয়ে বাংলা ট্রিবিউন

নায়িকা সংবাদ

ওয়ালিউল মুক্তা
১৩ মে ২০১৭, ১০:৩০আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৭:২৯

ওয়ালিউল মুক্তা গলার স্বর একেবারে খাদের কিনারায় নামিয়ে এনে বললেন, ‘আজ দুপুরে কোথায় খাবেন? দুপুরের খাবারটা গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভালোমন্দ কিছু খাব। স্পন্সর আমি।’
স্বরটা আর একটু নরম করে ফেললেন সে সহকর্মী। বললেন, ‘শুনলাম, অফিসে অতিথি কে কে যেন আসছেন!’
নায়িকাদের খবর বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী। ছড়িয়ে পড়ে। অফিসে নায়িকা এসেছেন। তাই দু’একজনের চাপাস্বর তৈরি হয়। তারা কাছে আসেন। খাবার-দাবারের প্রস্তাবও আসে। ‘না’ করতে পারি না। একসময়ে পর অবাক হয়ে লক্ষ করি, খাবার দাওয়াতের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। কারণ নায়িকাদের সঙ্গে ফেসবুক বন্ধু হয়ে গেছেন এখন অনেকেই।
এ তো গেল বিনোদনে কাজ করার সুবিধা। অসুবিধাও আছে। তাও নায়িকাকেন্দ্রিক!
সহকর্মী থেকে শুরু করে আশপাশের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, বিনোদন সাংবাদিকরা শুধু নায়িকাদেরই খোঁজ রাখেন। শুধু তাই নয়, তাদের বাজারের ফর্দ থেকে শুরু করে বাড়ির আসবাবপত্র পর্যন্ত আমাদের জানাশোনার মধ্যে থাকে।
ছোট মাপের একটা উদাহরণ দিই। এক অভিনেত্রী হাত দিয়ে ভাত খান না! এ কথাটা তিনি একটি টক শোতে বলেছেন। এরপর আমার কাছের এক বন্ধুর সমস্ত আগ্রহ গিয়ে ঠেকল নায়িকার হাতের দিকে। সে নিজে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে একটা প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে থাকল, ‘কেন নায়িকা হাত দিয়ে ভাত খান না!’
এরপর তার ‘হাত’ থেকে নিজে উদ্ধার পেতে ফোন দিলাম নায়িকাকে। জনপ্রিয় সে নায়িকা যুক্তি, কথা ও হাসি ব্যবহার করে ঝোঝালেন ঘটনাটি। ‘আসলে আমার হাতের নখ খুবই ছোট। নখে গোড়ায় একটু অ্যালার্জির মতো আছে। যখন তরকারির ঝোল সে নখের ফাঁকে যায়, আঙুল জ্বালা করে। তাই আম্মু আমাকে খাইয়ে দেন অথবা আমি চামচ দিয়ে খাই।’ এরপর নায়িকার এ ভাষ্যটির ফোন রেকর্ড আমি বন্ধুকে শোনালাম। সে শান্ত হলো, আমি নিস্তার পেলাম।
এ দুই ঘটনা সামনে আনার উদ্দেশ্য এই নয় যে, বিনোদন সংবাদকর্মী হিসেবে সব নায়িকার আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক! লেখালেখির সুবাদে দু’একজনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়, এটা ঠিক। তারচেয়েও বড় সত্য হলো, অনেকে ধরেই নেন বিনোদনের লোক মানেই ‘নায়িকাকেন্দ্রিক’ নানা কর্মকাণ্ড। এই একটি বিষয় দিয়ে বিনোদনের পুরো কাজটি ঢেকে দেওয়া হয়।
নিজে বিনোদনে কাজ করি বলে বলছি তা নয়, সত্যি বলতে এ বিভাগের মানুষগুলোকে অনেক কিছু সামলে কাজ করতে হয়। অভিনয়, সংগীতশিল্পী ছাড়াও তাদের গাড়িচালক, দেহরক্ষী, সহকারী- সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। ফোনে, এসএমএস-এ, কখনও সরাসরি গিয়ে; তপ্ত রোদে দৌড়ঝাপ করে, কখনও নিজে এডিটিংয়ে বসে এ কাজগুলো তুলে আনতে হয়। তারচেয়েও বড় হলো-নিয়মিত এ মানুষগুলো ও বিষয়কে পরিচর্যা করতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা রিপোর্টারের চেয়ে বেশি আবার কখনও সাব-এডিটরের ভূমিকাও ছাড়িয়ে যেতে হয়।
কিন্তু হতাশাও আছে। সমাজের অনেককে বিনোদিত করা সংবাদের এ বিভাগটি যেন হাসির খোরাক।
দুঃখ হয়, দীর্ঘশ্বাস হয়। এদেশের সংবাদমাধ্যমের পাঠকদের কাছে বিনোদন বিভাগ অন্যতম জনপ্রিয়। সেটা হোক ইন্টারনেটের হিট বা আলোচনায়। আবার কর্মপরিসরের দিকেও একটি কথা হলফ করে বলতে পারি, এদেশের বিনোদন বিভাগ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের চেয়ে খুবই শক্তিশালী। বিশ্বের অনেক দেশেই এন্টারটেইনমেন্ট সাংবাদিকরা সরাসরি তারকার ‘কমেন্ট’ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। তারা অনেক সময় তারকার বন্ধু ও পরিজনের মন্তব্যের ওপর ভর করে খবর চালিয়ে দেন। সেদিক দিকে আমাদের বিনোদন সাংবাদিকতা অনেক উঁচু দরের। এদেশের সাংবাদিকরা শুধু সংবাদ উপস্থাপনে নয়; তারকা-শিল্পীদের বিভিন্ন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সহাবস্থান করেন, সেটা সহমর্মিতায় বা সহকাজে। আবার এমনটা ঘটে সাংবাদিকদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত আয়োজনেও। এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সাংবাদিক ও তারকাদের অবস্থান বিশ্বের আরও কোনও দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই। আর অবশ্যই তা সম্মানজনকভাবে।
অথচ দুঃখের কথা, দেশের অনেক সংবাদমাধ্যমেই বিনোদন বিভাগ কিছুটা হলেও বঞ্চিত, অবহেলিত। আমরা হয়তো বিনোদন থেকে লভ্যাংশটাই নিচ্ছি, বড় স্বার্থপরের মতো কিছু দিচ্ছি না।
আমি আরও একটি কথা হলফ করে বলতে পারি, এ দিক দিয়ে বাংলা ট্রিবিউন বিনোদনের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী। তা আমরা বুঝতে পারি সহকর্মীদের অপরিসীম ভালোবাসা ও আগ্রহে। সামনে যাক বাংলা ট্রিবিউন। ওয়ালিউল মুক্তা
লেখক: সংবাদকর্মী, বিনোদন বিভাগ

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!