X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
৩ পেরিয়ে বাংলা ট্রিবিউন

মনে হচ্ছে ইশকুলের প্রথম বেঞ্চের সেই কোণাটায় বসে আছি

মাহমুদ মানজুর
১৩ মে ২০১৭, ১৩:১৮আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৭:২৬

মাহমুদ মানজুর আমি ও আমরা ক্রমশ বেড়ে উঠছি- ভাবতেই রোমাঞ্চিত হই। অথচ এই ‘বড়’ হওয়ার আশায় আশায় যেন বসে ছিলাম বহুকাল।

পরিবার-শিক্ষা-মানসিক-আর্থিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে আমি বরাবরই মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিলং করি। স্কুলের প্রথম বেঞ্চির কোণার অংশে বসা হয়নি কখনও, যেখানে ক্লাস ক্যাপ্টেন বসে থাকেন। আমার রোল নম্বর ১ হয়নি কখনও, আটকে ছিল তিন থেকে ১১-তে। দেশের সেরা কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইনি। বেসরকারি ডাকসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি! পারিবারিক জৌলুস ছিলো না। টোফেল করে ইউরোপে যাবো- সেটাও হলো না।

না, এসব নিয়ে আমার কোনও দীর্ঘশ্বাস নেই। অ্যান্ড আই অ্যাম দ্য ম্যান- হু অলওয়েজ গ্ল্যাড টু বি আ  মিডল ক্লাস মেম্বার।

তবুও এই মধ্যবিত্ত জীবন নিয়ে কিছু হতাশা তো থাকেই। হতে পারে উচ্চবিত্তের হতাশা আরও অনেক। তবে আমার হতাশাগুলোও মধ্যবিত্ত ঘরানার। যেখানে আছি সেখান থেকে আরেকটু আগে বাড়ার, মানে ‘বড়’ হওয়ার।

জানেন তো, পুঁজিবাজারের এই সূর্য্যদীঘল সময়ে মধ্যবিত্তরা বরাবরই ‘স্যান্ডউইচ লাইফ’ লিড করে। তো আমার অবস্থাও তার থেকে ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই।

সব বাদ দিলাম। শুধু মিডিয়ার গল্পটাই বলি। সাপ্তাহিক পূর্ণিমা থেকে শুরু করি। এরপর প্রদায়ক হিসেবে ইনকিলাব, যুগান্তর, ভোরের কাগজ হয়ে পাক্ষিক তারকালোক-এ স্টাফ রিপোর্টার। চার বছর অপেক্ষার পর সুযোগ আসে দৈনিক পত্রিকায় কাগজে-কলমে কাজ করার। নাম ‘আজকের কাগজ’। এখানে সাব-এডিটর। বেশিদিন থাকতে পারিনি, দেড় বছরের মাথায় ডাক পেলাম ‘দৈনিক মানবজমিন’ থেকে। সেখানে টানা নয় বছর। একটু বিবেচনা করুন- আমার প্রফেশনাল কাজের ব্যানারগুলো। যার প্রত্যেকটি বাংলাদেশ মিডিয়ার বিচারে আমার মতোই, মধ্যবিত্ত! মানে, না শীর্ষে না তলানিতে। ফলে সাংবাদিক হিসেবেও আমার জীবন এবং মান ছিল একই শ্রেণির ব্র্যাকেটে বন্দি। তাই মধ্যবিত্তের কমন আফসোস- একটু বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার, আরেকটু বড় হওয়ার। ‘মানজুর এই লেখা/নিউজ/ফিচারটা যদি আজ অমুক পত্রিকায় ছাপা হতো- তবে তুই/তোমার/আপনার যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হতো’- এরকম কথা বলে আমার ‘বড়’ হওয়ার নিভু নিভু ভাবনার আগুনে কত শতবার ফুঁ দিয়েছেন মিডিয়া সংশ্লিষ্টরা, তার কোনও ইয়ত্তা নেই।

মাহমুদ মানজুর অতঃপর হঠাৎ ওয়ান ফাইন মর্নিং ডাক এলো নতুন একটি অনলাইন পোর্টাল থেকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মানুষ আমার এই মধ্যবিত্ত মিডিয়া জীবনের প্রায় শুরু থেকেই প্রিয় বড় ভাইয়ের তালিকায় অন্যতম। তার উপর প্রতিষ্ঠানটি ‘আজকের কাগজ’ গ্রুপ এর। সেটিও একটি ভালোলাগার বিষয়। তবুও মধ্যবিত্ত জীবনের ‘দ্বিধা’ কিংবা ‘বড়’ হওয়ার নীরব বাসনা কাজ করেছে মনে। মনকে বোঝালাম- সামনে অনলাইন মিডিয়ারই দিন, লেটস গো মামা। ফলে নতুন প্রতিষ্ঠান হলেও এই ট্রেন মিস করা যাবে না। বরং মধ্যবিত্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা শেষে এবার শুরু থেকেই বরং শুরু করা যাক, হতেও তো পারে এই নতুন ট্রেনটাই আমাকে নিয়ে যাবে রোমাঞ্চকর কোনও এক গন্তব্যে।
বন্ধু মাহবুব হাসান জ্যোতি ও কাজী সোহাগের সমর্থন নিয়ে যোগ দিয়েই ফেললাম। দেখতে দেখতে এই প্রতিষ্ঠানের বয়স এখন তিন পেরিয়ে। আর আমার হলো দুই। তবে শেষ একটা বছর আমি আমার মধ্যবিত্ত সাংবাদিকতা জীবনের রোমাঞ্চকর সময় পার করছি। এই এক বছরে আমি অনুভব করছি- ক্রমশ ছোট থেকে একটু একটু করে বেড়ে ওঠার রোমাঞ্চ। এটা অদ্ভুত এক অনুভূতি। মাতৃগর্ভে একটা বাচ্চা বেড়ে ওঠার গল্পের মতোই। আগেই বলেছি- মিডলক্লাস পত্রিকাগুলোতে কাজ করে না পেয়েছি ক্রেডিট পাওয়ার বাহবা না পেয়েছি দেয়াল কিংবা গ্রাউন্ড পত্রিকার অবহেলা। সেই অর্থে পাওয়া হয়নি কিছুই। মানে- কোনও একটা সংবাদ আমি ছাপলেও যা, না ছাপলেও তা। যেন এই শহরে তাতে কারও কিচ্ছু আসে যায় না!
কিন্তু গেল দুই বছরের অভিজ্ঞতা আমাকে এই দীর্ঘকায় হীনমন্যতা থেকে টেনে বের করে এনেছে, দিয়েছে ক্রমশ ‘যোগ্যতা’ প্রমাণের চান্স। যে ইস্যুগুলো ধরতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘৃণা এবং ভালোবাসার ‘শিকার’ হচ্ছি। শীর্ষদের তরফ থেকে ফেসবুকে একদিকে ‘ব্লক’ হচ্ছি অন্যদিকে ‘ফ্রেন্ড’ রিকোয়েস্ট-ও পাচ্ছি সমানহারে। সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ কিংবা ব্রেকিং নিউজ আটকানোর তদবির, সবই ঘটছে। মানে- নিজের প্রতিষ্ঠানকে মিডিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে।
লিখতে লিখতে মনে পড়লো আমার সাবেক প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি কথা। কোনও একদিন তিনি বেশ ক্ষুব্ধ স্বরে বিনোদন বিভাগকে ডেকে বললেন, ‘পত্রিকার কোনও একটি ডিপার্টমেন্টের নামে যদি অভিযোগ কিংবা সমালোচনা না আসে- তাহলে ধরে নিতে হবে সেই বিভাগের কার্যক্রম দুর্বল। তার মানে, বিভাগ সংশ্লিষ্টরা মিডিয়ার সঙ্গে অ্যাকটিভ না।’ এবং উনার এই এথিক্সের সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। কথা প্রসঙ্গে আরেকটি কথাও এখন মনে পড়ে গেল- মতি ভাই আমাকে হঠাৎ বিদায় করেছেন কোনও এক তারকার মিথ্যা অভিযোগের সূত্র ধরেই!
যার দুই মাস আগে আমার বাবা মারা গিয়েছেন, এক মাস আগে আমি বাবা হয়েছি।
সেই অর্থে ভাবতে ভালোই লাগে- গেল দুই বছরে আমার বর্তমান সম্পাদক বরাবর অনেক অভিযোগ এসেছে। জমা পড়েছে আমার চাকরি খাওয়ার দরখাস্তও! সে হিসেবে মতি ভাইয়ের জার্নালিজম স্পিরিটের জায়গা থেকে ‘আমাদের বিনোদন বিভাগ’ বাহবা পেতেই পারে। তবে এখানেই শেষ করতে পারছি না বলে ‘দুঃখিত’।
আমার বর্তমান সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ভাইয়ের মূলনীতি অসাধারণ মনে হয়েছে। এখানে যোগ দেওয়ার সময় তিনি বারংবার বলেছিলেন, ‘সবার আগে সংবাদ ধরাতে হবে, সেটা জরুরি নয়। বরং সবার শেষে হলেও সংবাদের সঠিক তথ্য-দলিল হাতে নিয়েই সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। এবং এই পোর্টালে কোনও সংবাদ একবার উঠার পর আর সেটি নামানো যাবে না।’ স্বস্তি নিয়েই বলছি- অনেক ব্রেকিং নিউজ করেছি আমরা। অসংখ্য অভিযোগ এসেছে সম্পাদক বরাবর। কিন্তু কোনও সংবাদ নামানোর আদেশ পাইনি আজও। বরং এই ম্যাসেজটি বারবার পেয়েছি- তথ্য-প্রমাণ সঠিক থাকলে ঐসব ‘অভিযুক্ত’ নিউজের ফলোআপ যাবে। সর্বত্র নতজানু সাংবাদিকতার প্রাচীন সংস্কৃতিতে এর চেয়ে বড় ‘ফ্রিডম’ আর কী হতে পারে?
ভাই, ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞ।
সম্পাদকের সঙ্গে গেল বছর জন্মদিনের উৎসবে আমরা... এই ফাঁকে আরও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমার প্রাক্তন বিাভাগীয় সম্পাদক ভাইদের। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেছি এক জীবনে। নাম উল্লেখ করতে চাই- প্রয়াত রবি আরমান, শাহ আলম, মাহবুব আজীজ, অরণ্য আনোয়ার, জাকির হাসান, রবিন শামস, আলী ইমাম সুমন এবং মোশাররফ রুমী ভাইদের।
শেষে, গর্ব করতে চাই আমাদের বিনোদন বিভাগের প্রধান সেনাপতি ওয়ালিউল মুক্তাকে নিয়ে। বডি বিল্ডার হিসেবে যার শরীরের যত্নটাই সবার চোখে পড়ে অথচ তার সাংবাদিকতার নির্জাসটুকু আমি পান করি খুব তৃপ্তি নিয়ে। ধন্যবাদ রাখতে চাই প্রিয় ছবিয়াল সাজ্জাদ হোসেনের নামে। ঝকঝকে প্লাস্টিকময় ছবি তোলার এই জামানায় যে এখনও আলো-আঁধার নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। কৃতজ্ঞতা ইন্টারন্যাশনাল টিম ও বন্ধু জনি হকের প্রতি- সময়ে-অসময়ে বিশ্ব বিনোদনের খবর তৈরি করে দেওয়ার জন্য। ভালোবাসি এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে- যারা আছেন কিংবা ছিলেন।
টের পাই, এই পরস্পর বিশ্বাস আর ভালোবাসাটা বেঁচে আছে বলেই আমি অথবা আমরা- ক্রমশ বেড়ে উঠছি, বেরিয়ে আসছি মধ্যবিত্ত বিনোদন সাংবাদিকতার জীবন থেকে। সে সুযোগে আমার মধ্যবিত্ত হীনমন্যতাও উবে যাচ্ছে, নিজেকে ‘বড় বড়’ লাগছে! মনে হচ্ছে শৈশব ইশকুলের সেই কাঙ্ক্ষিত প্রথম বেঞ্চির কোণাটায় বসে আছি।
থ্যাংকস; বাংলা ট্রিবিউন।
লেখক: ইনচার্জ, বিনোদন বিভাগ
/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা