X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
কানের ডায়েরি- এক

অসহায় হয়ে বসে রইলাম করিডোরে

জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে
১৯ মে ২০১৭, ২০:১৩আপডেট : ১৯ মে ২০১৭, ২০:৩১

ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি কান শহরটা দেখলেই মন ভরে যায়। বিশেষ করে এখানকার সৈকতে পা দিয়ে সামনে তাকালে ক্ষুদ্র মনে হয় সবকিছুই! তবে সাগরপাড়ের এই শহরে আগের দু'বারের মতো এবারও শুরুতেই তিক্ত এক অভিজ্ঞতা হলো। আগেরগুলোর কথা নাইবা বলি। এবারের ঘটনাটা খুলে বলা যাক।

অসহায় হয়ে বসে রইলাম করিডোরে কানের ভেলোরিস শহরের হোটেল ইবিস বাজেট অন্তিবে সোফিয়া অন্তিপোলিতে বুকিং দিয়েছিলাম রুম। শর্ত ছিল বুকিং বাতিল করা যাবে না। কিন্তু ১৬ মে সেখানে যেতেই হোটেলের রিসিপশনে ভদ্রমহিলা জানালেন আমার নামে কোনও বুকিং নেই! শুনে তো বোকা বনে গেলাম। এ কেমন অভ্যর্থনা! বুকিংয়ের ডকুমেন্ট দেখানোর পরও কাজ হলো না।
এমনিতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথ বেয়ে ভ্যালোরিসের এই হোটেলে আসতে আসতে রাজ্যের সব ক্লান্তি ভর করেছে। ভেবেছিলাম হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের দিকে যাবো। কিন্তু বিধি বাম! নিস্তেজ কিংবা অসহায় হয়ে বসে রইলাম রিসিপশনের বাইরে করিডোরের চেয়ারে।
সঙ্গে প্যারিস প্রবাসী তরুণ আহামেদ ফরিদ। আমার মতো তিনিও কয়েকটি হোটেল বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ফল শুন্য। কান উৎসব চলাকালে সাগরপাড়ের শহরে তো দূরের কথা, কাছাকাছি অন্য অঞ্চলেও হোটেল পাওয়া দুঃসাধ্য। ত্রাতা হয়ে এলেন কান প্রবাসী তরুণ মাহবুবুর রহমান। তিনি গার দি কানে অপেক্ষা করবেন জানালেন।

উবার ট্যাক্সিকে ডাকলাম অনলাইনে। চালকের নাম ওয়ালিদ। লোকটা মধ্যপ্রাচ্যের। ঠিক কোন দেশের মনে পড়ছে না এ মুহূর্তে। তখন এদিকে খেয়াল দেওয়ার মতো মানসিকতায় ছিলামও না। হোটেল কর্তৃপক্ষ এমন করেছেন জেনে তিনিও হতবাক। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে যাত্রাপথে বাংলাদেশিদের অনেক প্রশংসা করলেন ওয়ালিদ। তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশি পিপল আর ভেরি গুড।’ শুনে গর্ব হলো। বিষণ্নতা উড়ে গেলো নিমিষে!
বলে রাখা সংগত, প্যারিসে ট্যাক্সি যাত্রা ব্যয়বহুল। সেকেন্ডে মিটারে ওঠে ১ পয়সা। বাংলাদেশি টাকায় ৯ টাকা! লাগেজ নিয়ে মেট্রো কিংবা বাসে ওঠা মহা হ্যাপা। সুতরাং আপাতত টাকার মুদ্রা ভুলে থাকাই মঙ্গল।
কানের লাঞ্চ যাইহোক, হোটেলের দুশ্চিন্তা ভুলে সাগরপাড়ের শহরের সৌন্দর্য দেখছিলাম। বাসে যে পথে ভ্যালোরিস এসেছিলাম, ওয়ালিদ নিয়ে চললেন অন্য পথে। কান শহরটা ছিমছাম। পরিপাটি করে সাজানো। সবখানেই কেমন যেন সুনসান নীরবতা। এই শহরে ধুলোবালি একেবারেই নেই। সবাই ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন। সড়কে যা একটু আবর্জনা পড়ে থাকে, মুহূর্তেই কর্তব্যরতরা তা সরিয়ে ডাস্টবিনে নিয়ে যান।
গার দি কানে (রেলস্টেশন) পৌঁছানোর পর মাহবুব ভাই জানালেন, কানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। একজনের বুকিং দেওয়া রুম বেশি দামে অন্যজনের কাছে ভাড়া দেওয়ার বিশ্রী কাজটা এখানে উৎসবের প্রাক্কালে অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত দু’বার অবশ্য এমনটা হয়নি। যে অ্যাপার্টমেন্ট বা হোটেল বুকিং দিয়েছিলাম, সেটাই পেয়েছি। বাংলাদেশি একজন সঙ্গে আছেন, আরেকজনকে পেয়ে সাহস সঞ্চার হলো। হতাশা ঝেড়ে ফেললাম।
রেলস্টেশন থেকে কিছুটা পথ হেঁটে এগোলে সারি সারি রেস্তোরাঁ। এগুলোর ভেতরের চেয়ে বাইরে বসার স্থানেই ভিড়ভাট্টা বেশি। ফুটপাতে বসে খাওয়া ফরাসিদের চেনা ঐতিহ্য। কাবাব নামের একটা রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ করে নিলাম। খাবারে মসলা নেই বললেই চলে। তবে স্বাদ যে কম তা নয়। বরং বেশিই।
খাওয়ার আগেই অবশ্য আমন্ত্রিত সাংবাদিক হিসেবে বরাদ্দ ব্যাজ বা পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছি কান উৎসব আয়োজকদের কাছ থেকে। ট্রেনে চড়লাম রাত সাড়ে ৮টায়। গন্তব্য সেন্ট রাফায়েল। সূর্য ধীরে ধীরে ডুবছে। সাগরের পাশ ঘেঁষে চলছে রেলগাড়ি...
সাগরের পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া রেলগাড়ি... (চলবে)
/জেএইচ/এমএম/

সম্পর্কিত
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…