X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
কানের ডায়েরি-দশ

শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল

জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে
০২ জুন ২০১৭, ২১:১৭আপডেট : ০২ জুন ২০১৭, ২১:২৫

শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল কান উৎসব কাভার করতে এসে গত দু’বারের মতো এবারও যা নিয়ে সবচেয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম, তা হলো খানাপিনা। এখানে হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও একটা বাঙালি রেস্তোরাঁ মিলবে না। সকাল-দুপুর তাই ফরাসি, ইতালিয়ান ও স্প্যানিশ খাবারেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
তবে রোজ রাতে ঠিকই ভাত পেয়েছি। সারাদিন উৎসবের নানান আয়োজন আর লেখা নিয়ে ছুটোছুটির পর এই খাবার ছিল স্বস্তির।
সেন্ট রাফায়েলে লু কাশ্মির রেস্তোরাঁয় ডিনার করেছি রোজ। এখানকার ডিরেক্টর প্রবাসী বাংলাদেশি মাহবুবুর রহমান। ‘কানের ডায়েরি-এক’ পড়ে থাকলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে পাঠকদের। এই রেস্তোরাঁয় নানান স্বাদের খাবার পাওয়া যায়, বেশিরভাগই পশ্চিমা পদ। তবে আমার কথা ভেবে রোজ রাতে লু কাশ্মিরে বিশেষভাবে রান্না করা হয়েছে ভাত। চমক হিসেবে তিন-চারদিন বিরিয়ানিও এসেছে টেবিলে।
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল এখানকার শেফ পাঞ্জাবের সুরজিৎ সিং বাঙ্গা। তার রান্নার জবাব নেই! কানের ডায়েরির একটি লেখায় তাকে ‘পাকিস্তানি’ উল্লেখ করেছিলাম। কারণ মাহবুব ছাড়া এখানকার অন্য দুই কর্মী মোবাশ্বের ও সাব্বির পাকিস্তানি। তারা সবাই উর্দুতে কথা বলেন। কিন্তু বাঙ্গা একদিন ডিনারে এসে হেসে হেসে বললেন, ‘ম্যায় পাঞ্জাবি হ্যায়, পাকিস্তানি নেহি!’ তার নির্দিষ্ট করে একথা বলার কারণ ভাবছিলাম। পাশ থেকে মাহবুব জানালেন, বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত কানের ডায়েরি পড়ে শুনিয়েছেন বাঙ্গাকে। ওখানেই তিনি জেনেছেন তাকে পাকিস্তানি উল্লেখ করা হয়েছে। সেন্ট রাফায়েল সৈকতের ধারেকাছেও লোকে বাংলা ট্রিবিউন পড়ছে জেনে ভালো লাগলো। বাঙ্গাকে কথা দিলাম, কানের ডায়েরির আরেকটা লেখায় আপনার এ ঘটনা উল্লেখ করবো।
ডিনার শেষে রোজ রাতে আবার লিখে পরদিন ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম কানে। ১৭ থেকে ২৮ মে প্রতিদিনই ছিল এক চিত্র। উৎসব শেষে রাজ্যের সব ক্লান্তি যেন ভর করলো শরীরে। তবুও ২৯ মে দেরি করলাম না বিছানা ছাড়তে। কারণ মোনাকো-মন্টে কার্লো যাবো। মোনাকোর রাজা প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ি দেখবো। সঙ্গী মাহবুব। সেন্ট রাফায়েল থেকে ট্রেনে চড়ে সেখানে যেতে লাগে পৌনে ১ ঘণ্টার একটু বেশি।
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল মন্টে কার্লো ট্রেন স্টেশন থেকে উঁচু-নিচু অনেকটা পথ হেঁটে গেলে প্রিন্স অব মোনাকোর বাড়ির আঙিনায় ওঠা যায়। এখানে এসেই মনে হলো, চোখের সামনে ভূমধ্যসাগরের কী অবিশ্বাস্য সুন্দর! দূর পাহাড়ের গায়ে থোক থোক ঘরবাড়ি। সবই ধনকুবেরদের। নিচে সুনীল জলরাশি। সাগরের তীর ঘেঁষে নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ইয়ট।
একপাশে করসিকা। যেখানে রণবীর কাপুর ও দীপিকা পাড়ুকোনের ‘তামাশা’ ছবির শুটিং হয়েছে। আরেক পাশে ইতালির সীমান্ত শহর ভান্তিমিল। এখানকার সৌন্দর্য দেখে আনমনা হয়েই কেটে গেলো অনেকটা সময়। প্রকৃতি তার ঐশ্বর্য যেন দু’হাত ভরে দিয়েছে ফরাসি সমুদ্র উপকূলকে!
বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা উপভোগ করতে আসেন এখানকার সুন্দর। দূরের সৌন্দর্য কাছে নিয়ে আসার জন্য আছে দূরবীণ। সাজিয়ে রাখা গোল গোল পাথরের স্থাপনা ও ছোট্ট কামানের সামনে ছবি তুলতে ভোলেন না পর্যটকরা। ওদিকে প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ির সামনে টহল দিচ্ছেন একজন নিরাপত্তা কর্মী।
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল অ্যালবার্ট হলেন প্রিন্স রেইনিয়ের তৃতীয় ও আমেরিকান অভিনেত্রী গ্রেস কেলির সন্তান। গ্রেস কেলির এই বৈবাহিক জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত ‘গ্রেস অব মোনাকো’ ২০১৪ সালের কান উৎসবে দেখানো হয় প্রতিযোগিতা বিভাগের বাইরে।
বাবার মতো প্রিন্স অ্যালবার্টও বিয়ে করেছেন বিখ্যাত একজন নারীকে। তার স্ত্রী প্রিন্সেস শার্লেন হলেন একসময়ের অলিম্পিক সাঁতারু। ক’দিন আগে তারা সাত মিনিট ব্যাপ্তির একটি ভিডিওচিত্রে অংশ নেন। মোনাকোর গ্রাঁ প্রিঁ’র ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি হয়েছে এটি। জানা গেলো, ২৫ থেকে ২৮ মে ফর্মুলা ওয়ানের উন্মাদনায় মেতেছিল এই শহরবাসী।
প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ি থেকে নেমে ফেরার পথে চোখে পড়লো ফর্মুলা ওয়ানের কিংবদন্তি মাইকেল শুমাখারের একটি ভাস্কর্য। অনেকে এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। স্টেশনের দিকে যেতে যেতে দেখলাম ক্যাসিনোর সামনে দামি দামি গাড়ি। কাছেই একটি গোলচক্করে বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের শো-রুম। আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন আর শানেল ঘুরে দেখলাম। জিনিসপত্রের দাম দেখলে মাথা ঘুরে যায়! আদতে মোনাকো-মন্টে কার্লো ব্যয়বহুল শহর। দুপুরে খেতে গিয়েও বুঝতে বাকি রইলো না এটা।
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল কানের কাছাকাছি ‘অন্তিব’ শহরেও উচ্চবিত্তদের বসবাসই বেশি। তবে শহরটা এককথায় রূপবতী! এখানকার সমুদ্রসৈকত উঁচু দালান দিয়ে ঘেরা। বুড়োবুড়ি, তরুণ-তরুণী, ফরাসি-বিদেশি সবাই মিলে সূর্যস্নানে মাতেন এখানে এসে। ৩০ মে সকাল থেকে বিকাল অবধি কাটিয়ে দিলাম সাগরপাড়ে। অন্তিবের আকর্ষণীয় দিক হলো এখানকার একটি বিশেষ স্থাপনা। ইংরেজি বর্ণমালা দিয়ে বানানো হয়েছে এটি। দেখলে মনে হবে একটা লোক বসে তাকিয়ে আছে সাগরের পানে!
৩০ মে বিকালে সেন্ট রাফায়েল স্টেশনে দাঁড়িয়ে মোনাকো-মন্টে কার্লো আর অন্তিবের সুন্দর চোখের সামনে আসছিল বারবার। এর মধ্যে এলো ট্রেন। এখানকার ট্রেনগুলোর জানালা সবসময় বন্ধ থাকে। কামরাগুলো সবই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। স্টেশনে থামার আগ পর্যন্ত চাইলেও ট্রেনের দরজা খোলা যায় না। সবই নিয়ন্ত্রণ করেন চালক। ট্রেনে চড়ে বুলুরিস, লু থায়া, থেক সুহ-মেহ, আগে, মান্দালিউ লা ন্যাপোল ও কান লা-বক্কা স্টেশন পেরিয়ে কানে আসার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলাম। আকাশছোঁয়া পাহাড় আর মায়াবী সাগরের রূপ যেন বেঁধে রাখতে চায়!
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল ১৫ দিন ধরে থাকায় একটা মায়া তৈরি হয়ে গেছে কান ও সেন্ট রাফায়েলের প্রতি। কান উৎসব শেষ হওয়ার পর এ দুটি শহরকে বিদায় জানাতে হবে ভেবে বিষণ্ন লাগছিল। প্রথমবার প্যারিস থেকে কানে এসেছিলাম ট্রেনে। আবার কান থেকে প্যারিস ফিরেছি ট্রেনে চড়েই। পরেরবার উড়োজাহাজে নিস বিমানবন্দরে এসে নেমেছিলাম। ফিরেছি ব্লা ব্লা গাড়িতে চড়ে। তাই এবার বাসে প্যারিসের উদ্দেশে যাত্রা। বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার পথে হোটেল দো ভিলের সামনে চকোলেট আকৃতির একটি স্থাপনা দেখে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ। মিষ্টি আমেজেই বিদায় রাগিণী বাজালো সাগরপাড়ের শহর কান!
শহর দুটিকে বিদায় জানাতে বিষণ্ন লাগছিল ছবি: মাহবুবুর রহমান
/জেএইচ/এমএম/

সম্পর্কিত
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!