X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০
মুখোমুখি আবদুল আজিজ

‘নায়ক হওয়ার প্রথম অফার এসেছে ভার্সিটি জীবনে’

ওয়ালিউল মুক্তা
২৭ জুন ২০১৭, ১২:০৯আপডেট : ২৮ জুন ২০১৭, ০০:৩৯

আবদুল আজিজ
ফেসবুকে এখনও কবিতা লেখেন। কিন্তু কার জন্য? সেটার তরজমায় একটু গুটিয়ে রাখলেন নিজেকে। তবে স্বীকার করে নিলেন অনেক কিছু। ফিরে গেলেন ৭০ দশকের কাছে। স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে ২০ মিনিট ধৈর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে লাল রঙের একটা গাড়ি আসতো। সেই গাড়ি করে একটানে চলে যেতাম পুরান ঢাকার দিকে।
ধানমন্ডি লেকের পাড়ের যে বকুল গাছ, সেটি তখনও ছিল। সম্ভবত ১৯৭৪ সাল। সেই গাছে উঠে, এ ডাল ও ডাল করা ছিল আমার নিত্য ঘটনা। বৃষ্টি এলে মাঠে নেমে যাওয়া, ফুটবল খেলা। এটা হতো স্কুল জীবনে। আর কলেজ জীবনে বৃষ্টি মানেই বাইক নিয়ে ‘দে ছুট’।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক আবদুল আজিজ। যার বর্তমান পরিচয়ের অতলে এমন নানা ঘটনা চাপা পড়ে আছে। সম্ভবত এবারই প্রথম নিজের ব্যক্তিগত নানা দিক নিয়ে সপাটে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের ইদ বিশেষ আয়োজনে-

বাংলা ট্রিবিউন: শুরুটা চেনা পথেই এগুনো যাক। মৌসুমী ব্যবসায়ী বলে একটা কথা আছে। দু’চার মিলিয়ে আবার ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান। ২০১২ সাল থেকে চলচ্চিত্র ব্যবসায়। নিজেকে কোন ধরনের ব্যবসায়ী মনে করেন? আর এতটা পথ আসার পর চলচ্চিত্র ব্যবসাটাকে কেমন মনে হচ্ছে?

আবদুল আজিজ: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ব্যবসাটা... ব্যবসায়ী হিসেবে খুব ডিফিকাল্ট মনে হয়েছে। এখানকার যে কালচার, অন্যরকম। সবাই মিলে এগিয়ে নেওয়ার যে প্রচেষ্টা, তা নেই। এখানে অকাজের লোক নেতাগিরি করে। কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে। এগুলো আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য ক্ষতিকর। ফলে আমার যেমন প্ল্যানিং, সেভাবে এগুতে পারছি না। সবচেয়ে দরকার নতুন নায়ক-নায়িকা হান্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকা, স্কুলিং, টেকনিক্যাল বিষয় প্রধান্য দেওয়া। আমাদের অভিজ্ঞতা খারাপ হয়নি। মৌসুমী নয়, ‍পুরোপুরি ব্যবসায়ী হিসেবেই কাজ করতে এসেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আসলেই কি পরিকল্পনা মতো কাজ করতে পারছেন না?

আবদুল আজিজ: কিছু কাজ তো হচ্ছে না- এটা ঠিক। তবে দর্শকের কথা মাথায় রেখেই এগুচ্ছি। প্রথম আমি ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ করলাম। চকচকে পর্দা। দর্শক এমন ছবি এক থেকে দেড় বছর দেখল। দর্শক কিন্তু পরিবর্তন চায়। তাই আমি লেডি অ্যাকশন ঘারানার ছবি করলাম ‘অগ্নি’। সেটিও দেখলো মানুষ। এরপর জয়েন্ট ভেঞ্চারে গেলাম। বড় পরিসরে কাজ করা। বাইরে শুটিং, নতুন কালার। নতুন সিস্টেমে কাজ করা। এগুলোতো আমার আগে এভাবে হয়নি এখানে। তবে সবার সহযোগিতা পেলে আরও অনেক কিছুই করতে পারতাম।

আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউন: যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রতি এখন খুব আগ্রহ জাজ মাল্টিমিডিয়ার।

আবদুল আজিজ: গত বছর বড় যে দুটি ছবি সুপারহিট হলো তার মধ্যে নাম থাকবে যৌথ প্রযোজনার ‘বাদশা’ ও ‘শিকারী’। এরপর নাম আসবে ‘আয়নাবাজি’। তবে ‘আয়নাবাজি’টা আরও ভালো ব্যবসা করতে পারত, যদি পাইরেসি না হতো। আমরা যদি ব্যবসার কথা বলি, তাহলে যৌথ প্রযোজনাই ভালো ব্যবসা করছে এখন।

বাংলা ট্রিবিউন: যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলোতে পরিচালক হিসেবে আপনার নাম দেখা যায়। আসলেই কী আপনি পরিচালনা করার সময় পান?

আবদুল আজিজ: না, এটা জাস্ট ফরমালিটি। আমি দিতে চাই না নামটা। কিন্তু পরিচালক সমিতি বাধ্য করে। তারা দিতে বলে, তাই দিই। আমি দিতে চাই না।

বাংলা ট্রিবিউন: চলচ্চিত্র ব্যবসার শুরুটা কখন কী ভেবে করলেন? শুরুতে কেমন লগ্নি ছিল?

আবদুল আজিজ: আসলে এটা প্যাশন থেকে করা। ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রং’ করা হলেও আমাদের যাত্রা ২০১১ সালে। তখনই ৩০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করি। ছবি করতে এত টাকা লাগে না। তবে আমাদের পরিকল্পনার জন্য এমন বাজেট। ২০১৭ সালে এসে বাজারে আমার ইনভেস্টমেন্ট ৭০ কোটিতে পৌঁছেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘বস-টু’ ছবি নিয়ে আসলে কী হয়েছিল? পরিচালক সমিতির সভাপতি ও প্রিভিউ কমিটির সদস্য মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেছিলেন, ছবিতে শিল্পী সমন্বয় নেই। ২০০টির বিপরীতে মাত্র ১৬ জন বাংলাদেশি!

আবদুল আজিজ: না তাদের (ভারতের) যদি ২০০ হয়, তবে আমাদের ৩০০ শিল্পী আছে এখানে। মেইন অভিনেতা অভিনেত্রী আছে বাংলাদেশের ১৬ জন। উনি (মুশফিকুর রহমান গুলজার) কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজটি করেছেন। মূলত ছবিটি আটকানোর চেষ্টা চলছিল। ঈদের ভেতরে যৌথ প্রযোজনার এ ছবি আসতে দিতে চাননি তারা। এটা উনাদের শপথ। ব্যক্তিগত কোনও কারণে এ কাজটি করছেন। উনার কথা সত্য ছিল না।

আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউন: ‘ডুব’ ছবির প্রযোজকও জাজ। ছবিটির অবস্থা আসলে কী! এত বির্তক সামলে মুক্তি দিতে পারবেন?

আবদুল আজিজ: যখন রিলিজ দেব তখন ফেস্টিভাল হবে। এটা নিয়ে কিছু না বলাই ভালো- কবে আসবে, না আসবে। তবে এটা ঠিক, ঈদ নয়, সাধারণ সময়েই এটি আসবে।

বাংলা ট্রিবিউন: চলচ্চিত্রের আগেও আপনি সফল ব্যবসায়ী। ব্যবসায় যুক্ত হওয়াটা কীভাবে, কত বছর?

আবদুল আজিজ: আমি যখন লেখা পড়া করি ছাত্র অবস্থায়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা শুরু করি ৯৩ সালে। লেদার ব্যবসাই করি। বাবাও একই ব্যবসা। তাই অভিজ্ঞতা তো ছিলই। ‘রিমেক্স’ নামে এটার যাত্রা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে মার্স্টাস শেষ করেছি। এর আগে ছিল ক্রিসেন্ট। ৯০ সালের দিকে হবে সেটা। তখন ছাত্র অবস্থায় ছিলাম। তবে ‘রিমেক্স’ আমার একক ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান যেটা আমি এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। আর অবশ্যই এর আয়তন এখন অনেক বড়।

আমার মনে আছে ৯৩ সালে যখন প্রথম ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং করি, তা ছিল আমার জন্য অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। ক্লায়েন্ট আমাকে অল্প কিছু অর্থ দেয়। সাড়ে ১২ হাজার ডলার পে করে। সে রাতে আমি ঘুমাতে পারিনি। ভীষণ খুশি ছিলাম। সারাক্ষণ উত্তেজিত অবস্থায় ছিলাম। শুধু ব্যবসার পরিকল্পনা করেছিলাম। 

বাংলা ট্রিবিউন: চলচ্চিত্রে আসার পর কখনও নায়ক হওয়ার অফার আসেনি বা ইচ্ছে হয়নি? নাকি কখনও কোনও বাসনা ছিল?

আবদুল আজিজ: দেখুন, নায়ক হওয়া জন্য কেউ ৬০-৭০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করে না। আর অফার যে আসনি তাও না। এখনও আসে। প্রথম এসেছিল ভার্সিটি জীবনে। কিন্তু আমার এগুলো করার ইচ্ছে নাই।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রেমিক আবদুল আজিজকেও আমরা ফেসবুকে পাই। অনেকটা কবির মোড়কে। কবিতা গান পড়া হয়?

আবদুল আজিজ: না। লেখা হয় শুধু।

আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউন: মাহিকে নিয়ে আপনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে স্বীকার করেন মাহির সঙ্গে আপনার সম্পর্কের কথা।

আবদুল আজিজ: এটা লুকানোর কিছু নেই। সম্পর্ক ছিল বলেই আমি বলে দিয়েছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিষয়টি আপনার পরিবার কীভাবে নিয়েছিল?

আবদুল আজিজ: আমার স্ত্রী জানার পর তার মন খারাপ ছিল। আর না বলি। পারসোনাল ব্যাপার হিসেবেই থাকুক। সবার কিউরিসিটি থাকুক। তবে এটা ঠিক মাহির সঙ্গে আমার স্ত্রীর এখনও ভালো সম্পর্ক। মাহির শেষ দুটি জন্মদিন কিন্তু আমার বাসায়ও হয়েছে। আমার স্ত্রী সঙ্গে ছিল।

সে আমার বাসায় যেমন এসেছে। আমার স্ত্রীও তার জন্য নিজে কেক এনেছে। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার অনু্প্রেরণা কে?

আবদুল আজিজ: এটা মুশকিলের প্রশ্ন হলো। সব জানার দরকার কী। তবে অনুপ্রেরণা আছে। তার নাম না বলি।

বাংলা ট্রিবিউন: হুমায়ূন আহমেদের লেখা আপনি বেশ পড়েন। তার উপন্যাসের চরিত্র শুভ্রকে নিয়ে আপনি একটি ছবি করতে চেয়েছিলেন। তার অবস্থা কী?

আবদুল আজিজ: হ্যাঁ, হুমায়ূন আহমেদের ‘সবাই গেছে বনে’ থেকে ছবি নির্মাণের ইচ্ছে আছে। তবে শাওন ম্যাডাম যদি সম্মতি দেন, তবেই করবো।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু এটা কী পারবেন, ‘ডুব’ প্রসঙ্গ নিয়ে একটু তিক্ততা তো রয়েছে। কিছুদিন আগে আপনাদের (আজিজ-শাওন) একটি সেলফি নিয়ে বেশ বাহাসও দেখা গেল!

আবদুল আজিজ: আসলে আমার একটু সেলফি তোলার বাতিক আছে। আমি সেলফিমেনিয়ায় ভুগি, সেলফি তুলি। একটি অনুষ্ঠানে উনি আমার পাশে বসেছিলেন। তখন আমি তাকে বলি, চলেন সেলিফি তুলি। তিনি বলেন, তোলেন। আমি বললাম চলেন একটা স্ট্যাটাস দিই। আমি বললাম, কী লিখব। উনি বললেন, লেখেন যা মনে হয়। আমরা আমরাই তো। ছবির ক্যাপশনে লিখলাম ‘আমরা আমরাই’। তখন ‘ডুব’ ছবি নিয়ে তুলকালাম অবস্থা্। উনি যে বিষয়টি নিয়ে এমন করবে… তারপর আমি স্ট্যাটাসটি ডিলিট করি। আমি খুব ভালো মনে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। মানুষ মনে করে, আমাদের মধ্যে ঝগড়া।

আবদুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউন: আসলে ব্যবসার অবস্থা কী?

আবদুল আজিজ: অন্যরা একটি ছবি করছে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে। সেল করছে ৩০-৩৫ লাখ টাকা। তারা ৩৫ লাখ টাকাই উঠাতে পারেনি। সেদিক দিয়ে আমার ছবি কিন্তু অনেক ভালো করছে। দেশের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি।

বাংলা ট্রিবিউন: আলাপের ইতি টানতে হচ্ছে এই পর্বে। আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে একটু জানতে চাই।

আবদুল আজিজ: একটাই টার্গেট আমার, দর্শকদের সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনা। চলচ্চিত্রকে চাঙ্গা করা। একধরনের ছবি করলে দর্শকদের বোরিং লাগবে। তাই রোমান্টিক, অ্যাকশন, লেডি অ্যাকশন, সামাজিক কমেডি, অ্যাকশন কমিডি- এসব মিলিয়েই সিনেমা নির্মাণের দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে আমার। এখনই থামছি না আমি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

আবদুল আজিজ: শুভেচ্ছা আপনাকেও। আশা করছি বাংলা ট্রিবিউন পরিবার সবসময় চলচ্চিত্রের অগ্রযাত্রার সঙ্গেই থাকবে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ বাংলা ট্রিবিউন
/এম/এমএম/

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু
নিজের যে স্বভাব লুকিয়ে রাখেন সারা
নিজের যে স্বভাব লুকিয়ে রাখেন সারা
চাঁদরাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নাটক
চাঁদরাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নাটক