X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
পরমব্রত ইস্যুতে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ

শিল্পীর বিরুদ্ধে কি শিল্পী দাঁড়াতে পারে?

মাহমুদ মানজুর
১০ আগস্ট ২০১৭, ১৫:২০আপডেট : ১১ আগস্ট ২০১৭, ১৫:১৫

নাসিরউদ্দীন ইউসুফ হঠাৎ কাজ থামিয়ে পশ্চিমঙ্গে ফিরে গেছেন ভারতীয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তার আগে বাংলাদেশে ‘অনুমতিহীন’ শুটিং করার দায় পড়েছে তার কাঁধে। তার নাম উল্লেখ করে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) লিখিয়েছেন অভিনেতা-নির্মাতা-সংগঠক গাজী রাকায়েত। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত- তবুও অপেক্ষায় আছেন পরম। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই ফিরবেন ঢাকায়, শুরু করবেন বিখ্যাত ‘ফেলুদা’ সিরিজের বাংলাদেশি সংস্করণের শুটিং।

তবে তার আগে পরম কিংবা বিদেশি শিল্পীদের অনুমতিহীন শুটিংয়ের অভিযোগ তুলে থানা পর্যন্ত গড়ানোর বিষয়টিকে অনেকেই দেখছেন বিব্রতকর চোখে। বলছেন, পরমকে নিয়ে যা হয়েছে- সেটি অনভিপ্রেত। মূলত এই বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে বিস্তর আলাপ করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ।

বাংলা ট্রিবিউন: কেমন আছেন।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: বেশ বিব্রত আছি।

বাংলা ট্রিবিউন: কেন!
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: কারণ অনেক। প্রথম কথা হলো, একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে আরেকজন শিল্পী দাঁড়াতে পারে কিনা? থানা কিংবা আদালতে যেতে পারে কিনা? এসব প্রশ্নে আমার উত্তর— না, এটা উচিত না।

বাংলা ট্রিবিউন: আচ্ছা, গাজী রাকায়েত-পরমব্রত ইস্যু নিয়ে আপনি বিব্রত। হয়তো আরও অনেকেই। কিন্তু শিল্পীরাও তো মানুষ। তাদেরও ভুল, অন্যায় থেকে যায়। তাদের জন্য আলাদা আইন নেই নিশ্চয়ই?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: ঠিক আছে। যদি শিল্পী কোনও ভুল করে তাকে আমার পরিবারের মানুষ হিসেবে পরামর্শ ও উপদেশ দিতে পারি, বারণ করতে পারি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো পরম আমাদের ডিরেক্টরস গিল্ড এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সদস্যপদের জন্য যোগাযোগ করেছে। কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এরপরেও এমনটা কেন হলো বুঝলাম না। এটা অন্য কেউ করলেও বুঝতাম। আমাদের শিল্পী গাজী রাকায়েতের মতো লোক এই কাজটি কেন করে ফেলেছে তা আমার বোধগম্য না। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা লজ্জাজনক, অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু গাজী রাকায়েত ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটা করেননি নিশ্চয়ই। তিনি ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি এবং টিভি সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের জোট এফটিপিও’র সদস্য সচিব। হতে পারে যৌথ সিদ্ধান্তেই তিনি জিডি করতে গেছেন।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: থানায় উনি একাই তো গেছেন, লিখেছেন, অভিযোগটি উপস্থাপন করেছেন। অথচ এটা না করে তিনি কিন্তু শিল্পী হিসেবে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন থাকা কাজটিকে বিবেচনা করতে পারতেন। পরমব্রতর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডি প্রোডাকশন দাবি করছে, সে এখানে শুটিং করেনি। আমি ধরেই নিয়েছি, পরমব্রত অনুমতি না নিয়ে শুটিং করেছে, অন্যায় করেছে। একই সঙ্গে সে কাজ করার জন্য আবেদনও করেছে। সেক্ষেত্রে তড়িঘড়ি এই জিডি করার মানে কী? পরমের আদিবাড়ি ঢাকায়। ঋত্বিক ঘটক পরিবারের সন্তান সে। দুই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতিতে তার পরিবারের যে অবদান সেটুকুও আমরা ভাবিনি এমন কাজ করার আগে। আর আমরা যখন শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশের কথা বলি তখন কিন্তু বৃহৎ বাংলার কথাই বলি।

বাংলা ট্রিবিউন: সেটা ঠিক আছে। এটা পরমব্রতর জন্য অবশ্যই বিব্রতকর বিষয়। কিন্তু কাজের শৃঙ্খলার জন্য নিয়ম-নীতিরও তো দরকার আছে।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: যে রাষ্ট্রকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করছি সেটা তো শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারের জন্য, আটকানোর জন্য না। ১৯৮৫ সাল থেকে ভারতে নিয়মিত মঞ্চনাটক করতে যাই। এ পর্যন্ত মঞ্চনাটকের জন্য সে দেশের কোথাও থেকে আমাকে অনুমতি নিতে হয়নি। অথচ ভারত থেকে কোনও দল যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে আমাদের তিনটি মন্ত্রণালয় (সংস্কৃতি, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র) থেকে তাদের অনুমতি নিতে হয়। এরপর এনএসআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ক্লিয়ারেন্স লাগে প্রত্যেক সদস্যের। আমন্ত্রিত সব শিল্পীর তথ্য দাখিল করতে হয়। অনেকে অনুমতিও পায় না। আর আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গেলে শুধু ভিসাটা করে চলে যাই। এই বিষয়গুলোও বিবেচনা করার দরকার ছিল কারও বিরুদ্ধে থানায় নালিশ নিয়ে যাওয়ার আগে।

বাংলা ট্রিবিউন: তাছাড়া ইদানীং আমাদের জয়া আহসান, শাকিব খান, সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ অনেক তারকা শিল্পীই এখন সুনামের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করছেন কলকাতার সিনেমায়। তাদের জন্যও এটা বিব্রতকর ঘটনা নিশ্চয়ই।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: সেটাই তো বলছি। ১৯৮৫ সাল থেকে তাই হয়ে আসছে। আরও অনেক নাম আছে, কারও নাম বলছি না।

বাংলা ট্রিবিউন: হতে পারে দেশের নাটক-সিনেমা ভারতের কাছে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বলেই বিষয়গুলো এমন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে আমাদের পক্ষ থেকে। সেটারও তো একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের দরকার আছে।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: সেটা বললে তো আমি বলবো ২৪ ঘণ্টাই আমরা ভারতীয় আর ইউরোপিয়ান সংস্কৃতির আগ্রাসনের মধ্যে আছি। তাদের গান, প্রোডাক্ট, নাটক, বিজ্ঞাপন, জামা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি সবই আমাদের গিলে খাচ্ছে। সেটির জন্য আন্দোলন করুন, বিদেশি টিভি চ্যানেলের ফি বাড়িয়ে দিন, আমি আছি। কিন্তু আমি মনে করি, বাঙালির যে সংস্কৃতি সেটার বিনিময় থাকতে হবে, যদি আমরা আমাদের বাঁচাতে চাই। সেটা কাঁটাতারের বেড়া টপকে দুই পাশেই থাকা উচিত। সংস্কৃতি বাঁচানোর নামে আমরা এভাবে আইনের মারপ্যাঁচে গিয়ে শিল্পীদের আঘাত করবো এটা তো ঠিক না।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু এটার সমাধান কী?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: আমার পরামর্শ হলো, বিদেশের কোনও শিল্পী এ দেশে আসবেন যথাযথ অনুমতি নিয়েই, এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কোনও টেলিভিশন কিংবা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান যদি ওই শিল্পীকে অনুমতি দেয় এবং আমন্ত্রণ জানায়, সেটাই তো বড় অনুমতি। মানে ওয়ান উইন্ডো হওয়া উচিত। মানে আমার কথা যে বা যারা এই প্রজেক্ট করছে, অনুমতির বিষয়টি তাদের ওপর বর্তাবে। এজন্য শিল্পীকে ডেকে থানা-পুলিশ-মিডিয়া ডেকে হেনস্তা করার কোনও কারণ নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: সম্ভবত বিদেশি শিল্পীদের জন্য টালিউডেও অনুমোদন নেওয়ার একটা নিয়ম রয়েছে।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: আমি সেটারও আপত্তি করছি। নিয়ম হতে হবে যারা আমাকে নিচ্ছেন তারা এসব দেখবেন। শিল্পী কেন অফিসে অফিসে দৌড়াবে? সেটা তার কাজ নয়। আর পরমব্রত একজন অসাধারণ শিল্পী। এতে কারও কোনও দ্বিমত নেই। সে বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমকে সাপোর্ট করেও সমালোচিত হয়েছে, সেসব ভুলে গেলেও অন্যায় হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে এর সমাধান কোথায়?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: আমরা সমভূমিতে দাঁড়িয়ে বাংলা সংস্কৃতির বিনিময়টা করতে চাই। দুই বাংলার বাঙালিসহ সারাবিশ্বের বাঙালিকে নিয়েই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। আইনের মারপ্যাঁচ দিয়ে, শিল্পী ডেকে এনে অপমান করার মাধ্যমে এই সংস্কৃতির বিকাশ হবে না। বরং আমরা আমাদের পায়েই কুড়াল মেরে চলেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই। আপনার প্রসঙ্গে…
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ: আজ এ পর্যন্তই থাক। এক বিষয়ের মধ্যে আরেক বিষয়ে আলাপ শোভা পায় না।

/এমএম/

আরও: 

পরমব্রতর বিরুদ্ধে থানায় জিডি

পরমব্রত ইস্যুতে যা বললেন প্রযোজক শাকিল 

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!