X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
চলচ্চিত্র সমালোচনা

ভয়ংকর সুন্দর: প্রত্যাশায় গরমিল

শেরিফ আল সায়ার
১৮ আগস্ট ২০১৭, ১৭:২১আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ০০:৩৯

ছোটপর্দায় আলোচিত নির্মাতা অনিমেষ আইচ। তারচেয়েও বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ‘জিরো ডিগ্রি (২০১৫)’ ছবিটি নির্মাণ করে। যখন চারদিকে এই ছবিটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ঠিক তখন নানানজনে এই পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অন্যতম কারণ ছিল দুটি- প্রথমত তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে একদমই নতুন একজন পরিচালক, দ্বিতীয়ত নাটকের সূত্রে নির্মাতা হিসেবে অনিমেষ আইচের দক্ষতা নিয়ে বিতর্ক তোলার তেমন কোনও সুযোগ নেই। আর তাই সামলোচকদের অনেকেই তখন পক্ষ নিয়েছিলেন অনিমেষের।

ভয়ংকর সুন্দর-এ ভাবনা প্রশ্ন হলো তার দ্বিতীয় ছবি ‘ভয়ংকর সুন্দর’–এর বেলাতেও কি একইভাবে একই কারণে তার পক্ষ নেবেন?

‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিটি নিয়ে যে দর্শকরা অপেক্ষা করেছে শুধু তা নয়। দর্শকরা অপেক্ষা করে থাকেন একটি ভালো ছবি প্রেক্ষাগৃহে আসার। তারা সেটি দেখবেন এবং কিছুটা বিনোদনের খোরাকও পাবেন। দর্শকের এই প্রত্যাশা কি পূরণ করতে পেরেছেন অনিমেষ আইচ? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সব দর্শকের প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি চলে আসে। তবে দর্শক প্রতিনিধিত্ব নয়। ১৬ আগস্ট রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে দুপুরের শোতে ‘প্রায় ফাঁকা’ প্রেক্ষাগৃহে নিতান্তই একজন দর্শকের অনুভূত প্রত্যাশার কিছু গরমিল নিয়েই লেখাটি সাজানো।

গল্পটি যেমন:

গল্পটি বলে দিয়ে সবকিছু ‘স্পয়লার’ করার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে কিছুটা বলা যেতে পারে। উচ্চবিত্ত পরিবারের আহ্লাদী মেয়ে বাসায় রাগ করে লঞ্চে করে ঢাকায় চলে আসে। মেয়েটির নাম নয়নতারা। সে রিক্সায় চড়ে একটি নিম্নমানের হোটেলে ওঠেন। সেখানের হোটেলবয় মুকু। মুকুর সঙ্গে তার সম্পর্ক জমে ওঠে। তাদের প্রেম হয়। একটি ঘটনার কারণে তারা চলে যায় নিম্নবিত্তদের থাকার জায়গায়। বড়লোকের মেয়ে সেখানে মানিয়ে নেয়। তারপর একদিন নয়নতারার বাবা-মা-দাদা চলে আসে। তাকে নিয়ে যেতে চায়। নয়নতারা যায় না। সে পরিবারকে জানায়, মুকুকে সে বিয়ে করেছে। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করে। এটা হলো ছবির প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের একটি সংকট তুলে ধরা হয়। সেটা হলো নিম্নবিত্তদের পানির সংকট। সেই সংকটে পড়ে নয়নতারার মনোজগতে ঘটে এক পরিবর্তন। আর তাই হয়তো এই ছবি সংশ্লিষ্ট সকলেই এটিকে বলেছেন, ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি’। আপাতত এই হচ্ছে ছবির গল্পের সারমর্ম।    

যা কিছু সুন্দর:

১. বলা হচ্ছে, মতি নন্দীর লেখা গল্প ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ’ অবলম্বনে ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে। ‘অবলম্বন’ মানে গল্পটির হুবহু নয় বটে, নিশ্চয়ই যোজন-বিয়োজন হয়েছে চিত্রনাট্যে। বলা যেতে পারে, গল্পের প্রথমার্ধ পরিচালকের নিজের লেখা। এই প্রথমার্ধের সঙ্গে মতি নন্দীর গল্পের ছায়া ধরে দ্বিতীয়ার্ধের সঙ্গে মেলাতে চেয়েছেন পরিচালক। এটা মোটামুটি সুন্দরই ছিল।

২. চলচ্চিত্রটির সিনেমোটোগ্রাফি চমৎকার। অসাধারণ আলো-ছায়ার খেলা খেলেছেন সিনেমেটোগ্রাফার খায়ের খন্দকার। অন্যদিকে অনিমেষের প্রথম ছবি ‘জিরো ডিগ্রি’র মেকিংও সুন্দর ছিল। সিনেমেটোগ্রাফির প্রশংসা তখনও সবাই করেছেন। শুধু তাই নয়, ‘জিরো ডিগ্রি’তে এই শহরের ওপর তলার মানুষের জীবনচিত্রকে সুন্দর করে তুলে ধরতে পেরেছিলেন পরিচালক। এবার ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিতে তিনি এঁকেছেন নিচু তলার মানুষের জীবন। যার কিছুটা তুলে ধরতে মোটেও ব্যর্থ নন পরিচালক।

৩. ছবিতে ড্রোনশট ব্যবহার হয়েছে। দৃশ্যগুলো বাংলা সিনেমায় নতুনত্ব যোগ করেছে তো বটেই।

সিনেমার অন্যতম সুন্দর গান:

৪. ‘ভয়ংকর সুন্দর’ মূলত গল্পে প্রবেশ করে দ্বিতীয়ার্ধে। তারপর গল্পটি এগিয়েছে। পানির জন্য হাহাকার করছে পুরনো ঢাকার নিম্নবিত্ত মানুষ। বাস্তব এই গল্পটি জানেই বা ক’জন দর্শক? জানলে হয়তো ছবিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য কমে যেতো অনেক। পানির জন্য এই নাগরিক হাহাকারকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক।

৫. নায়িকা নয়নতারার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভাবনা। তার চরিত্রটি ছিল বড়লোকের আহ্লাদি মেয়ে। সে তার চরিত্রে অভিনয় ভালোই করেছেন। যদিও প্রথম দিকে অনেকেই ধারণা করেছেন, নয়নতারা চরিত্রটি হয়তো আগা-গোড়া মানষিক প্রতিবন্ধী! বাস্তবে কিন্তু তা না।   

অন্যদিকে মুকু চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার পরমব্রত। তার চরিত্রেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। তার পোষাক থেকে শুরু করে কথাবার্তার ধরন, চলাফেরা সবকিছুতেই নিজের চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন। যদিও সিনেমার পুরোটাজুড়েই ফোকাস ছিল ভাবনাকে ঘিরে। 

৬. পাশ্ববর্তী চরিত্রগুলোতে যারা সুন্দর অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে রিক্সা চালক হিসেবে ছিলেন খায়রুল আলম সবুজ, বাড়ির মালিক দিহান, মাস্তান চারিত্রে সমাপ্তি মাসুক, নয়নতারার বাবা চরিত্রে জর্জ এবং দিহানের মাতাল স্বামী ফারুক আহমেদ অসাধারণ অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে দিহান, সমাপ্তি, লুৎফর রহমান জর্জ ও ফারুকের ছোট ছোট চরিত্রের অভিনয়- অনেকাংশে ছাপিয়ে গেছে পরমব্রত-ভাবনার অভিনয়শৈলী। তাদের ছোটছোট অংশ প্রত্যেকে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আর বাড়িয়েছেন দর্শক আফসোস- কারণ তাদের চরিত্রগুলোকে পাওয়া যায়নি প্রত্যাশার মাপে।  

৭. ছবির শেষটা খুব সুন্দর। ‘জিরো ডিগ্রি’র শেষটাও অনেক দুর্দান্ত মনে হয়েছে অনেকের কাছেই। একটা সাইকোলজিক্যাল ফিল তৈরি করতে পেরেছিলেন পরিচালক। এই ছবিতেও তিনি সে চেষ্টা করেছেন। শেষ দৃশ্যে নয়নতারা পানি জমিয়ে রাখে। অপেক্ষা করে একদিন পানি বন্ধ হবে তখন সে প্রতিশোধ নেবে। তারপর যখন সময় আসে তখন তারাই তার কাছ থেকে জোর করে পানি নেয় যারা একসময় তাকে পানি দেয়নি।

এটাকে নয়নতারা এবং মুকু উপভোগ করেন। তারা হাসে আর জলকেলি খেলে। ‘এই দৃশ্য দর্শক বোঝেনি’ এই কথাটি বললে দর্শকদের অপমান করা হবে। তবে এটুকু বলা যায়, আমাদের দর্শক এখনও এই দৃশ্য নেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়নি। তবে বাংলা সিনেমার দর্শককে বোকা বলারও সুযোগ নেই।

৮. আর ‘ভয়ংকর সুন্দর’-এ সবচেয়ে বড় সুন্দর লুকিয়ে আছে নকল ছবির এই আস্ফালনের সময়ে একটি মৌলিক এবং নতুন গল্পকে পরিচালক বাঁধতে চেয়েছেন সেলুলয়েডে। এটাও কম প্রাপ্তি কিসে? 

সংবাদ সম্মেলনে ভাবনা ও পরমব্রত ভয়ংকর সুন্দর

রেটিং: ৫/১০
পরিচালক: অনিমেষ আইচ

প্রযোজক: অনিমেষ আইচ


রচয়িতা: অনিমেষ আইচ (সংলাপ)
চিত্রনাট্যকার: অনিমেষ আইচ
উৎস: মতি নন্দী কর্তৃক ‘জলের ঘূর্ণি ও বকবক শব্দ’
অভিনয়ে:
আশনা হাবিব ভাবনা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসান ইমাম, খায়রুল আলম সবুজ, লুৎফর রহমান জর্জ, ফারহানা মিঠু, ফারুক আহমেদ, দিহান, সমাপ্তি মাসুক প্রমুখ
সুরকার: ইমন সাহা
চিত্রগ্রাহক: খায়ের খন্দকার
সম্পাদক: রতন পাল
স্টুডিও: এ স্কয়ার ফিল্ম কোম্পানি
মুক্তি: ৪ আগস্ট, ২০১৭
দৈর্ঘ্য: ১৩০ মিনিট

প্রত্যাশারা যেখানে ডুবে গেলো:

১. যেহেতু সুন্দরটা শেষ হয়েছে চরিত্রগুলোর সৌন্দর্য্য দিয়ে সেক্ষেত্রে এর মন্দ দিক দিয়েই শুরু করা যাক। ‘ভয়ংকর সুন্দরে’র সবচেয়ে বড় মন্দ দিক হলো পরিচালক শুধুমাত্র নয়নতারা-মুকু চরিত্র দুটি ছাড়া অন্য কারও দিকেই মনোযোগ দেননি। তিনি এই দুটি চরিত্রের বিস্তারে যতটা মনযোগী হয়েছেন তাতেকরে বলতেই হয়- অন্যসব চরিত্রগুলোর সঙ্গে তিনি ‘জাস্টিস’ করেননি। এটাকে ‘অপরাধ’ও বলা যায়। যেমন ধরা যাক, খায়রুল আলম সবুজ একজন সিনিয়র অভিনেতা। তাকে আপনি রিক্সাচালক চরিত্রটি দিলেন। কিন্তু তার বড় কোনও ভূমিকাই নেই এই ছবিতে। তাকে বিস্তার হতে দেয়া হয়নি। বরং তার চরিত্রটি বিতর্কিত হয়েছে- কারণ পুরো সিনেমাজুড়ে একজন রিক্সাচালককেই দেখিয়েছেন পরিচালক। এটা কেমন করে সম্ভব! এতবড় শহরে একই রিক্সাচালককে নয়নতারা বার বার খুঁজে পান কেমন করে!  

এমনকি হোটেলে এক মাস্তান আসলো নয়নতারাকে ধর্ষণ করতে। সেই মাস্তান সমাপ্তি মাসুক এক কথায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। অথচ তাকে আর পাওয়া যায়নি কোথাও। এরপর পানি আনতে গিয়ে নয়নতারা পাশের বস্তিতে গিয়ে যাদের হাতে বেদম মার খায়- সিনেমার শেষে তাদের কাউকে সেভাবে পাওয়া যায়নি!
বিষয়টা হলো, উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলোকে পরিচালক কেন যেন ফেরত আনেননি। যেমন, নয়নতারার বাবা-মা-দাদা চরিত্রগুলোকে তিনি বিস্তার হতেই দেননি। বিশেষ করে নয়নতারার বাবা লুৎফর রহমান জর্জ-এর মতো অভিনেতাকে জাস্ট মিসইউজ করেছেন অনিমেষ। ‘আয়নাবাজি’তে মুগ্ধ দর্শকরা নিশ্চয়ই জর্জের এমন পরিনতি মেনে নেবেন না।

অন্যদিকে নয়নতারা মা চরিত্রটিকে মেকি কান্নাকাটির মধ্যে দিয়েই নিয়ে গেছেন। এখানে চরিত্র প্রকাশে যে ব্যর্থতা তার দায় আসলে কার? আর সেই দায় নিয়েই চরিত্র বিকাশে যে প্রত্যাশা ছিল তা ভয়ংকরভাবেই ডুবে গেলো।

২. এবার আসা যাক নায়িকা চরিত্রের কস্টিউম নিয়ে। এটি নিয়ে হলের ভেতরও হাসাহাসি করেছেন দর্শক। বড়লোক ঘরে তার পোশাক যা ছিল ঠিক আছে। কিন্তু নিম্নবিত্তের ঘরে গিয়েও তার পোশাকে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। এমন নয় যে নিম্নবিত্তের ঘরে গেলে নারী তার পোশাকে বদল করবে। কিন্তু পোশাকের সঙ্গে পরিবেশ কোনোভাবে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। শুধু তাই নয়, হোটেল থেকে যখন নিম্নবিত্তের ঘরে গিয়ে নয়নতারা-মুকু ওঠে তখন ঘরটির অবস্থা থাকে খুবই নোংরা। সেখান থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তারা থাকার ব্যবস্থা করে নেয়। কিন্তু মজার বিষয় হলো পুরো ছবিজুড়ে নয়নতারার পোশাক এবং মেকআপ ছিল খুব পরিপাটি। বোঝার উপায় ছিলো না, তারা এখন নিম্নবিত্ত ঘরের বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, নয়নতারার আহ্লাদিপনা দেখাতে গিয়ে সিনেমার শুরু থেকে পরিচালক ভাবনাকে এমন ধারার অভিনয় আর ডায়লগ প্রক্ষেপন করিয়েছেন- যেটা দেখলে যে কেউ ধরে নেবেন- বড়লোকের ঘরের মেন্টাল ডিজঅর্ডার একটি মেয়ে ভাবনা! টিভি নাটকে ভাবনার অভিনয় যারা দেখে আসছেন- তাদের কাছে বিষয়টি সত্যিই বেদনার। কারণ, ভাবনার স্বাভাবিক চরিত্রটি হয়ে গেল সাইকো চরিত্র! ফলে সিনেমার শেষে যখন পানির জন্য মার খেয়ে নয়নতারা সত্যি সত্যি সাইকো হয়ে যান, তখন আর তার অভিনয়টা টানেনি দর্শকদের। কারণ, দর্শক ধরে নিয়েছেন- ‘ব্যাঙের আবার সর্দি!’

৩. শুরু থেকেই গল্পটির সঙ্গে আটকাতে পারেনি দর্শক। ফিসফাস করে একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করছিলেন, নায়িকা কোথা থেকে ঢাকায় আসলো? এরপর নায়িকা নিম্নমানের হোটেলে উঠলো সেখানে কি একমাত্র সেই ছিল? আর তাকে ঘিরেই মুকুর এতো টেক-কেয়ার কেন? মুকুর সঙ্গে কেনই বা নয়নতারা প্রেমে জড়াবে? এমন কোনও তীব্র অনুভূতিই পরিচালক তৈরি করতে পারেননি। যেটা দেখে দর্শক মেনে নেবে বড়লোক বাপের কন্যা এই কারণেই গরিবের প্রেমে পড়েছেন।

ভয়ংকর সুন্দর-এ ভাবনা-পরমের গানের দৃশ্য ৪. পরিচালকের প্রথম ছবি ‘জিরো ডিগ্রি’। সেখানে একটি দৃশ্যে দেখানো হয় জয়া আহসান বাজারে প্রকাশ্যে জনতার সামনে তার পুরনো প্রেমিককে হত্যা করে। অথচ মানুষ কিছু বলেন না। কেউ এগিয়ে আসে না। এটা নিয়ে তখন খুব সমালোচনাও হয়েছিল অনিমেষ আইচের বিরুদ্ধে। পরিচালক বিষয়টা মাথায় রেখেছিলেন। তাই ২০১৫ সালে যখন বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় বাংলা একাডেমির বইমেলায় প্রকাশ্যে খুন হন, তখন অনিমেষ সেসব সমালোচনাকারীদের জবাব দিয়েছিলেন ফেসবুকের মাধ্যমে। যা হোক, এবারও ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিতে নয়নতারাকে যখন গুন্ডা চরিত্রে অভিনয় করা সমাপ্তি মাসুক ধর্ষণ করতে আসে তখন পেছন থেকে মুকু ফুলদানি দিয়ে তার মাথায় এলোপাথাড়ি আঘাত করেন। এতে দেখানো হয় তার মাথা থেতলে গেছে। এরপর তারা পালায়। পালিয়ে পুরাতন ঢাকাতেই ছিলেন তারা। অথচ গুন্ডাদের কেউ তাদের খুঁজতে আসলো না, পুলিশের কোনও ভূমিকাও দেখা গেলো না। এমনকি সেই চরিত্রটির আসলে কী হলো তাও দর্শক জানলো না। এক নিমিষে একটা চরিত্রকে হাওয়া করে দিলেন পরিচালক! এবারও হয়তো পরিচালকের তেমন একটি স্ট্যাটাসের অপেক্ষায় থাকতে হবে। যার সঙ্গে তিনি বাস্তবতাকে মেলাবেন এবং এই দৃশ্যকে ‘হালাল’ করবেন।

৫. ছবির সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে প্রশংসা শুরুতেই করা হয়েছে। সঙ্গে ড্রোনশটগুলোও সুন্দর ছিল। কিন্তু গল্পের মধ্যে হুট করেই ড্রোন শট কেন? দৃশ্যের সঙ্গে ওই শটের কোনও মাজেজা খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল। যদিও বুঝে নিতে হবে, বুড়িগঙ্গার পাড়ের শহরকে দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক।
৬. একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পানির বোতলকে যেভাবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, সেটা দৃষ্টিকটুই মনে হয়েছে। যদিও এই পানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ছবিটির কোনও আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে কি না সেটিও স্পষ্ট নয়।    

সবশেষে বলতে হয়, অনিমেষ আইচ এটাকে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বলেছেন। যেখানে সাইকোলজির কাজ ফুটিয়ে তুলতে তিনি ব্যর্থ। তিনি এটাকে ব্যবসায়ীক আঙ্গিক দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন। আর এজন্যই কমার্শিয়াল টাইপ গানও ঢুকিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কমার্শিয়াল আইডিয়া- ‘বড়লোক বাপের কন্যার সঙ্গে গরিব এতিম ছেলের প্রেম’। আর শেষে এসে আর্টিস্টিক ভঙ্গিও দিতে চেয়েছেন। বিষয়টা হলো, সব মিক্স করে আসলে শেষ পর্যন্ত ছবিটি কী হলো তা একদিন ইতিহাসই বলে দেবে।   

নির্মাতা অনিমেষ ও অভিনেত্রী ভাবনা মন্দের আলাপ কিংবা সমালোচনা করে লাভ নেই। চলচ্চিত্র পরিচালকরা সমালোচনা খুব একটা আমলে নেন না। তারা সুন্দর সুন্দর কথা পছন্দ করেন। আর এজন্যই হয়তো পরিচালক শুরুতেই অনুরোধ করেছেন- ছবিটি নিয়ে মন্দ কথা যেন দুই সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ না বলেন। অনেকেই বলেননি। পরিচালকের অনুরোধ রেখেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আটকাতে তো পারেননি পরিচালক। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা তো আছেই সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকও কমে গেছে। এর দায় পরিচালক হয়তো দর্শকদেরই দেবেন, যারা তার নির্মিত ছবির সমালোচনা করছেন।

তবে অনিমেষ আইচ একজন দক্ষ নির্মাতা। মাত্র দ্বিতীয় ছবি নির্মাণ করলেন। দর্শকের ভাবগতি বোঝার অভিজ্ঞতাও নিলেন। নিশ্চয়ই পরবর্তী ছবিতে দর্শকদের মন্দ কথা না বলার অনুরোধ নয় বরং মন্দ বলতে পারার সুযোগই যেন না থাকে সেই ব্যবস্থা করবেন। দিন শেষে ভয়ংকর সুন্দর সুন্দর ছবিই দর্শক দেখতে চায়। 

/এমএম/
লেখক: চলচ্চিত্র সমালোচক
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’