চিরকালের মতো অন্য পারে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের মহাতারকা রাজ্জাক। নায়করাজের এ বিদায় অন্যদের কাছে অভিভাবক হারানোর মতো। প্রিয় এ মানুষটির মৃত্যু খবরে অনেকেই ছুটে গেছেন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপালে। এর মধ্যে ছিলেন রাজ্জাকের তিন প্রজন্মের সহকর্মীরা।
ইউনাইটেড হাসপাতালে উপস্থিত অনেক চোখ ভিজে উঠেছিল কান্নায়। হাসাপাতালে উপস্থিত হয়েছিলেন আলমগীর, ফেরদৌস, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খোরশেদুল আলম খসরু, শাকিব খান, ফেরদৌস, ওমর সানী, মৌসুমী, সাইমনসহ অনেকে।
ভক্ত ও তাদের বিমর্ষ উপস্থিতিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে দাপুটে ও শক্তিশালী অভিনেতা রাজ্জাক সোমবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।
হাসপাতালে থাকা নায়করাজের পরিবারসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা এখন অপেক্ষা করছেন নায়করাজের প্রবাসী সন্তান বাপ্পির জন্য। এখনও তিনি দেশে ফেরার জন্য উড়োজাহাজের টিকিট পাননি। তার সঙ্গে কথা বলেই নির্ধারণ করা হবে কখন রাজ্জাকের মরদেহ বিএফডিসিতে নেওয়া এবং জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।
বাংলা চলচ্চিত্রকে অন্যন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এ মানুষটির জন্ম পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারতের) কলকাতার টালিগঞ্জে । নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম ছিল আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু। সরস্বতী পূজার সময় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তাঁর গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।
১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান নায়করাজ। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু তার ঢালিউডযাত্রা। প্রথম চলচ্চিত্রেই পরিচয় দেন নিজের মেধার। পরবর্তীকালে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরও বেশ ক'টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেন। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। তিনি প্রায় তিনশ বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা। তিনি বেশ ক’বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন।