X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিমানে বোম্বে চলে যেতে চেয়েছিলেন নায়করাজ!

বিনোদন রিপোর্ট
২২ আগস্ট ২০১৭, ১৯:০৯আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৪০

অভিমানে বোম্বে চলে যেতে চেয়েছিলেন নায়করাজ! খুব অভিমান ছিল তার, জেদও কম নয়। তবে সেই অভিমান আর জেদ বুকে পুষেই তিনি হয়েছিলেন বাংলার নায়করাজ।

বাংলাদেশে আসার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কলকাতা থেকে সোজা পাড়ি জমাবেন বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই)। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত ঘটেনি ওস্তাদ পীযূষ বোসের কারণে।
রাজ্জাক তার জীবদ্দশায় বেশ কয়েকবার এমন কথা উল্লেখ করেছিলেন গণমাধ্যমের কাছে।
সে ঘটনা নিয়ে রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর ঠিক করলাম বম্বে চলে যাব। কিন্তু ওস্তাদ পীযূষ বোস বললেন, ক্যারিয়ার গড়তে হলে বম্বে নয় পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) চলে যাও।’
কলকাতায় রাজ্জাকের পারিবারের ব্যবসা ছিল, কারখানা ছিল। পরিবার হিসেবে ধনীই ছিলেন তারা। কিন্তু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সব ওলট-পালট। তখনই রাজ্জাক ঠিক করেন, একেবারে মাইগ্রেশন করেই ঢাকায় চলে আসবেন। এরপর কিছু টাকা পকেটে নিয়ে সন্তান বাপ্পারাজ ও স্ত্রী লক্ষ্মীর হাত ধরে ঢাকায় চলে আসেন।
বাপ্পার বয়স  তখন মাত্র আট মাস। কমলাপুরে ঠিকানা হয় রাজ্জাক পরিবারের। ছোট্ট পরিবার, ছোট্ট একটা বাসা। হাতের কিছু টাকাই সম্বল। রোজগার নেই। দ্রুত টাকা ফুরিয়ে গেলো। জীবনের চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হলেন নায়ক।
নিজের পরিবারের অবস্থা যে তখন খুব একটা ভালো ছিল না- তার আরও একটি মন্তব্যে তা ফুটে উঠেছিল, ‌‘আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। এই শহরে আমি রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনওদিন আসেনি।’
এরপর যে কাজের প্রস্তাব এসেছে, ছুটে গিয়েছেন রাজ্জাক। টেলিভিশনের সংবাদপাঠক হিসেবে অডিশন দিলেন। পাসও করলেন।
রাজ ও লক্ষ্মী কিন্তু বাধ সাধলেন জামান আলী খান। বললেন, ‘তুমি অভিনেতা মানুষ। তুমি কেন খবর পড়বে?’
তিনিই ধারাবাহিক নাটক ‘ঘরোয়া’-তে কাজ করার সুযোগ করে দিলেন।
কিন্তু সংসারের অভাব ততদিনে মাথা চাঁড়া দিয়েছে। রাজ্জাক ছুটে যান কাজী জহির, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্তদের কাছে।
নিজে বম্বের শশধর মুখার্জির ফিল্মালয় থেকে নয় মাসের কোর্সও করেছেন, কলকাতায় কাজের অভিজ্ঞতাও আছে বলে জানান। সবাই শোনেন। কিন্তু কাজ দিতে পারেন না। হতাশ হননি। ‘কার বউ’ ও ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে ছোট কাজও পান। কিন্তু তাতে চলা মুশকিল।
এরমধ্যেই জহির রায়হানের কাছে যান রাজ্জাক। ব্যস, রাজ্জাকের দিন ঘুরে যায়। আর বৃহৎভাবে বললে বলা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরে যায়।
৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক রাজ্জাকের প্রথম ছায়াছবি ‘বেহুলা’। তার পরের অংশটি ইতিহাস, বাংলা চলচ্চিত্রের ডাক নাম হয়ে ওঠে নায়করাজ।
অভিমানে বোম্বে চলে যেতে চেয়েছিলেন নায়করাজ! প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নায়করাজ রাজ্জাক।
সারাজীবন চলচ্চিত্র নিয়েই থেকেছেন রাজ্জাক। অভিনয়ই নয়, এফডিসি তাকে পেয়েছে পরিচালক-প্রযোজক হিসেবেও। ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বদনাম’, ‘অভিযান’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘প্রফেসর’, ‘যোগাযোগ’, ‘সৎ ভাই’ পরিচালনা করে নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। তার প্রযোজনা সংস্থা রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মাণ করেছিলেন।
রূপালি পর্দায় রাজ্জাককে ‘বাবা কেন চাকর’-এর মতো অনেক ছবিতে কাঁদতে দেখা গেছে। চরিত্রের প্রয়োজনে তাঁর সেই কান্না কাঁদিয়েছে দর্শকদেরও। কান্না কিংবা কমেডি, প্রেম কিংবা বলিষ্ঠ পুরুষের চরিত্রে এমন মানুষের অভিনয় আর দেখা যাবে না বলে এখন সতীর্থরা কাঁদছেন।
শুধু সতীর্থরাই নন, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই শোক। রাজ্জাক ভক্তদের চোখের কোণে জল জমেছে। ২১ আগস্ট ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এক অধ্যায়ের সমাপ্তি।

/এম/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
ক্যানসারে আক্রান্ত অভিনেতা রুমি, ভর্তি হাসপাতালে
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)