X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমি চাই, আমার কাজগুলো বেঁচে থাকুক: তাহসান

জনি হক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:১৪আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৫

তাহসান খান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) গানে ১৫ বছর পেরিয়ে এসেছেন, এখনও গানেই অন্তঃপ্রাণ তাহসান খান। তার চাওয়া, নিজের গানগুলো বেঁচে থাকুক শ্রোতাদের হৃদয়ের গহীনে। হিট হলো কি হলো না তা নিয়ে ভাবেন না তিনি। তাই সিঙ্গেলসের জোয়ারে ভক্ত ও সংগীতপিপাসুদের জন্য বের করেছেন সাত গান নিয়ে সাজানো অ্যালবাম ‘অভিমান আমার’। এটা তার সাত নম্বর একক অ্যালবাম।

‘অভিমান আমার, ‘কষ্ট’, ‘ক্ষীয় অবকাশ’, ‘বুড়ো শালিক’, ‘বৃষ্টি এলে’, ‘প্রার্থনার উপহার’ ও ‘হৃদয়ে আক্রমণ’— তাহসানের নতুন অ্যালবামে আছে এই সাতটি গান। সিডি চয়েস ও জিপি মিউজিকের যৌথ প্রযোজনায় বেরিয়েছে এটি। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গ্রামীণফোন অফিসে হয়ে গেলো এর প্রকাশনা। এখানে ‘অভিমান আমার’ গানের ভিডিও দেখিয়ে অ্যালবাম ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তাহসান।

বাংলা ট্রিবিউন: গান হিট হওয়া নাকি টিকে থাকা, কোনটা উপভোগ করেন?
তাহসান: ১০-১৫ বছর আগে অ্যালবাম বের হলে আমাকে প্রশ্ন করা হতো, ‘ভাই কত লাখ সিডি বিক্রি হয়েছে?’ মনে আছে, আমার প্রথম অ্যালবাম ‘কথোপকথন’ শহরাঞ্চলে বেশ হিট হয়। এর বেশ কয়েক লাখ সিডি বিক্রি হয়েছিল। খুব ভালো লাগতো ব্যাপারটা। কিন্তু একইসঙ্গে মনে হতো— কত শিল্পীর গানই তো হিট হয়, কিন্তু ৫-১০ বছর পর তাদের নামগুলো শ্রোতারা ভুলে যান। সবসময় মাথার ভেতর এ ব্যাপারটা কাজ করতো— আমি চাই, আমার কাজগুলো বেঁচে থাকুক। মানুষ আমার অনেক প্রশংসা করলে তা মাথায় নিতাম না। সবারই তো ভক্ত থাকে, আমারও ভক্ত ছিল, আছে। ভক্তরা এখনও আমার গান শোনেন, এটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। তবে তারা প্রশংসা করলে আমি মাথায় নিই না। জানি আমার গানগুলো অর্থহীন যদি সেগুলো কেবল আজকেই শোনা যায়। ১০ বছর পর যখন আমার গান কেউ কাভার করবে তখন আসলে বুঝবো গানটা বেঁচে আছে কি নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘অভিমান আমার’ অ্যালবামের কোন গানটার কথা আলাদা করে বলতে চান। কোনটা হিট হবে বলে মনে হয়?
তাহসান: হিটের ব্যাপারটা জানি না। আমি বিশ্বাস করি, এ সাতটা গানের মধ্যে দুটি বা তিনটি গান যদি থাকে, যেগুলো মানুষের হৃদয়ের এমন একটা জায়গায় পৌঁছাবে, যেটা মানুষ তিন দিন শুনে ভুলে যাবে না, এক মাস বা এক বছর পর আবার শুনতে চাইবে। ‘দূরে তুমি’, ‘আলো’, ‘প্রেমাতাল বিন্দু’-এর মতো ১৫ বছর আগে প্রকাশিত ১০-১২টা গানের কথা বলতে পারি যেগুলো আমার মনে হয় কয়েকদিন আগেই বুঝি মুক্তি পেলো! ‘অভিমান আমার’ থেকেও যদি দুটো-তিনটা গান বেরিয়ে আসে, যেগুলো মানুষের হৃদয়ের একটা জায়গায় পৌঁছাবে, বেঁচে থাকবে, তাহলেই এ অ্যালবামটা সার্থক।

তাহসান খান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বাংলা ট্রিবিউন: গানগুলোর প্রচারণা করছেন কীভাবে?
তাহসান: আমার গান তো আমার কারণে বেঁচে থাকবে না, বেঁচে থাকবে আমার ভক্তদের কারণে। যারা হয়তো আমার গান দিয়েই গিটার বাজানো শিখছে, কর্ড শিখছে। নতুন শিল্পীরা আমার গানগুলো কাভার করে প্রায়ই ইনবক্সে পাঠায়। তাই ভেবেছি ‘অভিমান আমার’-এর গানগুলো নিয়ে কাভার কনটেস্ট করবো। ঘরে বসেই আমার গানগুলো গিটার বাজিয়ে গেয়ে পাঠাতে হবে ভক্তদের। যারা বিজয়ী হবে তাদের নিয়েই এক মাস পর সেলিব্রেশন কনসার্ট। তারা আমার সঙ্গে গাইবে। আগামী সপ্তাহে আমেরিকায় যাচ্ছি। তার আগে কাভারগুলো ফেসবুক পেজে শেয়ার দেবো। ইতোমধ্যে ফেসবুকে পাঁচটি ভিডিও ছেড়েছি প্রচারণার অংশ হিসেবে। এর মধ্যে চারটিতে আছে আমার মিউজিক্যাল জার্নি, অনুপ্রেরণা, খ্যাতির বিড়ম্বনা এবং এ অ্যালবামের গানগুলোর কথা।

বাংলা ট্রিবিউন: সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
তাহসান: জিপি মিউজিকে ভালো সাড়া আসছে। বিদেশি শ্রোতারাও গানগুলো শুনতে চান। আমার ফেসবুক ফ্যানপেজের অ্যানালিটিকস অনুযায়ী ৬৭ লাখের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ মানুষই ভারতের। ‘অভিমান আমার’-এর গান শোনার জন্য কলকাতা থেকে অনেকে মেসেজ পাঠিয়েছেন ইনবক্সে। তাদেরকে উপায় না থাকায় বলতে হয়েছে, দুই মাস পর ইউটিউবে আসবে এ অ্যালবাম। সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে। এ অ্যালবামের সব গানের কথা লিখেছি আমি। অবশ্য একটি গানের যৌথ গীতিকার ফাজবীর তাজ তন্ময়। তিনটি গানের সুর ও সংগীত আমার। দুটি করে গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছে সাজিদ সরকার ও নাহিদ নোমান অরূপ।

তাহসান খান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বাংলা ট্রিবিউন: এখন তো বেশিরভাগ গান প্রকাশ হয় ইউটিউবে। ভিউ দেখেই এখন বিচার করা হয় গান হিট হলো কি হলো না। তাছাড়া মোবাইল অপারেটরগুলোর মাধ্যমে গান শোনা তো অনেক ঝক্কির! অ্যাপ ডাউনলোড, এসএমএস পাঠানো, রেজিস্ট্রেশন ও সাবস্ক্রাইব করা কতো কী!
তাহসান: আমার কাজ হচ্ছে গান লেখা, সুর করা, গান গাওয়া। এরপর মানুষের কাছে তা কীভাবে পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করে পৃষ্ঠপোষকতার ওপর। গ্রামীণফোন তথা জিপি মিউজিকের সুবাদে এ অ্যালবামটি বের করা সহজ হয়েছে। গ্রামীণফোনের এমন পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া শিল্প বেঁচে থাকে না। আমাদের দেশে যদি স্বকীয়তা না বেঁচে থাকে, আমরা যদি কথায় কথায় বিদেশি শিল্পীদের ওপর নির্ভর করি, তাহলে আমরা সম্মিলিতভাবে সবাই হেরে যাচ্ছি। হোক তা আমাদের গানে, টেলিভিশনে কিংবা চলচ্চিত্র শিল্পে। এ ব্যর্থতা কিন্তু শুধু আমাদের না, আপনাদের না, পৃষ্ঠপোষক, মিডিয়া কর্মী, শিল্পী আমাদের সবার। তাই সম্মিলিতভাবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, স্বদেশি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। এজন্য গুরুজন, আমাদের মতো মধ্যবয়সী এবং নতুন সবাইকেই উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রবীণ শিল্পী ও তাদের গানের প্রচার হলে আমাদের শিল্পটা বেঁচে থাকবে। 

বাংলা ট্রিবিউন: বুঝলাম। কিন্তু ইউটিউব থেকে বিনা মূল্যে গান শোনা ও ডাউনলোড করা যাচ্ছে, তাহলে শ্রোতারা কেন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে মোবাইল ফোনে সাবস্ক্রাইব করতে যাবে? 

তাহসান: দেখুন সারা পৃথিবীতে গান হচ্ছে। সবখানেই বিনা মূল্যে তা পাওয়া যাচ্ছে। তবুও আইটিউন্স, গুগল প্লে, অ্যামাজন থেকে মানুষ গান কেনে। আমরা যারা পরিচিত মুখ আছি তারা যদি মাধ্যমগুলোর প্রচার না করি তাহলে তো মানুষের কাছে তা পৌঁছাবে না। এই যেমন ধরুন, আমাদের শ্রদ্ধেয় জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা এখন গান করতে পারছেন না রয়্যালটির অভাবে। অডিও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন— আমরা যে রয়্যালটি দেবো গান শোনানোর মাধ্যমটা কী? আমাদের গান শোনার মাধ্যমটাই তো নেই। কেউ সিডি কিনছে না। ইউটিউবে আপলোড এবং বুস্ট করলেও সেভাবে আয় হচ্ছে না। সুতরাং আমাদের সবার জন্য মাধ্যমটা তৈরি করতে হবে। যে মাধ্যমে শ্রোতা এবং শিল্পী এক জায়গায় আসতে পারবে। জিপি মিউজিকের মতো বায়োস্কোপ লাইভ টিভিও একটা নতুন মাধ্যম, সেজন্যই ‘অভিমান আমার’ ভিডিওটা এখানে দিয়েছি। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো একটা সময় সংবাদ সম্মেলন করতেনই না... 

তাহসান: তা ঠিক। গানে ক্যারিয়ার শুরুর সময় অনেক ইন্টারভিউ দিতাম, কিন্তু শেষ পাঁচ-ছয় বছরে সেটি খুব একটা ভালো লাগতো না। এত টিভি চ্যানেল আর প্রেস আউটলেটস যে একজনকে ইন্টারভিউ দিলে সবাইকে দিতে হয়, তা না হলে অন্যরা রাগ করে। এজন্য ইন্টারভিউ দেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার সাতটা একক অ্যালবামের মধ্যে হয়তো ঘটা করে দুটোর সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আমার মনে হতো, যে কাজটা ভালো সেটি ভক্তরাই ছড়িয়ে দেবে। সেটা হয়েছেও। কিন্তু এখন এত বেশি গান আর এত অডিও ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট যে প্রচারটাও একটু প্রয়োজন। যেমন আপনারা জানেন, এবারের ঈদেও অসংখ্য গান বেরিয়েছে। তাই বলে আমি বিশ্বাস করি না, সারাদিন নিজের ঢোল পেটাবো! আমার অ্যালবাম বেরিয়েছে চার-পাঁচ দিন হলো, কিন্তু ফেসবুকে মাত্র দু’বার পোস্ট দিয়েছি। সত্যি বলতে এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত যা দেখছি এর মধ্যে গানের প্রচারণা করার ব্যাপারটা ভেতর থেকে আসে না। এটা কিন্তু আমাদের নিজেদের ঘরের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। মাথার ভেতর এ বিষয়টি যেহেতু আছে, এমন সময়ে সারাদিন যদি গানের কথা বলি ভালো লাগবে না। 

বাংলা ট্রিবিউন: এখন তো সিঙ্গেলসের ট্রেন্ড চলছে। অ্যালবাম বের করার চল ধীরে ধীরে উঠেই যাচ্ছে। 

তাহসান: বাংলাদেশে যদি অ্যালবাম না হয় তাহলে তা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। অ্যালবাম আর সিঙ্গেলসের মধ্যে একটা তফাত আছে। একটা অ্যালবাম করার সময় শিল্পী কিন্তু নানান রঙে নিজের ভাবনা সাজাতে পারেন। কিন্তু সিঙ্গেল হলে নিরীক্ষার সুযোগ থাকে না। তখন তার চিন্তা থাকে কোন ধরনের গান করলে হিট হবে। তিনি তখন ভাবেন আমাকে হিট গান করতে হবে তা না হলে মানুষ বলবে ফ্লপ হয়ে গেছি! এই চিন্তা থেকে যখন একজন শিল্পী গান লেখেন, সুর করেন কিংবা গেয়ে থাকেন, তখন গানটা বেঁচে থাকে না। কারণ গানে স্বকীয়তা থাকে না তো! প্রতিটা গান হিট বানানোর জন্য করা হচ্ছে বলে সবার গান একরকম হয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু একটা সিরিয়াস প্রবলেম। একসময় মানুষ কিন্তু আর গান শুনবে না।
শুধু সিঙ্গেলস যদি আমরা অডিও শিল্পে ট্রেন্ড করে ফেলি, তা নেতিবাচক হবে। অ্যালবাম হলে শিল্পী বেশকিছু গান তৈরি করতে পারেন। তখন তার মন থেকে সব গান আসে, এর মধ্যে একটা-দুটো হয়তো হিট হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশে গান ভালোর দিকে যাচ্ছে। শ্রোতারা কিন্তু বাংলা গান শুনছে। তাই অ্যালবাম থাকতে হবে। অ্যালবাম করতে হয়তো সব গানের মিউজিক ভিডিও হয় না, কারণ সব গান থেকে আয় আসে না। কিন্তু শিল্পীরা যদি অ্যালবাম না করেন, আমরা যাদের গান শুনে বেড়ে উঠেছি তাদের যদি অ্যালবাম না হয় তাহলে নতুনরাও কিন্তু অ্যালবাম করতে আগ্রহী হবে না। অ্যালবাম না করলে শিল্পের বিকাশ হবে না। ব্যবসা তো থাকবে, দিনের শেষে শিল্পটাকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। 

বাংলা ট্রিবিউন: এবারের ঈদে মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। কারণ কী? 

তাহসান: এ প্রশ্নটা আরও অনেকে করেছেন। সত্যি বলতে নিজেকে সিঙ্গার-সংরাইটার হিসেবে দেখতে চাই। পৃথিবী থেকে আমরা সবাই চলে যাবো। কিন্তু কী হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই তা নিয়ে ভাবা দরকার। আমি আসলে খুব বিশ্বাস করি, আমার অনেক ভক্ত আছে বলেই টিভি চ্যানেল কিংবা নির্মাতারা অভিনয়ের অনুরোধ জানান। কিন্তু আমি মনে করি, সেই যোগ্যতাটা আমার নেই। মানুষ যদি অভিনেতা হিসেবে আমাকে মনে রাখে তা ঠিক হবে না।
ছয় বছর বয়স থেকে আমি গান শিখেছি। মা মঞ্চে পাঠাতেন। সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে গাইতাম। বেড়ে ওঠার পর পিয়ানোর সঙ্গে হাজার হাজার ঘণ্টা কাটিয়েছি। আমি যেখানে এত প্রেম দিয়েছি সেখানেই আমার পরিচয় হোক। আমি ২০, ৩০ বা ১০ বছরও যদি বেঁচে থাকি এবং গানের সঙ্গে থাকি, সেটাই হবে আমার জীবনের অর্জন। আমি চাই, মানুষ আমাকে সিঙ্গার-সংরাইটার হিসেবে মনে রাখুক। সবাই যেন বলে— তাহসান গান লিখেছে, সুর করেছে ও গেয়েছে এবং তার গানগুলো বেঁচে আছে।

তাহসান খান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বাংলা ট্রিবিউন: ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
তাহসান: ছোটবেলা থেকেই নিজেকে এই প্রশ্নটা করতাম— ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই। ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময় প্রথম অ্যালবাম বের করার প্রস্তাব এলো জি-সিরিজ থেকে। সেটা নিতে গেলে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই। আমি কি অনুতাপ করবো ভেবে যে, আমার গান করার সুযোগ ছিল। কিন্তু করপোরেট ক্যারিয়ারের কারণে করতে পারিনি। আর চাকরি ছেড়ে গান করে যদি ফ্লপও হই, অন্তত মনকে স্বস্তি দিতে পারবো এই বলে যে— স্বপ্নপূরণের চেষ্টা তো করেছিলাম। এখনও এই কথাটা জিজ্ঞেস করি, ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই।

আমার খুব ইচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছানো। বাংলাদেশে আমার যা অর্জন করার ছিল গত ১৫ বছরে শ্রোতারা আমাকে তা দিয়েছেন। আমি চিন্তাও করিনি, স্টেডিয়ামে গান গাওয়ার সময় আমার গাওয়া লাগবে না, হাজার হাজার মানুষের মুখস্থ থাকবে আমার গান। এটা কল্পনাও করিনি, কিন্তু সেটা পেয়েছি। পাহাড়ের কোনও একটা মেয়ে আমার গান কাভার করবে তা প্রত্যাশাও করিনি। আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন সবাই সেটার প্রতিদান দেওয়ার সময় এখন। আমি যা পাওয়ার পেয়েছি, এবার প্রতিদান দিতে চাই আগামী ১০, ১৫ বা ২০ বছর। আমি বাংলাদেশি হয়ে বিশ্বের মানচিত্রে পদার্পণ করতে চাই। হয়তো পরিকল্পনা করে নয়, ধীরে ধীরে এগোবো। দেশের বাইরে সংগীত সফরে বেশি যাবো। বাংলাদের গানের প্রসারে অগ্রগামী হবো।

তাহসান খান (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বাংলা ট্রিবিউন: সারা পৃথিবীতে তারকারা ভালো কাজে সম্পৃক্ত হন। আমাদের দেশে সেই সংখ্যা হাতেগোনা।
তাহসান: সত্যি বলতে আমাদের দেশে তারকারা যদি কোনও ভালো কাজে জড়ান সেটার একটা কারণ খোঁজা হয়। কোনোভাবে সেটাকে খারাপ বলা যায় কিনা। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, তারকারা বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে যাওয়ার পর একটা গোষ্ঠী খারাপ বলতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তারা কিন্তু পারেও! আপনি যাই করবেন না কেন সেটাকে খারাপ বানাতেই হবে। ত্রাণ দিতে গেছে, কেন গেছে, তা নিয়েও অনেক সমালোচনা। আমিও যখন অন্যের জন্য কিছু করি ভয়ে ভয়ে থাকি মানুষকে দেখানো যাবে না, ভাবি কী না কী হয়! এ অ্যালবামের প্রচারণায় সামাজিকভাবে ইতিবাচক হয় এমন একটা কাজ করার ইচ্ছা আছে। তারকারা যখন ভালো কাজ করে কোনও কারণ ছাড়াই করতে পারে। তাই মেক অ্যা উইশ ক্যাম্পেইন। আমার আহ্বান, সবাই যেন ইতিবাচক থাকি। অন্যে ত্রাণ দিতে কেন গেলো তা নিয়ে সমালোচনা না করে নিজ নিজ জায়গা থেকে ভালো কাজ করা দরকার সবার। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি গান করি, শিল্পী হিসেবে এটাই আমার দায়বদ্ধতা।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!