X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

সালমান শাহ্: আজও জানান দিচ্ছেন নিজের অবস্থান!

জনি হক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:০৪আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:১৬

সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) নব্বই দশকে স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা যে নায়কের ভিউকার্ড কিনতো, তিনি অমর নায়ক সালমান শাহ্। এখনও অনেকে এসব ভিউকার্ডের দিকে তাকিয়ে মনের অজান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বেঁচে থাকলে আজ ১৯ সেপ্টেম্বর ৪৬তম জন্মদিনের কেক কাটতেন তিনি। ১৯৭১ সালের এই দিনে জন্মেছিলেন তিনি।

২১ বছর আগে সালমানের আকস্মিক রহস্যময় মৃত্যুর খবর দর্শকদের এতই বাকরুদ্ধ করেছিল যে, সেই শোক কাটেনি এখনও। তারা ভুলতে পারেননি স্বপ্নের নায়ককে। আজও সবার ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’য় তিনি, তাকেই যেন ‘প্রিয়জন’ মনে করেন তারা। তিনি ছিলেন সবার ‘আশা ভালোবাসা’। তাদের মুখে তাই বারবার শোনা যায়— ‘তোমাকে চাই’! প্রস্থানের ২১ বছর পেরিয়ে তিনি আজও উন্মাদনার আরেক নাম। তাকে দর্শকরা রাখেন ‘আনন্দ অশ্রু’তে, ‘অন্তরে অন্তরে’।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে দপ করেই নিভেছে সালমানের জীবনপ্রদীপ। তার আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ। সেই সময় শোক সইতে না পেরে কয়েকজন ভক্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন খবর ছাপা হয় পত্রিকায়। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত।

সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) এত বছর পরেও সালমানের জন্য উন্মাদনাও অনন্য নজির। এর কারণ তার শূন্যতা পূরণ হয়নি আজও। তিনি ছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের সম্পদ। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে এমন একটি স্থান গড়ে নিয়েছিলেন যে তাঁর অভাব এখনও অনুভব করেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজকরা।
সালমানকে ঘিরে আলোচনার জোয়ার বইতে থাকার ব্যাপারটাও লক্ষণীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারে তাঁকে নিয়ে আলোচনায় মুখর থাকেন ভক্তরা। ফেসবুকে তাঁর নামে ভক্তদের অসংখ্য পেজ ও গ্রুপ আছে। সেখানে নিয়মিত এই রাজপুত্রের ছবি ও দুর্লভ ভিউকার্ড আপলোড করেন তারা। অনেকে নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল ও কাভারের জন্য বেছে নেন তাঁর ছবি। দর্শকদের এমন নির্মোহ ভালোবাসায় সিক্ত হতে পেরেছেন খুব কম তারকাই।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে পালাবদলের সময় অভিনয়ে এসেছিলেন সালমান। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে সোরগোল ফেলে দেন তিনি। এর পোস্টার নিয়ে তখন পত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়েছিল। ‘ইমন নামের একটি বালক’ শিরোনামে বেশকিছু খবরের পেপারকাটিং এখনও দেখা যায় ফেসবুকে।
১৯৭০-৮০’র দশকের নায়কদের পরে চলচ্চিত্রে সালমানের আবির্ভাব তৈরি করেছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। পোশাক-পরিচ্ছদ, সংলাপ বলার ধরন, চলন-বলন, আচার-আচরণ ও অভিনয় দক্ষতার মিশেলে দর্শকের মন জয় করতে সময় লাগেনি তার। বরং বলা ভালো— এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। মাত্র চার বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এগুলোর বেশিরভাগই ছিল আলোচিত ও ব্যবসাসফল। টানা হিট ছবি উপহার দিয়ে অল্প সময়ে তিনি পরিণত হন স্বপ্নের নায়কে।
সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) সালমান ছিলেন আধুনিক তরুণের উদাহরণ। তার রুচি, অভিব্যক্তি, বাচনভঙ্গি- সবই ছিলো যুগোপযোগী। এর মধ্যে স্টাইল ছিল সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। তিনি যা যা করেছিলেন সবই হয়ে উঠেছিল ফ্যাশন। যেমন— ছোট চিপের ব্যাকব্রাশ করা চুল, কানে দুল পরা, নানান রকম টুপি, ক্যাপ, গোল ফ্রেমের সানগ্লাস, মাথার স্কার্ফ, গলার চেইন, হাঁটুতে রুমাল বাধা, মাথার চুল বড় করে জুটি বাঁধা, টি-শার্টের হাতা ভাঁজ করে রাখা। নিজস্ব স্টাইলের সুবাদে অল্প সময়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরাও তার সেই সময়ের স্টাইল ও সাবলীল অভিনয় দেখে ভক্ত হয়েছেন।
সিলেট শহরের দাড়িয়া পাড়াস্থ আবেহায়াত ভবনে (অকাল মৃত্যুর পর এর নাম রাখা হয় সালমান শাহ্ ভবন) জন্মেছিলেন সালমান। পরিবার তার নাম রেখেছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। রূপালি পর্দায় নাম লিখিয়ে তিনি হয়ে যান ‘সালমান শাহ্’। ক্ষণজন্মা এই তারকার জীবনটাই একটা চলচ্চিত্রের মতো। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, অভিনয়জীবন থেকে আকস্মিক মৃত্যু— সবই যেন কোনও ছবির চিত্রনাট্য। অল্প সময়েই পরিচালকদের নজরে পড়েছিলেন তিনি। শুরুতে ডাক পান ‘পাথর সময়’ ধারাবাহিক নাটকে। এটাই তাঁর প্রথম নাটক। এরপর একে একে ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দেয়াল’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’, ‘সৈকতে সারস’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান তিনি।
সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) ‘তারকা’খ্যাতি পাওয়ার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন সালমান। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেটকিপার ও অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরা হকের সঙ্গে ঘর বাঁধেন তিনি। স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ। মাঝে মধ্যে গানও করতেন পরিবারের বৈঠকি আসরে।
সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) প্রতি বছর সালমানের মৃত্যুদিনে ভক্তরা তাকে স্মরণ করেন ভালোবাসার সঙ্গে। অনেক ভক্তের কাছে তাঁর মৃত্যু এখনও রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে নিজের বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁর লাশ। তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সিলেটেরই পুণ্যভূমি হযরত শাহজালালের মাজারের পাশে। এই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় ভক্তদের মনে এখনও ঘুরে বেড়ায় নানা প্রশ্ন। তারা জানে না কোনোদিন এসবের উত্তর পাওয়া যাবে কিনা। ‘বিক্ষোভ’ করে তারা বুকে আশা বেঁধে আছেন— ‘বিচার হবে’! তাদের বোধ একটাই— ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, স্বপ্নের নায়কের কোনও মৃত্যু নেই!
সালমান শাহ্ (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সালমান আত্মহত্যাই করেছেন উল্লেখ থাকলেও এ নিয়ে রহস্য কাটেনি এত বছর পরেও। তাই তাঁর চলে যাওয়া হত্যা না আত্মহত্যা তা আজও রহস্যময় রয়ে গেলো! ভক্তরা আজও প্রিয় নায়কের উদ্দেশে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখে যায়— ভালো আছি, ভালো থেকো সালমান শাহ! 

* দেখুন সালমান শাহ্’র প্রথম সাক্ষাৎকার:





/জেএইচ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
শুটিংয়ের অন্তরালে...
শুটিংয়ের অন্তরালে...
গানের শহরে খালিদ খালিদ কান্না...
গানের শহরে খালিদ খালিদ কান্না...
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু